Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

আইনের ফাঁক গলে আঠার নেশা, মৃত্যু

আইনে নির্দেশ নেই। তাই আঠা জাতীয় পদার্থ থেকে নেশা করলেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না পুলিশ-প্রশাসন। আর সেই কারণেই এই ধরনের নেশার দ্রব্য খোলা বাজারে সহজেই মেলে। এই নেশায় আসক্তদেরও নেশা করার আঠা পেতে কোনও অসুবিধা হয় না। লালবাজারের এক পুলিশকর্তার আক্ষেপ, “আইনসম্মত ভাবে এই সব আঠা বাজারে বিক্রি হয়। ফলে আমাদের কিছু করার থাকে না।”

দেবাশিস দাস
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩০
Share: Save:

আইনে নির্দেশ নেই। তাই আঠা জাতীয় পদার্থ থেকে নেশা করলেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না পুলিশ-প্রশাসন। আর সেই কারণেই এই ধরনের নেশার দ্রব্য খোলা বাজারে সহজেই মেলে। এই নেশায় আসক্তদেরও নেশা করার আঠা পেতে কোনও অসুবিধা হয় না। লালবাজারের এক পুলিশকর্তার আক্ষেপ, “আইনসম্মত ভাবে এই সব আঠা বাজারে বিক্রি হয়। ফলে আমাদের কিছু করার থাকে না।”

আর এরই মর্মান্তিক পরিণতি ফুলবাগানের যুবক পিলু দাসের মৃত্যুর ঘটনা। বৃহস্পতিবার সকালে, উমেশচন্দ্র ব্যানার্জি রোড থেকে বছর আঠেরোর পিলু দাসের গলাকাটা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তকারীরা পিলুর প্যান্টের পকেট থেকে থেকে নেশা করা যায় এমন এক ধরনের আঠার টিউব এবং প্রসাধনী দ্রব্য উদ্ধার করেছেন। পিলুর পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, তিনি নিয়মিত আঠা দিয়ে নেশা করতেন। পিলুর বাবা পরমেশ্বর দাস বলেন, “আমার ছেলে এক ধরনের আঠা দিয়ে নেশা করত। বহু বার নিষেধ করেছি, শোনেনি।” পুলিশের অনুমান, নেশার আসরে বচসার জেরেই খুন হন পিলু।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পিলুর মতো নিম্নবিত্ত যুবকদের কাছে ‘আঠার নেশা’ খুব জনপ্রিয়। কিছু উচ্চবিত্ত শিক্ষিত পরিবারের যুবকদের মধ্যেও এই নেশার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে বলে জানান তদন্তকারীরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন প্রধান সবুজ ভাওয়াল বলেন, “এই জাতীয় আঠায় এক ধরনের জৈব দ্রাবক থাকে। যা দ্রুত উড়ে যায় না। দ্রাবকগুলোর গন্ধ থেকে আসক্তি তৈরি হয়। শুধু আঠা নয়, বহু কাশির ওষুধও এই কারণেই নেশার জন্য ব্যবহৃত হয়।”

এই জাতীয় নেশার দ্রব্যকে আইন করে আটকানোর কোনও উপায় নেই বলে জানান আইনজীবী অসীমেশ গোস্বামীও। তিনি বলেন, “আমাদের দেশের মাদক নিরোধক আইনে যে সব দ্রব্যের উল্লেখ রয়েছে তার মধ্যে আঠা বা কাশির ওষুধের উল্লেখ নেই। তাই এর বিক্রি পুলিশ বন্ধ করতে পারে না।”

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু এ রাজ্যে নয় দেশের অন্য প্রদেশ-সহ দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশেই যুব-সমাজের একাংশের মধ্যে আঠা এবং ওষুধের নেশা জনপ্রিয়। সাধারণত আঠার গন্ধ শুঁকে বা পলিথিনের প্যাকেটে গরম জলের মধ্যে সেই আঠা মিশিয়ে তার ধোঁয়া নাক, মুখ দিয়ে নেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে দেহের এবং মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলি দুর্বল হয়ে যায় এবং গা-হাত-পা ঝিমঝিম করে। চিকিৎসক অজয়কুমার গুপ্ত বলেন, ‘‘এই জাতীয় নেশায় প্রথম ক্ষতি হয় লিভার এবং কিডনির। এর পরে হার্টের অসুখ দেখা দেয়। এই নেশার ফলে ধীরে ধীরে দেহের সতেজ কোষগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং শেষে আসক্ত ব্যক্তির বিষক্রিয়ায় মৃত্যুও হতে পারে।”

তবে এই নেশায় জড়ানোর আগে সতর্ক হলে সমস্যাটা এড়ানো খুব সহজ বলেই মত মনোবিদ্ নীলাঞ্জনা সান্যালের। তিনি বলেন, “এক বার আসক্ত হয়ে পড়লে নিয়মিত মানসিক চিকিৎসা এবং ওষুধ প্রয়োগ ছাড়া মুক্তির অন্য কোনও উপায় নেই।”

অন্য বিষয়গুলি:

debashis das death drug addict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE