অজয় মল্লিক।
দুই বাড়িতে বিয়ের তোড়জোড় চলছিল পুরোদমে। বোন চেয়েছিলেন দাদার সঙ্গে একই দিনে বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন! কিন্তু, শুক্রবার দুপুরের মতো এমনই এক ঝড়-বৃষ্টির দিনে দুই পরিবারের সব স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল বছরখানেক আগে। ওই দিন ময়দানে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয় তিলজলা রোডের বাসিন্দা অজয় মল্লিকের (২৫)। তাই দাদার সঙ্গে একই দিনে আর বিয়ে করা হয়নি অজয়ের বোন রাখির। অজয়ের সঙ্গেও আর ঘর বাঁধা হয়নি তাঁর প্রেমিকা মনীষার।
প্রায় ছ’মাস শয্যাশায়ী থাকার পরে সুস্থ হওয়া মেয়ের এখন নতুন করে বিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় করছেন মনীষার বাড়ির লোকজন। সম্প্রতি বিয়ে করেছেন রাখিও। তবু এ দিনের বাজ পড়ার জেরে দু’জনের মৃত্যুর কথা শুনে আতঙ্কিত বোধ করে দুই পরিবার। দুঃস্বপ্ন হঠাৎ করেই এ দিন ফের যেন তাঁদের নাড়িয়ে দেয়। রাখি বলেন, ‘‘দাদার মতোই আবার কেউ মারা গিয়েছে শুনলে কলজে ফেটে যায়। এখন একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই ভয় হয়। দাদার কথা খুব মনে পড়ে।’’ মনীষার বাড়ির লোকজন আর বাইরের কাউকে এ ব্যাপারে তাঁদের মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে দিতে চান না। তবে তাঁর এক আত্মীয় বলেন, ‘‘ঝড়-বৃষ্টিতেই আমাদের সব শেষ হয়ে গিয়েছে। নতুন করে মেয়েটা ঘর বাঁধার চেষ্টা করছে। আর পিছনে না তাকানোই ভাল! এখনও বৃষ্টি হলে ডুকরে কেঁদে ওঠে মেয়েটা।’’
গত বছরের ২৮ জুলাই ধর্মতলা এলাকায় কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন মনীষা আর অজয়। প্রবল ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ায় মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাব লাগোয়া সেনোটাফের চাতালে ছাতার তলায় আশ্রয় নেন তাঁরা। তবে সেই আশ্রয় যে নিরাপদ নয়, বোঝেননি ওই যুগল। বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অজয়ের। সঙ্কটজনক অবস্থায় মনীষাকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর শ্রবণশক্তি প্রায় চলে গিয়েছে। শরীরের বাঁ দিক দীর্ঘদিন অসাড় ছিল। বেশ কিছু দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে বাড়ি ফিরেও তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন। অজয়ের বাবা বিনোদ মল্লিক এ দিন জানান, শ্রাবণ মাসে তারকেশ্বরে যাবেন বলে ধর্মতলায় মনীষাকে নিয়ে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন অজয়। বোন রাখির জন্য সে দিন বিয়ের লহেঙ্গা কিনে আনার কথা ছিল অজয়ের। এ-ও কথা ছিল, তারকেশ্বর থেকে ফিরেই মনীষা আর অজয়ের বিয়ের দিন ঠিক করা হবে। তিন ভাই-বোনের সংসারে অজয়ই বড়। বোন রাখিও জেদ ধরেন দাদার বিয়ের দিনেই তাঁরও বিয়ে দিতে হবে। সেই মতোই কথা এগোচ্ছিল। ‘‘তবে একটা বৃষ্টির সন্ধ্যা সব ওলটপালট করে দিয়েছে। মেয়েটাকে আর ওর বাড়ির লোকজন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়নি।’’, বললেন বিনোদবাবু।
তাঁর আরও দাবি, অজয় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাফাইকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। ছেলের মৃত্যুর পরে সংসার চালাতে নিজে সেই চাকরি পাওয়ার আবেদন জানালেও তাঁকে তা দেওয়া হয়নি। এখন অন্যত্র সাফাইকর্মী হিসেবে কাজ করছেন তিনি। বৃষ্টির দুপুরে অজয়ের পরিবারের খোঁজ নিতে ফোন করা হলে ফোন ধরেন অজয়ের মা সীতাদেবী। ছেলের নাম করে প্রশ্ন শুনেই প্রথমে কেঁদে ফেলেন তিনি। পরে সামলে নিয়ে বলেন, ‘‘ছাদের একটা ঘরে ভাড়া থাকি আমরা।
ঝড়-বৃষ্টি হলেই ঘর ভিজে যায়। ঘর ভিজুক ক্ষতি নেই। আর যেন ঘর না ভাঙে আমাদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy