রাকেশ হালদার -প্রিয়াঙ্কা পুরকাইত
সাতসকালে বাড়িতে হানা দিয়ে একেবারে শোয়ার ঘরে ঢুকে এক তরুণীকে ঘুমন্ত অবস্থায় গুলি করে ও কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে গেল এক যুবক। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার পশ্চিম আনন্দপল্লিতে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলেই মারা যায় প্রিয়াঙ্কা পুরকাইত (২০) নামে ওই তরুণী। তিনি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। বিকেলেই অবশ্য রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকারই চণ্ডী ঘোষ রোড থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্তকে।
তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, খুনের এই ঘটনায় অভিযুক্তের নাম রাকেশ হালদার ওরফে জয়ন্ত। ২৬ বছরের ওই বিবাহিত যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। কিন্তু প্রেমিকের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা জানতে পেরে সম্প্রতি ওই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন তিনি। সেই রাগেই এ দিন রাকেশ তাঁকে খুন করেছে বলে ধারণা পুলিশের।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকালে রাকেশ হানা দেওয়ার আগে প্রিয়াঙ্কাদের বাড়ির অধিকাংশ বাসিন্দাই ঘুমোচ্ছিলেন। প্রিয়াঙ্কা শুয়েছিলেন তাঁর বড় পিসির সঙ্গে। দশম শ্রেণির পড়ুয়া ভাই প্রিয়াংশু বাড়িতে থাকলেও প্রিয়াঙ্কার মা কবিতাদেবী ও আর এক পিসি কাজে বেরিয়েছিলেন। বছর দুই আগে প্রিয়াঙ্কার বাবা মারা যান। মা ও পিসি পিছনের দরজা দিয়েই রোজ সকালে কাজে বেরিয়ে যেতেন। এ দিনও বেরোনোর পরে দরজাটা বাইরে থেকে ভেজিয়ে দিয়ে যান তাঁরা।
অকুস্থল: প্রিয়াঙ্কা পুরকাইতের বাড়িতে তদন্তে পুলিশকর্মীরা।
এর কিছু ক্ষণ পরেই পৌনে ৮টা নাগাদ আচমকা বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় প্রিয়াঙ্কার পাশে শুয়ে থাকা অসুস্থ বড় পিসির। তিনি দেখেন, পাশেই শুয়ে থাকা ভাইঝির গলা থেকে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে। আওয়াজ পেয়ে ভাই প্রিয়াংশুও ঘরে এসে দেখে, দিদি বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে। ওই দৃশ্য দেখে চিৎকার করে ওঠে সে। সেই চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন দৌড়ে আসেন। যদিও তত ক্ষণে মোটরবাইকে চেপে পালিয়ে গিয়েছে অভিযুক্ত রাকেশ।
শিখা ধর নামে প্রিয়াঙ্কাদের এক পড়শি জানান, অভাবের সংসার হলেও প্রিয়াঙ্কা পড়াশোনায় ভাল ছিলেন। মা পরিচারিকার কাজ করে ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। পাশের পাড়ার বাসিন্দা রাকেশ প্রিয়াঙ্কার এক জামাইবাবুর বন্ধু। সেই সূত্রেই দু’জনের পরিচয় হয়েছিল। বছর কয়েক আগে দু’জনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তখন থেকেই রাকেশ বিয়ে করার জন্য প্রিয়াঙ্কাকে চাপ দিচ্ছিল বলে অভিযোগ। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা পড়াশোনা শেষ না করে বিয়ে করতে রাজি হননি বলে পড়শিরা জানিয়েছেন।
অপেক্ষা না-করে রাকেশ অন্য এক জনকে বিয়ে করে নেয়। কিন্তু তা-ও প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তার। এমনকি, প্রিয়াঙ্কার জন্য স্ত্রীকে ছেড়ে দিতেও রাজি ছিল সে। সম্প্রতি রাকেশের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন জেনে প্রিয়াঙ্কা সম্পর্ক থেকে সরে আসতে চান। সে কথা শোনার পরেই রাকেশ বাড়িতে এসে প্রিয়াঙ্কাকে খুনের হুমকি দিয়ে গিয়েছিল বলে তাঁর পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন।
কিন্তু সেই হুমকিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি কেউই। তার পরেই ঘটে যায় এ দিনের ভয়াবহ ঘটনা। প্রিয়াঙ্কার পরিবারের এখন আফশোস, রাকেশের হুমকির বিষয়টি তখনই পুলিশকে জানালে হয়তো এই ঘটনা ঘটত না। এ দিকে, ঘটনার পরে অভিযুক্ত যুবক পালালেও বিকেলেই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রিয়াঙ্কার বড় পিসির বয়ান লিপিবদ্ধ করতে তাঁকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বলেন, ‘‘পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার একেবারে আদর্শ উদাহরণ এই খুন। মহিলা মানেই তিনি আমার সম্পত্তি। তাঁর ক্ষমতা হয় কী করে, আমাকে না বলার। আর এই মানসিকতা থেকেই এ ভাবে কেউ খুন করতে পারে।’’
আরও পড়ুন: করোনা ও ডেঙ্গি নিয়ে ভিডিয়োয় বৈঠক নিউ টাউনে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy