সমব্যথী: শেখ সোহেলের পরিজনেরা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
পাসপোর্ট তৈরি করিয়েছিলেন সদ্য। বেশি ক্ষণ রেস্তরাঁয় কাজ করে ধীরে ধীরে টাকা জমাচ্ছিলেন মা-বাবাকে দেখতে ফরিদপুর যাবেন বলে। কিন্তু সেই ইচ্ছে আর পূরণ হল না শেখ সোহেলের। বুলবুল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বৃষ্টিতে মাথায় গাছ ভেঙে পড়ে শনিবার মৃত্যু হয় আঠাশ বছরের সোহেলের।
সাত নম্বর সাউথ ট্যাংরা রোডে এক কামরার একটি ছোট্ট ঘরে মাসির সঙ্গে থাকতেন সোহেল। পেশায় রাঁধুনি ওই যুবক সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ের একটি ক্লাবে চাকরি করতেন। চাইনিজ় রান্নার গুণে বন্ধুদের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘অলরাউন্ডার’ নামে। ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশের ফরিদপুরে মা-বাবাকে দেখতে যাওয়ার।
সাউথ ট্যাংরা রোডের সোহেলের ঘরের বাইরে রবিবার বিকেলের পড়ন্ত আলোয় তাঁকে নিয়েই চলছিল স্মৃতিচারণ। বিষণ্ণ বন্ধুরা সোহেলের আকস্মিক মৃত্যুকে কিছুতেই যেন মানতে পারছিলেন না। তাঁরা জানান, চিলি চিকেনই হোক বা চিকেন চাউমিন—সোহেলের হাতের রান্নার একটা ব্যাপার ছিল। চিলি গার্লিক পেপার চিকেন ও হট গার্লিক চিকেন— সোহেলের হাতে তৈরি ওই দুই পদ ছিল তাঁর বন্ধুদের প্রিয়।
সোহেলের দাদা সৈয়দ মোল্লা থাকেন পাশের পাড়াতেই। তিনি জানান, সোহেলের মা-বাবা থাকেন বাংলাদেশের ফরিদপুরে। সোহেল সেখানে খুব যেতে চাইতেন। সৈয়দ বলেন, ‘‘ফরিদপুরে আমাদের বাড়ি। অনেক দিন ধরে বলিছিল মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাবে। পাসপোর্টও তৈরি করেছিল। বাড়ি যাওয়ার জন্য একটু একটু করে টাকা জমাচ্ছিল। সব শেষ হয়ে গেল।’’ বাংলাদেশে মা বাবার কাছে সোহেলের মৃত্যুর খবর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানান সৈয়দ।
আত্মীয়েরা জানান, পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে অল্প বয়সেই কাজে যোগ দেন সোহেল। দশ বছর চায়না টাউনের একটি নামী রেস্তরাঁয় রান্নার কাজ করা সত্ত্বেও স্থায়ী চাকরি না হওয়ায় সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ের ওই ক্লাবে আরও ভাল বেতনে রাঁধুনির চাকরিতে যোগ দেন সোহেল।
এক আত্মীয়ার কথায়, ‘‘শনি ও রবিবার ক্লাবে বেশি ক্ষণ ডিউটি থাকত। ওই দু’দিন সকাল ন’টায় গিয়ে রাত ১২টায় ফিরত। শনিবার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া দেখে আমরা কাজে যেতে বারণ করেছিলাম। কিন্তু শনিবার কাজের চাপ বেশি বলে ও ছাতা মাথায় দিয়ে সাইকেল চেপেই কাজে বেরিয়ে যায়।’’
কয়েক মাস আগেও সোহেল পথ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন। দাদা সৈয়দ বলেন, ‘‘তখনই ওকে বলেছিলাম এত দূরে কাজ করতে না গিয়ে কাছেই চায়না টাউনের কোনও রেস্তরাঁয় কাজ নিতে।’’
আমব্রিন জাবেদের মৃত্যুর কথা বলছেন তাঁর দাদা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
বছর খানেক আগে কালবৈশাখী ঝড়ের সময়ে মাথায় গাছের ডাল পড়ে মৃত্যু হয়েছিল শহরেরই এক তরুণী আমব্রিন জাবেদের। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম ফিলের ওই ছাত্রী তপসিয়ায় একটি বহুতলে থাকতেন। রবিবার সন্ধ্যায় তাঁর ভাই আরসানাল নিজেদের ফ্ল্যাটে বসে বলেন, ‘‘ঝড়ে গাছ ভেঙে কোনও মৃত্যুর ঘটনা শুনলেই দিদির কথা মনে পড়ে যায়। ওই সময়ে একটি ধর্ষণ-কাণ্ড ঘিরে চলা প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নিয়ে দিদি ফিরছিল। সেই সময়ে ঝড় উঠেছিল। তখন মাথায় গাছের ডাল পড়ে মৃত্যু হয় দিদির।’’
সোহেলের প্রসঙ্গ টেনে তাই আরসানালের প্রশ্ন, ‘‘কেন যে পুরসভা রাস্তার ধারে ঝুলে থাকা ডাল কাটে না?’’
ক্ষোভ, বিরক্তির মধ্যেও সোহেলের পরিবারের দুঃখটা যেন চেনা লাগে ছাত্রীর পরিবারের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy