Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪

৩০ ঘণ্টা একটানা ডিউটি, চালকের চোখ লেগে দুর্ঘটনা

পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ সায়েন্স সিটির দিক থেকে চিংড়িঘাটার দিকে যাচ্ছিল একটি সাদা সেডান গাড়ি।

দুমড়ে-মুচড়ে এমনই অবস্থা গাড়িটির। বুধবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

দুমড়ে-মুচড়ে এমনই অবস্থা গাড়িটির। বুধবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৯
Share: Save:

টানা ৩০ ঘণ্টা ডিউটি করার ক্লান্তিতে চলন্ত গা়ড়ির স্টিয়ারিং ধরা অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন চালক। যার জেরে ই এম বাইপাসে বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মেরে উল্টে গেল একটি গাড়ি। বুধবার সকালের এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে গাড়ির যাত্রী সুদীপ চক্রবর্তী (৩৬) নামে এক যুবকের। তিনি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করতেন। গুরুতর জখম গাড়িচালক বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। গাড়িতে ছিলেন আরও দু’জন। তাঁদের এক জন হাসপাতালে ভর্তি। অন্য জনকে চিকিৎসার পরে এ দিন দুপুরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ সায়েন্স সিটির দিক থেকে চিংড়িঘাটার দিকে যাচ্ছিল একটি সাদা সেডান গাড়ি। চালক ছাড়া তাতে ছিলেন এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার তিন জন কর্মী। চালক অজয় রায়ের পাশের আসনে বসে ছিলেন অংশুমান দে নামে এক যুবক। পিছনের আসনে ছিলেন সুদীপ ও ধৃতিমান ঘোষ। বাইপাসের উপরে নির্মীয়মাণ মেট্রো প্রকল্পের ২৯৩ নম্বর স্তম্ভের সামনে গাড়িটি ডান দিকের বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মারে। গাড়িটির গতি এতটাই বেশি ছিল যে, বাতিস্তম্ভটি কিছুটা বেঁকে যায়। পাশাপাশি গাড়িটি উল্টে রাস্তার অন্য দিকে গিয়ে থামে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশকর্মীরাই যাত্রীদের বার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সেখানেই সুদীপকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে প্রগতি ময়দান থানা। সেখানকার তদন্তকারী আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার দিনভর কাজ করার পরে এ দিন সকালে সেক্টর ফাইভের ওই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ডিউটিতে যোগ দিয়েছিলেন ওই গাড়িচালক। তার আগে মঙ্গলবার রাতে অবশ্য নিজের মতো ভাড়া খাটার কাজ করছিলেন তিনি। এ দিন সকালে সুদীপদের বাড়ি থেকে তুলে অফিসে পৌঁছে দেওয়ার ডিউটি পড়ে তাঁর। কিন্তু একটানা গাড়ি চালানোর ক্লান্তিতে পথেই তাঁর চোখ লেগে গিয়েছিল বলে পুলিশের দাবি। হাসপাতালে ওই চালকের এক আত্মীয় বলেন, ‘‘কী করবে? দিনে দশ ঘণ্টা চালালে শুধু গাড়ির কিস্তির টাকাটা উঠবে। সংসার চলবে কী করে? তাই বাড়তি সময় গাড়ি চালাতেই হয়।’’

সুদীপ চক্রবর্তী।

এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘দেরি হয়ে যাওয়ায় গাড়ির যাত্রীরাও জোরে চালাতে বলছিলেন বারবার। সেই কারণেই হয়তো গাড়ির গতি অনেকটা বেশি ছিল।’’ সেই সঙ্গে পুলিশ বলছে, বারংবারই গাড়ির পিছনের আসনে বসা যাত্রীদের সিট বেল্ট পরতে বলা হচ্ছে। কিন্তু কারও কোনও সচেতনতা নেই। সিট বেল্ট পরা থাকলে পিছনের ওই যাত্রী হয়তো এ দিন প্রাণে বেঁচে যেতেন। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সুদীপের মাথায় গভীর চোট লেগেছিল। প্রাথমিক ভাবে তাঁদের অনুমান, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলেই তাঁর মৃত্যু হয়। সিট বেল্ট লাগানো থাকলে হয়তো সুদীপের শরীর এতটা অরক্ষিত থাকত না।

অঘটন: দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির ড্যাশবোর্ডে লেগে রয়েছে রক্ত। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

এ দিন দুর্ঘটনার পরেই হাসপাতালে যান সুদীপের সহকর্মী এবং ওই সংস্থার কর্তারা। সুদীপ চাকরির পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। তাঁর সহপাঠীরাও গিয়েছিলেন হাসপাতালে। ছিলেন সুদীপের এক দিদিও। রিজেন্ট পার্কে তাঁর সঙ্গেই থাকতেন সুদীপ। তিনি জানান, সুদীপের বাড়ি উত্তর দিনাজপুরে। সেখানে তাঁর বাবা রয়েছেন। তিনি আসা পর্যন্ত সুদীপের দেহ শহরেই রাখা থাকবে। সুদীপের এক বন্ধুর কথায়, ‘‘ছেলেটা এ ভাবে চলে গেল, এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। কাকে আর দোষ দেব!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy