গঙ্গার ভাঙন হানা দিতে পারে কলকাতার সর্ববৃহৎ পলতা জলশোধনাগারে। যা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করলে অদূর ভবিষ্যতে গঙ্গার গ্রাসে তলিয়ে যেতে পারে প্রকল্পের কাঠামোও। এমন আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন কলকাতা পুরসভার পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারেরাও। দ্রুত তা রোধের ব্যবস্থা করতে চায় পুরসভা। কিন্তু টাকার অভাবে আটকে রয়েছে কাজ।
কলকাতা শহরে ৬০ ভাগেরও বেশি মানুষের পরিস্রুত পানীয় জল মেলে পলতা জলপ্রকল্প থেকেই। কলকাতাবাসীকে পরিস্রুত জল খাওয়ানোর জন্য সেই ব্রিটিশ আমলে তৈরি হয় ওই প্রকল্প। ব্রিটিশ সরকার উত্তর ২৪ পরগনার পলতায় ১৮৬৪ সালে জলপ্রকল্প নির্মাণ করে। চার বছর পরে ১৮৬৮ সালে ওই প্রকল্প থেকে তৈরি শুদ্ধ জল নিয়ে যাওয়া হয় প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে টালায়। টালা জলাধার থেকেই উত্তর ও মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশ ছাড়াও দক্ষিণ কলকাতার একাংশে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়।
কলকাতা পুরসভায় পরিস্রুত পানীয় জল উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র ওইটিই। বর্তমানে দৈনিক ২১ কোটি গ্যালন পরিস্রুত পানীয় জল পায় শহরবাসী। ইঞ্জিনিয়ারদের কথায়, গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে ব্যারাকপুরে গঙ্গার ধারে ওই প্লান্টের চৌহদ্দিতে ক্রমাগত আছড়ে পড়ছে গঙ্গার স্রোত। বাড়ছে ভাঙনের আশঙ্কাও। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে যে কোনও সময়ে গঙ্গার ভাঙনে তা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ভাবিয়ে তুলেছে বিশেষজ্ঞদের।
পুরসভা সূত্রে খবর, বছর চারেক আগে বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয় পুর-প্রশাসন। তখন প্রকল্পের পাশে গঙ্গার স্রোত আটকাতে পাড় বাঁধানোর কাজ কিছুটা শুরু হলেও অর্থের অভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের জওহরলাল নেহেরু ন্যাশান্যাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন (জেএনএনইউআরএম) প্রকল্পের অধীনে ওই কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) পাঠানো হয়।
কাজটি শুরু হয়ে শেষ হল না কেন?
পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, এই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের জন্য ‘জওহরলাল নেহেরু ন্যাশান্যাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন’-এ নকশা পাঠানো হয়েছিল বছর তিনেক আগেই। কিছুদিন পরে কেন্দ্রীয় সরকার পুরসভাকে চিঠি দিয়ে জানায়, যেহেতু এই প্রকল্পের সঙ্গে গঙ্গার পাড় বাঁধানো সংক্রান্ত পরিকল্পনা রয়েছে, তাই ‘ন্যাশানাল গঙ্গা রিভার বেসিন অ্যাকশন প্ল্যান’-এ অর্থ বরাদ্দ করা হবে। কিন্তু সেখানেও প্রশাসনিক জটিলতা থাকায় এই প্রকল্প গৃহীত হয়নি। টালবাহনার জেরে ততদিনে কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকারের পতন ঘটে বিজেপি ক্ষমতায় আসে। জেএনএনইউআরএম প্রকল্প অবলুপ্ত হয়ে নতুন প্রকল্প ‘অটল মিশন ফর রেজুভিনেশন অ্যান্ড আর্বান ট্রান্সফর্মেশন’ বা ‘আমরুট’। ফের আমরুটের সাহায্যের আশায় এই প্রকল্প পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় নগরোয়ান্নয়ন দফতরে। গত বছর এই প্রকল্প ‘আমরুট’-এ অন্তর্ভুক্ত করা হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও অর্থ বরাদ্দ হয়নি বলে পুরসভা সূত্রে খবর।
কত খরচ লাগতে পারে? পুর-প্রশাসন সূত্রে খবর, পলতায় প্লান্ট লাগোয়া পাড়ের ভাঙন রুখতে পুরসভা যে সমীক্ষা চালিয়েছিল, তা থেকে জানা গিয়েছে জলপ্রকল্প সংলগ্ন প্রায় ১৮০০ মিটার অংশ ভাঙনের কোপে পড়েছে। গঙ্গার এই অংশের পাড় বাঁধানোর জন্য খরচ প্রায় ১২৫ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্য এবং কলকাতা পুরসভা ওই টাকা দেবে।
নদী বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, নদীর সাধারণ ধর্মই হল, জল যেখানে বেশি এবং স্রোত তীব্র, পাড় ভাঙে সেখানেই। পলতা জল প্রকল্পের ঠিক বিপরীত দিকে চড়া পড়ার ফলে পলতা জলপ্রকল্পের লাগোয়া অংশে জলের আধিক্য বেশি। ফলে পলতা জলপ্রকল্প লাগোয়া গঙ্গার পাড়ের যে অংশ রয়েছে, সেখানে অনেকখানি অংশ জুড়েই ভাঙনের আশঙ্কা করছেন পুর-বাস্তুকারেরাও।
তাই ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন কলকাতা পুরসভার জল দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল বিভাস মাইতি। কিন্তু সমস্যা অর্থ জোগানের। বিভাসবাবুর মতে, ‘‘ওই ভাঙন আর বাড়তে দেওয়া ঠিক নয়।’’ তবে টাকার অভাবই যে এর প্রধান কারণ, তা মানছেন পুরকর্তারাও। পুরসভার প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট দফতর কিছুটা কাজ করলেও অর্থ বরাদ্দ না থাকায় বেশির ভাগ কাজই বাকি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy