বৌবাজারের একচিলতে বাড়িতে লক্ষ্মীদেবী। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
বিজ্ঞাপনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ছবি ছেপে দিয়ে যে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে, বাস্তবে সরকারের কাছে এখন সেটাই চান লক্ষ্মীদেবী ও তাঁর ছেলেরা।
ছয় বাই আট ফুটের ছোট্ট ঘর। ভিতরে একটি উঁচু চৌকি। রাতে ওই ঘরেই বাচ্চাদের নিয়ে মহিলারা থাকেন। তখন বাড়ির বড় তিন পুরুষ সদস্যের সেখানে জায়গা হয় না। তাই রাতে ফুটপাতেই মশারি টাঙিয়ে শুয়ে পড়তে হয় তাঁদের। ঘরে ঢুকতে গেলে মাথা নিচু করতে হয়। ওই ঘরের জন্য মাসে ভাড়া দিতে হয় পাঁচশো টাকা। সেখানেই পরিবারের আট সদস্যের সঙ্গে দিন কাটে লক্ষ্মীদেবীর। কিন্তু বিজ্ঞাপন বলছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর পেয়েছেন লক্ষ্মীদেবী। বিজ্ঞাপন এবং বাস্তবের এই ‘অমিল’ সমস্যায় ফেলেছে বৌবাজারের ৭১ নম্বর মলঙ্গা লেনের বাসিন্দা লক্ষ্মীদেবী ও তাঁর পরিবারকে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীদেবীর ছেলে রাহুল প্রসাদকে তাঁর এক বন্ধু জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর মা লক্ষ্মীদেবীর ছবি কাগজে বেরিয়েছে। প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। পরে খবরের কাগজ দেখে হতবাক রাহুল। ২৫ ফেব্রুয়ারি আবার সেই ছবি বেরোয় সংবাদপত্রে। শহরে বড় বড় হোর্ডিংয়েও সেই ছবি। প্রতিবেশীরাও বিষয়টি জানতে পারেন। তাঁরাও বলতে থাকেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর পেলি, কিন্তু আমাদের জানালি না।’’
ঘর যে তাঁরা পাননি, সে কথা প্রতিবেশীদের বললেও প্রথমে কেউ বিশ্বাস করেননি। উল্টে তাঁরা বলতে থাকেন, ‘‘বিজ্ঞাপনে রয়েছেন ‘স্বয়ং’ প্রধানমন্ত্রী। ভুল কী করে হয়?’’ কিন্তু পরে ‘বাস্তব’ কী, তা বুঝতে পারেন প্রতিবেশীরাও।
লক্ষ্মীদেবীর পরিবারে আট জন সদস্য। তিন ছেলের মধ্যে দু’জন ভ্যান চালান। অন্য জন বেকার। লক্ষ্মীদেবী জানান, ২০০৯ সালে স্বামী চন্দ্রদেব প্রসাদ মারা যান। তিনি সরকারি বাসের কর্মী ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পরে পেনশন পান মাত্র দু’হাজার টাকা। তাই মাঝেমধ্যে সংসার চালাতে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতে হয় ওই মহিলাকে। লক্ষ্মীদেবী বলেন, ‘‘এ বছরও গঙ্গাসাগর মেলার আগে বাবুঘাটে ঠিকা শ্রমিকের কাজে গিয়েছিলাম। সেখানেই কয়েক জন এসে আমার ছবি তুলল। এখন দেখছি, সেই ছবিটাই আবাস যোজনার ঘর পেয়ে উপকৃত হয়েছি বলে ছাপিয়ে দিয়েছে।’’
সোমবার লক্ষ্মীদেবীর ছেলে রাহুল ও বিজয় বলেন, ‘‘এই বিজ্ঞাপনের জন্য আমাদের পুরো পরিবারের বদনাম হল। সরকারি ঘর পেলাম না, আর বিজ্ঞাপনে বলা হল, ঘর পেয়েছি! যে ঘরের জন্য আমাদের বদনাম হল, এখন আমরা সরকারের কাছে সেটাই চাই।’’ রাহুল আরও বলেন, ‘‘বাবার মৃত্যুর পরে বলা হয়েছিল, ভাইদের এক জনকে বাবার চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু এত দিনেও তা মেলেনি।’’
বিজ্ঞাপনের কথা জানাজানি হতেই নেতারা এসেছিলেন। প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। বলা হয়েছে, ভোট মিটলেই সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু এ সব প্রতিশ্রুতিতে আর বিশ্বাস রাখতে চান না লক্ষ্মীদেবীর পরিজনেরা। তাঁদের একটাই দাবি, ‘‘প্রতিবেশীদের কাছে অবিশ্বাসের পাত্র হয়ে নয়, একটু শান্তিতে আগের মতো থাকতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy