কাঁকুড়গাছি মোড়ের দুর্ঘটনাস্থল। (ইনসেটে)রেশমা হেলা।মঙ্গলবার বিকেলে। নিজস্ব চিত্র
মোটরবাইকের পিছনে বসেছিলেন স্ত্রী। বাইকটি চালাচ্ছিলেন স্বামী। মানিকতলার দিক থেকে এসে কাঁকুড়গাছির দিকে বাঁক নেওয়ার সময়ে আচমকাই স্ত্রী বাইক থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান। ঠিক তখনই পিছন দিক থেকে ছুটে আসছিল একটি বেপরোয়া বাস। মহিলাকে পিষে দিয়ে চলে যায় সেটি। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রেশমা হেলা (৩৪) নামে ওই মহিলাকে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁর বাড়ি বেলঘরিয়ার রথতলায়। ফুলবাগান থানার পুলিশ বাসটিকে আটক করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে চালককে।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে মোটরবাইকে চেপে মানিকতলার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে এসেছিলেন বসন্তকুমার হেলা। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী রেশমা। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ তাঁরা বাড়ি ফিরছিলেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, কাঁকুড়গাছি মোড়ে সিগন্যাল সবুজ হতেই বসন্তবাবু মোটরবাইক নিয়ে বাঁ দিকে ঘুরতে যান। তখনই হঠাৎ পিছনের আসনে বসা রেশমা রাস্তায় পড়ে যান। তদন্তকারীরা জানান, সেই সময়ে ফুলবাগানের দিক থেকে আসা ৪৪ নম্বর রুটের একটি বাস (হাওড়া-বাগুইআটি) রেশমাকে ধাক্কা মেরে চলে যায়। ঘটনাস্থলে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকেন রেশমা। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। কাঁকুড়গাছি মোড়ে কর্তব্যরত পুলিশকর্মী ১০০ ডায়ালে ফোন করে দুর্ঘটনার খবর জানালে পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তারাই রেশমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। যেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ দিন দুর্ঘটনার পরেই কাঁকুড়গাছি মোড়ে বেশ কিছু ক্ষণ যানজট হয়। পুলিশের হস্তক্ষেপে আধ ঘণ্টা পরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ দিন বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, জল দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করা হয়েছে। কাঁকুড়গাছি মোড়ে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘বাইকটি কাঁকুড়গাছি মোড়ে বাঁক নিতেই দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তায় প্রচুর রক্ত পড়ে ছিল। পরে জল ঢেলে ধুয়ে দেওয়া হয়।’’
পড়ে রয়েছে রেশমা হেলার দেহ। মঙ্গলবার বিকেলে। নিজস্ব চিত্র
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাঁকুড়গাছি মোড়ের ওই বাঁকটি ভীষণ বিপজ্জনক। আগেও ওই জায়গায় একাধিক বার দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, মানিকতলা থেকে উল্টোডাঙার দিকে যেতে কাঁকুড়গাছি মোড়ে বাঁক নেওয়ার পথে ট্রামলাইন পড়ে। তীব্র গতিতে থাকা মোটরবাইকের চাকা অনেক সময়ে তাতে পিছলে যায়। অতীতেও ওই জায়গায় মোটরবাইক পিছলে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ট্র্যাফিক পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বাইকচালক নিজেকে সামলে নিলেও তাঁর স্ত্রী সামলাতে পারেনননি। সেই কারণেই এই ঘটনা ঘটল।’’
বছর ১৪ আগে রেশমা ও বসন্তকুমারের বিয়ে হয়। তাঁদের দু’টি শিশুসন্তান রয়েছে। এ দিন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দিশাহীন ভাবে ঘুরছিলেন বসন্তবাবু। তিনি পেশায় গাড়িচালক। কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। শুধু বললেন, ‘‘কী ভাবে এমনটা ঘটে গেল, কিছুতেই বুঝতে পারছি না।’’ বললেন, ‘‘আমাদের ছোট্ট দুটো ছেলে। এখন ওদের দেখবে কে!’’
পুলিশ জানিয়েছে, বসন্তবাবুর মাথায় হেলমেট থাকলেও রেশমার মাথায় ছিল না। প্রশ্ন উঠেছে, মোটরবাইক চালানোর সময়ে দুর্ঘটনা এড়াতে হেলমেট পরার জন্য বারবার সচেতন করা হলেও তা মানা হয় না কেন? এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওই তরুণী হেলমেট পরে থাকলে হয়তো বেঁচে যেতেন।’’ এ দিন দুর্ঘটনার পরে বাসটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ বাসটিকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে। গ্রেফতার করা হয় চালক রফিকুল ইসলামকে। তাঁর বিরুদ্ধে বেপরোয়া গতিতে বাস চালানো এবং অবহেলায় মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা রুজু করেছে ফুলবাগান থানার পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy