হেলমেট ছাড়াই এক বাইকচালক। রবিবার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। নিজস্ব চিত্র
যাত্রা শুরু করতেই যাত্রীকে বাইক-ট্যাক্সির চালকের প্রশ্ন, পুজোয় বাইকে ঘুরবেন? ঠাকুর দেখানোর নানা ‘প্যাকেজ’ জানিয়ে এর পর তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সংস্থার অ্যাপ থেকে বুক করলে হবে না কিন্তু। এটা আমরাই করছি। দু’জনও নিয়ে নেব। পুজোর সময়ে পুলিশ অত দেখে না।’’
পুজো আসে পুজো যায়, কিন্তু কোনও উৎসবেই গাড়ি বা মোটরবাইকের দৌরাত্ম্যে লাগাম টানা যায় না বলে অভিযোগ। পথচারীদের বড় অংশেরই দাবি, এমনিতে রাতদিন নাকা তল্লাশি চললেও পুজোর সময়ে পুলিশ ফিরে যায় ‘ছাড়’ দেওয়ার চেনা পথে। সেই সুযোগেই কোথাও এক মোটরবাইকে সওয়ার হন চার জন। কোথাও হেলমেট ছাড়াই মণ্ডপ থেকে মণ্ডপে ছোটে ‘বাইক গ্যাং’। চলে দেদার বেআইনি পার্কিং। পুজোর রাতে অনেকের ‘ডেস্টিনেশন’ বেপরোয়া হাইওয়ে-যাত্রা। এর সঙ্গে সিগন্যাল বন্ধ হলে পথচারীদের জেব্রা ক্রসিংয়ের উপরেই গাড়ি বা বাইক দাঁড় করানো এবং বিনা হেলমেটে সন্তানকে স্কুল থেকে ফেরাতে, ‘‘এই তো সামনেই বাড়ি’’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার পুরনো রোগ।
অনেকের আবার দাবি, চলতি বছরে এর সঙ্গেই যুক্ত হচ্ছে বিভিন্ন অ্যাপ-ক্যাব সংস্থা চালিত বাইক-ট্যাক্সি। পুলিশি ‘ছাড়ে’র সুযোগে তাদের বাড়বাড়ন্ত এ বার লাগামছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা।
তবে গাড়ির দৌরাত্ম্যে লাগাম টানতে সম্প্রতি জরিমানার অঙ্ক ১০ গুণ বাড়িয়েছে কেন্দ্র। সিট বেল্ট না পরে গাড়ি চালালে এত দিন ১০০ টাকা জরিমানা হত, এখন সেটাই ১০০০ টাকা করা হয়েছে। বাইকে দু’জনের পরিবর্তে তিন জন সওয়ার হলে আগের ১০০ টাকার জরিমানা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০০০ টাকা। তেমনই লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর জরিমানা ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০০০ টাকা। বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো বা মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে জরিমানা আরও বেশি। দুটোই ২০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০০০০ টাকা। গতি সীমা ভাঙা এবং রেষারেষি করে যান চালানোর জরিমানা যথাক্রমে ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ২০০০ টাকা এবং ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০০ টাকা হয়েছে। তবে রাজ্য সরকার এখনও বর্ধিত জরিমানা চালু না করায় গাড়ির দৌরাত্ম্যে লাগাম টানা যাচ্ছে না বলেও অনেকের দাবি।
রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বললেন, ‘‘বেশি জরিমানা প্রসঙ্গে রাজ্যের একটা অবস্থান আছে। তা ছাড়া পুজোয় আমাদের ভিজ়িল্যান্স টিম থাকছে। তাদের চোখে পড়লেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ অ্যাপ নিয়ন্ত্রিত বাইক-ট্যাক্সি নিয়ে পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক আবার বললেন, ‘‘এদের কোনওটিই কনজ়িউমার ভেহিক্ল নয়। রাস্তায় দেখলেই জরিমানা করতে বলা আছে পুলিশকে।’’ অ্যাপ নিয়ন্ত্রিত বাইক-ট্যাক্সি সংস্থাগুলির অবশ্য দাবি, কনজ়িউমার নম্বরের জন্য তাঁদের তরফে আবেদন করা হয়েছে।
কলকাতা পুলিশের কমিশনার অনুজ শর্মার দাবি, ‘‘বেপরোয়া গাড়ি বা হেলমেট ছাড়া কাউকেই এ বার পুজোয় ছাড়া হবে না। গুন্ডাদমন শাখার বিশেষ দল রাস্তায় থাকবে।’’ এতে কি নিয়ম লঙ্ঘনের রোগ ছাড়বে? দেখতে বাকি মাত্র কয়েক দিন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy