তদন্তে: গড়িয়াহাটের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে পুলিশ-কুকুর। বৃহস্পতিবার, গরচা ফার্স্ট লেনে। (ইনসেটে) ঊর্মিলা কুমারী। নিজস্ব চিত্র
ধড় থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে মাথা। পেট থেকে বেরিয়ে এসেছে নাড়িভুঁড়ি, যকৃৎ। বিছানা আর মেঝে ভেসে যাচ্ছে রক্তে। ঘর পুরো লন্ডভন্ড। বৃহস্পতিবার বেলায় গড়িয়াহাটের গরচা ফার্স্ট লেনের বাড়িটিতে পরিচারিকা ঢুকেই
গৃহকর্ত্রী প্রৌঢ়ার এমন পরিণতি দেখে শিউরে উঠেছিলেন। দ্রুত বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে চিৎকার করতে থাকেন তিনি। ছুটে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতা প্রৌঢ়ার নাম ঊর্মিলা কুমারী (৬৫)। ওই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি। তদন্তকারীরা জেনেছেন, ঊর্মিলাদেবীর আদি বাড়ি পঞ্জাব হলেও দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ কলকাতায় থাকতেন। তাঁর স্বামী আগেই মারা গিয়েছেন। গরচা ফার্স্ট লেনের বাড়িটিতে ছোট ছেলে, বৌমা এবং দুই নাতির সঙ্গে তিনি থাকতেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, গত সোমবার ছোট ছেলে ও তাঁর পরিবার এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে
উত্তরবঙ্গে গিয়েছেন। সে দিন থেকে গরচা ফার্স্ট লেনের বাড়িতে একা ছিলেন প্রৌঢ়া। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন বেলা বারোটায় পরিচারিকা ঢুকে দেখেন, বিছানায় ঊর্মিলাদেবীর ধড়ের কোমর পর্যন্ত এবং শরীরের নীচের অংশ খাট থেকে ঝুলছে। পেট থেকে বেরিয়ে এসেছে নাড়িভুঁড়ি, যকৃৎ।
পুলিশ গিয়ে দেখে, বাড়ি লন্ডভন্ড, আলমারি খোলা। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দুধওয়ালা আসবেন বলে রোজই ওই বাড়ির সদর সকালে খুলে দেওয়া হয়। প্রৌঢ়া যে বাড়িতে একা রয়েছেন, তা খুনিরা জানত। কাছেই থাকে প্রৌঢ়ার বড় ছেলের পরিবার। তদন্তকারীরা আরও জেনেছেন, ঊর্মিলাদেবীর বড় ছেলের দিকের নাতনি বুধবার রাত সাড়ে
দশটা নাগাদ তাঁকে খাইয়ে গিয়েছিলেন। এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, রাত বারোটা
নাগাদ একটা আওয়াজ পেয়েছিলেন তিনি। অন্য এক প্রতিবেশীর দাবি, ভোর চারটে নাগাদ ঊর্মিলাদেবীর ঘরে আলো জ্বলতে দেখা গিয়েছিল। এই তথ্যগুলিকে যাচাই এবং বিশ্লেষণ করার কাজ শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। তবে তাঁদের প্রাথমিক অনুমান, ঊর্মিলাদেবী খুন হয়েছেন রাত বারোটা থেকে আড়াইটের মধ্যে।খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মা,
লালবাজার হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দা-সহ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। এসএসকেএম থেকে ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসক বিশ্বনাথ কাহালিও এসে দেহটি পরীক্ষা করে যান। পুলিশ-কুকুরকে নিয়ে ওই বাড়ি-সহ রাস্তা তল্লাশি করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে,
ঊর্মিলাদেবীর হাতে, কানে এবং গলার গয়না দেহেই ছিল। এমনকি, ঘটনাস্থল থেকে কিছু টাকাও উদ্ধার হয়েছে। গোয়েন্দা প্রধানের কথায়, ‘‘প্রৌঢ়ার গয়না এবং টাকা পাওয়া গিয়েছে। ফলে এটা স্পষ্ট নয় যে লুটের উদ্দেশ্যেই খুন করা হয়েছে। বাড়ি থেকে কী কী খোয়া গিয়েছে, প্রৌঢ়ার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করে জানতে হবে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই প্রৌঢ়াকে নৃশংস ভাবে খুন করার ধরনেই অনুমান যে এর পিছনে কোনও পুরনো শত্রুতা থাকতে পারে।’’
চলতি বছরেই বেহালার পর্ণশ্রীর এক বৃদ্ধা, নেতাজিনগরে প্রবীণ দম্পতি এবং কড়েয়ায় দুই বৃদ্ধ খুন হয়েছেন। শহরের বুকে একের পর এক প্রবীণ ব্যক্তির খুনের ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গরচা ফার্স্ট লেনের বাসিন্দাদের একটি অংশের আবার অভিযোগ, ওই এলাকায় মাদকাসক্তদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। তাঁরা জানান,
ঊর্মিলাদেবীর বাড়ির কাছেই একটি মদের দোকান রয়েছে। এলাকার এক বাসিন্দা গৌতম ভদ্রের অভিযোগ, ‘‘ওই দোকানে বসেই নেশা করে রাস্তায় আড্ডা মারেন মত্ত যুবকেরা। এ সব কারণে মালিককে দোকানের সামনে সিসি ক্যামেরা লাগাতে বারবার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও কিছুই হয়নি। গড়িয়াহাট থানাকে জানিয়েও কাজ হয়নি।’’ লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই রাস্তায় শীঘ্রই সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy