ছটপুজোতেও বেলাগাম বিধিভঙ্গের ছবি দেখল শহর। নিজস্ব চিত্র।
দুর্গাপুজো, কালীপুজোর মতো ছট উৎসবের জন্যও বিধিনিষেধে কিছুটা ছাড় দিয়েছিল প্রশাসন। যদিও দু’দিনের সেই ছাড়ের সময়সীমা শেষ হতেই ফের কড়া হাতে বিধি বলবৎ করতে পথে নেমেছে পুলিশ। জনবহুল রাস্তায় দেখা মিলছে অতিরিক্ত বাহিনীরও। কিন্তু উৎসবের দিনগুলিতেও কেন পুলিশকে একই ভূমিকায় দেখা গেল না— তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শহরের সচেতন নাগরিকদের একাংশ। যদিও পুলিশের একাংশের বক্তব্য, উৎসবের দিনগুলিতেও একই ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
দুর্গাপুজো ও কালীপুজোর সময়ে বিধি শিথিল থাকার সুযোগে একাধিক বিধিভঙ্গের ছবি দেখেছিল কলকাতা। যার মূল্য চোকাতে হয়েছে আমজনতাকে। পুজোর পরেই এক ধাক্কায় বাড়তে শুরু করেছিল দৈনিক সংক্রমণ। অবস্থা বেগতিক দেখে দুর্গাপুজোর দিনকয়েক পরেই কড়া হাতে মাঠে নেমেছিল পুলিশ। এমনকি, ফিরিয়ে আনা হয় নৈশ কার্ফুর বিধিনিষেধও। ছটপুজোতেও ফের সেই বেলাগাম বিধিভঙ্গের ছবি দেখল শহর। রবীন্দ্র সরোবর, সুভাষ সরোবরে পুণ্যার্থীদের প্রবেশ আটকাতে পুলিশ-প্রশাসন সফল হলেও শহরের বিভিন্ন ঘাটে করোনা-বিধি বলবৎ করতে পুলিশকে ততটা সক্রিয় হতে দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ।
দূরত্ব-বিধি শিকেয় তুলে, মাস্ককে ব্রাত্য করে জমায়েত হয়েছে বিভিন্ন ঘাট ও জলাশয় চত্বরে। অভিযোগ, কোভিড-বিধি বলবৎ করতে কড়া হওয়ার বদলে খানিকটা ‘নরম’ ছিল পুলিশও। বাগবাজারের বাসিন্দা অনুভব চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ছটের ভিড়ে বিভিন্ন ঘাটে পুলিশ তো কার্যত সব দেখেও চোখ বন্ধ করে থাকল। সব সক্রিয়তা ছিল রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবরকে ঘিরেই। দুর্গাপুজো ও কালীপুজোর ভুল থেকেও যদি শিক্ষা না হয়ে থাকে, তা হলে এর মূল্যও দিতে হবে।’’ কেন ছটে পুলিশ আরও কঠোর হল না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন গল্ফ গ্রিনের বাসিন্দা অমিয় পাত্র। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও ঘাটেই তো কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। যে যাঁর মতো করে ঘুরেছেন। উৎসবের পরে কঠোর হাতে ব্যবস্থা নিয়ে আর কী হবে!’’
যদিও ছটের পরে শুক্রবার ও শনিবার শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা গেল, রাস্তায় রাস্তায় রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। শ্যামবাজার, ধর্মতলা, পার্ক সার্কাস, উল্টোডাঙা, রুবি, গড়িয়াহাট-সহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের পাশাপাশি একাধিক জনবহুল এলাকায় মাস্ক ছাড়া পথে বেরোনো নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। এমনকি, পুলিশ সেজে মাস্কহীন ব্যক্তিদের থেকে ১০০ টাকা করে জরিমানা আদায় করা এক ব্যক্তিকেও এ দিন ময়দান থানা এলাকার ডাফরিন রোড থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সাউথ ট্র্যাফিক গার্ডের সার্জেন্ট সীমান্ত রায়চৌধুরীর প্রথম নজরে আসে বিষয়টি। দমদমের বাসিন্দা, মানস সরকার নামে ওই ধৃতকে আজ, রবিবার আদালতে তোলা হবে।
তবে লালবাজার সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, মাস্ক না পরার জন্য শুক্রবার শহরে ৩৩৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যদিও ছট উৎসবের দিনে, অর্থাৎ বুধ ও বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২৮৫ এবং ২৩১। ছটপুজোয় শহরের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার বিধিভঙ্গের ঘটনার মধ্যে এই সংখ্যা যে নিতান্তই কম, তা মানছেন পুলিশের একাংশ। লালবাজারের এক কর্তা যদিও বলছেন, ‘‘উৎসবের দিনগুলিতে ব্যবস্থা যেমন নেওয়া হয়েছে, সেই সঙ্গে মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর দিকেও সমান জোর দেওয়া দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জনবহুল স্থানে মাইকে প্রচার করার সঙ্গে সঙ্গে জীবাণুনাশের উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy