প্রতীকী ছবি।
‘থ্রি ইডিয়টস’-এর সেই দৃশ্যটা মনে আছে?
যেখানে গিটার বাজিয়ে যুবকটি গাইছেন, ‘গিভ মি সাম সানশাইন, গিভ মি সাম রেন...’। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আলোর ঠিকানা জানতে পারেননি তিনি। পড়াশোনার চাপ, কলেজের প্রজেক্টের চাপ, কৃত্রিম মেধা-ব্যবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে নিতে না পারার চাপ শেষ পর্যন্ত নিতে পারেননি। আত্মহত্যা করার আগে বড় বড় করে দেওয়ালে লিখেছিলেন— ‘আই কুইট’।
সিনেমার ওই যুবকটিই শুধু নন, আলোর দেখা না পেয়ে অন্ধকারকে বেছে নেওয়ার বৃত্ত ক্রমশ বাড়ছে। যার মধ্যে বিপজ্জনক হারে বাড়ছে পড়ুয়া বা অল্পবয়সিদের সংখ্যা। এমনই জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তথ্য। আজ, মঙ্গলবার বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসে যে তথ্য চিন্তায় রাখছে মনোবিদ থেকে ছোটদের বাবা-মা সকলকেই। কারণ, ‘হু’-র পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে বছরে প্রায় আট লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করেন। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একটি করে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। শুধু তা-ই নয়, ওই একই সময়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে থাকেন কমপক্ষে আরও ২০ জন। যার মধ্যে পাঁচ থেকে উনিশ বছর পর্যন্ত বয়সিদেরও রেখেছে ‘হু’। এদের মধ্যে ৫-৯, ১০-১৪ এবং ১৫-১৯ বছর বয়সিদের তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ‘হু’-র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায় ওই তিনটি বয়সসীমার মধ্যে আত্মহত্যার হার যথাক্রমে ০.৫ শতাংশ, ২.৬ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ। ওই পরিসংখ্যান আরও বলছে, মেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যার হার ছেলেদের তুলনায় বেশি।
কেন বাড়ছে ছোটদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা?
মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল জানাচ্ছেন, ইউটিউবে বা স্মার্টফোনে ভিডিয়ো দেখে বাচ্চারা অনেক সময়েই সেগুলিকে কোনও ভাবে অনুকরণ করতে যাচ্ছে বলে জানা যায়। সেই অনুকরণের ফল যে সব সময়ে আত্মহত্যা হবে, তা নয়। সেগুলি হল ‘অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথ’। নীলাঞ্জনার কথায়, ‘‘অনেক সময়েই অন্যকে শাস্তি দিতে বা বিষাদগ্রস্ততা থেকেও ছোটরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।’’
কিছু দিন আগে দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলে এক পড়ুয়ার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। ওই স্কুলের অধ্যক্ষা শর্মিলা নাথ জানাচ্ছেন, সেই ঘটনার পরে স্কুলে নিয়মিত পড়ুয়াদের কাউন্সেলিং করা হয়। মনোবিদদের একাংশের আবার বক্তব্য, ‘ইনস্ট্যান্ট গ্র্যাটিফিকেশন’ বা যখন-যা-চাইছি, তখন-তাই-পাচ্ছি এমন একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছে বাচ্চাদের মধ্যে। পরিবারের সদস্যেরা অনেক সময়েই আবদার করার সঙ্গে সঙ্গে অথবা না চাইতেই ছোটদের জিনিসপত্র এনে দিচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তখন, যখন চাওয়া সত্ত্বেও সেই জিনিস পাওয়া যাচ্ছে না। পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষের কথায়, ‘‘না পাওয়ার দুঃখ নিয়ে বেঁচে থাকাটাই ভুলে যাচ্ছে এখনকার বাচ্চারা। তার দায় কিন্তু পরিবারের লোকজন এড়াতে পারেন না। দুঃখ নিয়ে যাপন যে করা যায়, সে শিক্ষা তাদের দিতে হবে। কাটাতে হবে তাদের নিঃসঙ্গতাও।’’
তা হলেই সেই আলো, সেই বৃষ্টির হয়তো দেখা পাওয়া যাবে। ‘গিভ মি সাম সানশাইন, গিভ মি সাম রেন...’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy