আরসালান পারভেজ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ঘটনার পাঁচ দিন পর শেকসপিয়র সরণির জাগুয়ার দুর্ঘটনায় পুলিশ দাবি করছে, ঘাতক গাড়ির স্টিয়ারিং ছিল রাঘিব পারভেজের হাতে। অভিযুক্ত তাঁর ছোট ভাই আরসালান পারভেজ নন। কিন্তু এখনও বেশ কিছু জায়গায় ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে।
কেন আরসালান বিরিয়ানি চেনের মালিক আখতার পারভেজ তাঁর ছোট ছেলেকে এই ঘটনায় আত্মসমর্পণ করাতে গেলেন? যদি রাঘিব পারভেজই গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তা হলে তাঁকে কেন আত্মসমর্পণ করানো হল না? এর নেপথ্যে কি অন্য কোনও রহস্য ছিল? ওই রাতে কি তা হলে রাঘিব মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন? আর সেটা গোপন করতেই কি এই পরিকল্পনা? ছোট ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে কী লাভ হল? এ রকম হাজারো প্রশ্ন উঠে আসছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মার সাংবাদিক বৈঠকের পর।
পুলিশের কাছে এ বিষয়ে কোনও জবাব পাওয়া যায়নি। তবে, দুর্ঘটনার পর যে পারিবারিক বন্ধু আরসালান পারভেজকে নিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি এ দিন বলেন, “আমার তো অন্য কারও ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিইনি। আমাদের না জানিয়ে দুবাইয়ে চলে গিয়েছিল রাঘিব। যে ভাবে আখতার পারভেজ ভেঙে পড়েছিল, তা দেখে ছোট ছেলে আরসালান পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। ও বলেছিল, যে ভাবে পুলিশ চাপ দিচ্ছে তাতে আমিই ধরা দিই। এর মধ্যে দুবাই থেকে ফিরে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে তোমরা দাদাকে বোঝাও।” এই বক্তব্যের মধ্যে কতটা সত্যতা আছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
মঙ্গলবার দুর্ঘটনাগ্রস্ত জাগুয়ার গাড়িটির পরীক্ষা করা হয় শেক্সপিয়র সরণি থানার সামনে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
এ দিন লালবাজারে সাংবাদিক বৈঠক করে মুরলীধর শর্মা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে দুর্ঘটনার পর শেকসপিয়ার সরণিতে কখনও হেঁটে, কখনও দৌড়ে যেতে দেখা গিয়েছিল ওই গাড়ির চালককে। কিন্তু তাঁর মুখ স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়েনি। পরে ওই উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন গাড়ি থেকে পাওয়া একটি মোবাইলের সূত্র ধরে ওই সময় গাড়ি কে চালাচ্ছিলেন, তা জানা যায়। কারণ, ওই গাড়িটির সিস্টেমের সঙ্গে মোবাইলের লিঙ্ক করা ছিল। নির্দিষ্ট মোবাইলের সঙ্গে গাড়ির সিস্টেম না মিললে, গাড়ি চলবে না। দুর্ঘটনার আগে যে মোবাইল দিয়ে গাড়িটি চালানো হচ্ছিল, তার সন্ধান পাওয়া যায় গত সোমবার। পরে সেই মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি দেখেই চালকের ছবি চিহ্নিত করা হয়। এর পর ওই এলাকার সিসি ক্যামেরা এবং আখতার পারভেজের বাড়ির সামনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন, ঘাতক গাড়ির চালক ছিলেন রাঘিব।
আরও পড়ুন: নাটকীয় মোড় জাগুয়ার-কাণ্ডে, আরসালান নন গাড়ি চালাচ্ছিলেন তাঁর দাদা! দাবি পুলিশের
এখানেই প্রশ্ন উঠছে, পুলিশ সব দিক খতিয়ে না দেখে, আত্মসমর্পণকারীকে কেন তড়িঘড়ি গ্রেফতার করতে গেল? পুলিশ সূত্রে খবর, দুর্ঘটনার দিন আরসালান পারভেজ তাঁদের আমির আলি অ্যাভেনিউয়ের বাড়িতেই ছিলেন। তাঁর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে তেমনটাই জানা গিয়েছে। আরসালানকে জেরা করেও জানা গিয়েছে, রাত ১১ থেকে আড়াইটে পর্যন্ত তিনি ওই বাড়িতেই ছিলেন।
আরও পড়ুন: জাগুয়ারের ‘ডেটা রেকর্ড’ উদ্ধার করলেন নির্মাতারা
পুলিশের দাবি, দুর্ঘটনার পর পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মামা মহম্মদ হামজাকে ফোন করে রাঘিব। পরের দিন বিকেল পর্যন্ত নাকি সে মামার সঙ্গেই ছিলেন। বিকেলের বিমানে তিনি দুবাই চলে যান। সেখানে গিয়ে রাঘিব জানতে পারেন এই ঘটনায় তাঁর ভাইকে আত্মসমর্পণ করানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুবাই থেকে কলকাতা ফিরে নার্সিংহোমে ভর্তি হয়ে যান রাঘিব। দুর্ঘটনার পর দুবাইয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ কেন আবার কলকাতায় এসে নার্সিংহোমে ভর্তি হতে গেলেন? কে তাঁকে পরামর্শ দিলেন? দুর্ঘটনার পর থেকে রাঘিব এবং তাঁর মামা গ্রেফতার হওয়া পর্যন্ত এখনও এ সব বিষয়ে পুলিশের কাছে থেকে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। এ দিন এক পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, ট্রাফিক পুলিশ, শেকসপিয়র থানা, হোমিসাইড বিভাগ, সায়েন্টিফিক উইং এবং সাইবার ক্রাইম থানার মিলিত প্রচেষ্টায় তদন্তের কিনারা করা গিয়েছে। তবে এখনও অনেক কিছু জানার রয়েছে। গত কয়েক ঘণ্টায় আরসালান পারভেজ পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তিনিও এই ঘটনায় তাঁর দাদা জড়িত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু কেন তাঁকে আত্মসমর্পণ করানো হল, সে বিষয়ে অবশ্য তিনি মুখ খোলেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy