—ফাইল চিত্র
মিড-ডে মিলের সয়াবিনের বস্তায় ছাপা ছিল ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচীর একটি ঠিকানা। বারাসত-২ নম্বর ব্লকের একটি স্কুলে এনে সেই বস্তা খোলার পরে কর্তৃপক্ষ দেখেন, সয়াবিনের প্যাকেটে ছাপা রয়েছে কলকাতার ক্যানাল সার্কুলার রোডের ঠিকানা! সেই সয়াবিন আসলে কোথা থেকে এসেছে, সেই জবাব কিন্তু পাননি শিক্ষকেরা।
বারাসতের দু’নম্বর ব্লকের বিভিন্ন স্কুল থেকে নিম্নমানের মিড-ডে মিলের সামগ্রী পাওয়ার পরে অভিভাবকদের ক্ষোভের মুখে পড়ে স্কুলগুলির দাবি, মিড-ডে মিল তাদের বণ্টন করার কথা থাকলেও ১২ নম্বর ও ১৪ নম্বর দফায় ছোলা, ডাল এবং সয়াবিন— এই তিনটি সামগ্রী বিডিও অফিসের নির্ধারিত ডিলারের থেকে স্কুলগুলিকে সংগ্রহ করতে বলা হয়। ওই দুই দফাতেই ছোলা, ডাল এবং সয়াবিন নিম্নমানের মিলেছে বলে অভিযোগ।
মিড-ডে মিলে নিম্নমানের খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের খবর বুধবার সামনে আসার পরে বৃহস্পতিবার হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন স্কুলের কাছে নির্দেশ পৌঁছয়, পরবর্তী ‘অর্ডার’ না আসা পর্যন্ত মিড-ডে মিলের কোনও খাদ্যসামগ্রী যেন না-কেনা হয়।
কিন্তু কেন বিডিও অফিস থেকে ওই দুই দফায় খাদ্যসামগ্রী বণ্টনের দায়িত্ব স্কুলের বদলে অন্য সরবরাহকারীদের দেওয়া হয়েছিল? তার কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। বিডিও অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায় শুধু বলেন, “কেন খাদ্যসামগ্রীর মান খারাপ হল, তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে স্কুলগুলির উচিত ছিল আমার কাছে সরাসরি অভিযোগ জানানো। তারা যে বলছে বিডিও অফিস থেকে নির্ধারিত ডিলারদের থেকে ছোলা, সয়াবিন কিংবা ডাল নিতে বলা হয়েছে, সেই তথ্য ঠিক নয়।”
এক প্রধান শিক্ষকের পাল্টা দাবি, “ওঁরা তো সরকার মনোনীত ডিলার। ছোলা, সয়াবিন, ডাল কেনার
টাকা তো স্কুলকে দেওয়া হয়নি! তা হলে ওই খাদ্যসামগ্রী স্কুল কার থেকে সংগ্রহ করবে?”
উত্তর ২৪ পরগনার স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষিকাদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি অব হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সাধারণ সম্পাদক সমীর ঘোষ বলেন, “বারাসত-২ ছাড়াও বনগাঁ, স্বরূপনগর-সহ বিভিন্ন ব্লকে নিম্নমানের খাদ্যসামগ্রী হাতে পেয়েছে স্কুলগুলি। পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে, সরকার যে টাকা বরাদ্দ করছে, তাতে নামী সংস্থার খাদ্যসামগ্রী পাওয়ার কথা।”
কিন্তু যাদের হাত ঘুরে এসেছে ওই সব নিম্নমানের খাদ্যদ্রব্য, দেখা যাচ্ছে, তারাও দায় ঠেলেছে অন্যের উপরেই। একটি নথিতে দেখা যাচ্ছে, ১৪তম দফা বণ্টনের আগে গত ১২ মে বিডিও-র দফতর থেকে কিরণশঙ্কর দে নামে এক ডিস্ট্রিবিউটরকে ছোলা, ডাল, সয়াবিন সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কিরণবাবুর ছেলে সুরজিৎ বলেন, “আমার খাদ্যসামগ্রীর গুদাম রয়েছে। কোনও কোনও স্কুলও এসে আমার থেকে জিনিস নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওই সব মালপত্র ন্যাকঅফ (ইন্ডিয়া) নামে একটি সোসাইটি থেকে এসেছিল। বিডিও-র অফিস থেকে তাদের বলা হয়েছিল মালপত্র আমাদের কাছে পাঠাতে।”
ন্যাকঅফ (ইন্ডিয়া) নামে ওই সোসাইটির কাছে খাদ্যদ্রব্যের নিম্নমান নিয়ে জানতে চাইলে সেখানকার স্টেট ম্যানেজার পুলকরঞ্জন বসু বলেন, “আমাদের কাছে এ নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। যাদের থেকে মালপত্র পেয়েছি, তাদের সঙ্গে কথা বলব।”
তবে কারা পাঠালেন এই নিম্নমানের খাদ্যসামগ্রী? তা নিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন স্কুলগুলির কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy