Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪

ঝাঁপ রোধের দাওয়াই কই

দেশের প্রবীণতম মেট্রো কলকাতা। কিন্তু যাত্রী নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারে তারা এখনটাই পিছিয়ে পড়ছে। মেট্রোয় আত্মহত্যার খবর আটকে দিয়েই এই প্রবণতা কমানো সম্ভব বলে তাদের বক্তব্য। যেখানে দিল্লি গেট বসিয়ে আত্মহত্যা কমাতে উদ্যোগী হয়েছে, সেখানে কলকাতার তেমন কোনও পরিকল্পনা নেই।

সুরক্ষা: আত্মহত্যা ঠেকাতে দিল্লি মেট্রোয় বসতে চলেছে এই গেট।

সুরক্ষা: আত্মহত্যা ঠেকাতে দিল্লি মেট্রোয় বসতে চলেছে এই গেট।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৪৪
Share: Save:

দেশের প্রবীণতম মেট্রো কলকাতা। কিন্তু যাত্রী নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারে তারা এখনটাই পিছিয়ে পড়ছে। মেট্রোয় আত্মহত্যার খবর আটকে দিয়েই এই প্রবণতা কমানো সম্ভব বলে তাদের বক্তব্য। যেখানে দিল্লি গেট বসিয়ে আত্মহত্যা কমাতে উদ্যোগী হয়েছে, সেখানে কলকাতার তেমন কোনও পরিকল্পনা নেই। কলকাতা মেট্রোয় ওই স্বয়ংক্রিয় গেট যে আপাতত বসানোর কোনও ভাবনা নেই, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এই মেট্রোয় নয়, নতুন গেট হবে নতুন মেট্রো প্রকল্পে।’’ মেট্রোর দাবি, এই ধরনের ঘটনা প্রচার হওয়ার জন্যই নাকি ঝাঁপ রোগের প্রবণতা বাড়ছে। তাই এ বার থেকে ওই খবর আর বাইরে বলা হবে না। এমনকী, সংবাদ মাধ্যমকেও নয়!

লাইনে ঝাঁপ দেওয়ার প্রবণতার শিকার দিল্লিও। কিন্তু সেখানে লাইনে ঝাঁপ বন্ধ করতে এ বার উদ্যোগী হয়েছে দিল্লি মেট্রো কর্পোরেশন। কয়েকটি স্টেশনে পরীক্ষামূলক ভাবে বসানো হচ্ছে বৈদ্যুতিক দরজা। প্ল্যাটফর্মের উপর দিয়ে লাগানো হচ্ছে ওই দরজা, যা ট্রেন ঢোকার পরেই শুধু খুলবে। সম্পূর্ণ সয়ংক্রিয় ওই দরজাগুলি বাকি সময় থাকবে বন্ধ। ফলে ট্রেন ঢোকার সময়ে কেউ চাইলেও প্ল্যাটফর্ম থেকে লাইনে ঝাঁপাতে পারবে না।

দিল্লি মেট্রোর সামান্য অংশ রয়েছে ভূগর্ভে। যাত্রাপথের বেশির ভাগ অংশই উড়ালপুলের উপর দিয়ে। সম্প্রতি ওই উড়ালপুলে উঠে এক জন ঝাঁপ দেন। এর পরে উঁচু উড়ালপুলের উপরে উঠেও যাতে কেউ ঝাঁপাতে না পারে, তার ব্যবস্থাও নিতে শুরু করছে দিল্লি মেট্রো। মেট্রোর যাত্রাপথের (উড়ালপুলের) প্রায় ৮০ কিলোমিটার অংশে লোহার বেড়া লাগানোর কাজ শুরু করেছে কতৃর্পক্ষ। দিল্লি মেট্রোর আধিকারিক অনুজ দয়াল বলেন, ‘‘এখানে যে হারে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে, তাতে যাত্রী নিরাপত্তার জন্যই ওই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

তবে দিল্লি মেট্রোর চেয়ে কলকাতা মেট্রোয় লাইনে ঝাঁপের সংখ্যা অনেক বেশি। রবিবার পর পর দু’টি ঝাঁপের ঘটনা ঘটে। প্রথমটি এসপ্ল্যানেড ও পরেরটি গীতাঞ্জলি স্টেশনে। দু’টি ঘটনাতেই দুই যুবক ট্রেনের সামনে ঝাঁপিয়েছিলেন। কিন্তু চালক বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে ইমার্জেন্সি ব্রেক কষায় তাঁরা বেঁচে যান। দু’টি ঘটনাতেই বিপর্যস্ত হয় ট্রেন চলাচল।

ঝাঁপ দেওয়া যে কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না, তা মেট্রোর ঝাঁপ দেওয়ার সংখ্যা দেখলেই স্পষ্ট হবে। মেট্রো সূত্রের খবর, এ পর্যন্ত কলকাতা মেট্রোতে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ৩১৬ জন। ১৬০ জনকে বাঁচানো গিয়েছে। বিজ্ঞাপন, নাটক, ঘোষণা সবই হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না। এর আগে অনেকবার দিল্লি মেট্রোর মতো প্ল্যাটফর্মে স্বয়ংক্রিয় গেট বসানোর পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছিল মেট্রো। কিন্তু ওই পরিকল্পনা খাতায় কলমেই রয়ে গিয়েছে। অথচ দিল্লি মেট্রো ওই স্বয়ংক্রিয় গেট বসাতেই ফল মিলেছে। স্টেশনে ট্রেন ঢুকতেই হুড়মুড় করে ট্রেনের গায়ে আছড়ে পড়ছে না ভিড়। এবং আটকানো গিয়েছে ঝাঁপও।

অন্য বিষয়গুলি:

Metro Suicide Remedy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE