যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুন্ডু (বাঁ দিকে)। স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডু (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় সৌরভ চৌধুরী নামে এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবারই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডু। সেই অভিযোগপত্রে তিনি খুনের অভিযোগ করেছিলেন। সঙ্গে লিখেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরী সম্পর্কে কিছু কথা। পুলিশের কাছে জমা দেওয়া সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই যাদবপুরের প্রাক্তনী এবং হস্টেলের আবাসিক সৌরভকে গ্রেফতার করেছে যাদবপুর থানার পুলিশ।
পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে রামপ্রসাদ জানিয়েছেন, তাঁর দুই পুত্র। স্বপ্নদীপ এবং রত্নদীপ কুণ্ডু। বড় ছেলে উচ্চমাধ্যমিকের পর গত ৩ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে স্নাতক স্তরে ভর্তি হয়। প্রথমে স্বপ্নদীপ বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থাকার সুযোগ পায়নি বলেও অভিযোগপত্রে জানান রামপ্রসাদ। পুলিশকে তিনি আরও জানিয়েছেন, গত ৩ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একটি চায়ের দোকানে তাঁর সঙ্গে সৌরভের আলাপ। আবাসিক না হয়েও ‘গেস্ট’ হিসাবে হস্টেলে যে থাকা যায়, সে কথা তিনি সৌরভের মাধ্যমে জানতে পারেন বলে দাবি করেছেন রামপ্রসাদ। তাঁর দাবি, সৌরভই মনোতোষ নামে আরও এক ছাত্রের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন স্বপ্নদীপের। মনোতোষ থাকেন ১০৪ নম্বর রুমে। স্বপ্নদীপের থাকার ব্যবস্থা হয় ৬৮ নম্বর রুমে। রামপ্রসাদ অভিযোগপত্রে লিখেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়েরই দুই ছাত্র সৌরভ চৌধুরী (প্রাক্তন) এবং মনোতোষ মণ্ডল (সোশিওলজি, দ্বিতীয় বর্ষ)-এর মাধ্যমে আমার ছেলে হস্টেলের ৬৮ নম্বর ঘরে থাকার সুযোগ পায়। ঘরটি এ-২ ব্লকের তিন তলায়। ৬ অগস্ট থেকে ছেলে হস্টেলে থাকা শুরু করে।”
মৃত ছাত্রের বাবা অভিযোগ করেছেন, শেষ বার স্বপ্নদীপ মাকে ফোন করে কেঁদে ফেলেছিলেন। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ। আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে এসেছে সেই অভিযোগপত্র। স্বপ্নদীপের বাবা অভিযোগপত্রে লিখেছেন, ‘‘আমার ছেলে গত রবিবার ৪ অগস্ট থেকে হস্টেলে থাকা শুরু করে। এর পর আমার সঙ্গে ওর ফোনে কথা হয়। ও খুব চাপে আছে। এখন বলতে পারবে না। বাড়ি গিয়ে বলবে। এর পর বুধবার (৭ অগস্ট) রাত সাড়ে ৮টা-৯টা নাগাদ স্বপ্নদীপ আমাকে ফোন করে বলে, ‘আমার খুব ভয় করছে। আমাকে হোস্টেল থেকে এখনই নিয়ে যাও।’ এর পর ওর সঙ্গে ফোনে কথা হয়নি।’’ অভিযোগপত্রে স্বপ্নদীপের বাবা উল্লেখ করেছেন, ‘‘অন্যদের ফোন থেকে ফোন করে আমাদের সঙ্গে কথা বলে। ও খুব অস্থির ছিল। আমার স্ত্রীর সঙ্গে ছেলের কথা হয়। ছেলে মাকে বলে যে, তোমার সঙ্গে আমার অনেক কথা আছে। তখন ছেলে খুবই আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় ছিল এবং ওর কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। তার পর রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ আমার স্ত্রীকে ওখান থেকে এক জন ফোন করে জানায় যে, আমার ছেলে উপর থেকে পড়ে গিয়েছে। তার পর আমার ছেলে মারা যায়।’’
অভিযোগপত্রের শেষে যাদবপুরের প্রাক্তনী সৌরভের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন স্বপ্নদীপের বাবা। লিখেছেন, ‘‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সৌরভের নেতৃত্বে হস্টেলের অন্য ছেলেরা আমার বড় ছেলেকে অত্যাচার করে হস্টেলের উপর থেকে নীচে ফেলে মেরে দেয়। আমি ওদের বিরুদ্ধে আইনত কঠোর ব্যবস্থা চাই।’’
ইতিমধ্যে এই ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। সম্মিলিত অপরাধের ধারাতেও মামলা হয়েছে। সৌরভকে শনিবার আলিপুর আদালতে হাজির করানো হবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের এ-২ ব্লকে থাকা বেশ কয়েক জন আবাসিককে জিজ্ঞাসাবাদও করছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy