Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪

মায়ের সঙ্গই কি গুড়িয়াকে নিষ্ঠুর করে তোলে?

পরদিন সকালে ঊর্মিলাদেবীর দেহ পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করার সময়ে এই গুড়িয়াই ঘটনাস্থলে থেকে মা ডিম্পলের সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল।

কণিকা ঝুন্ড ওরফে গুড়িয়া।

কণিকা ঝুন্ড ওরফে গুড়িয়া।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৩
Share: Save:

নিজের হাতে খাবার এনে ঠাকুরমাকে খাইয়েছিল সে। আর তার কিছু ক্ষণ পরে সেই নাতনিই ঠাকুরমার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাঁকে খুন করার কাজে সাহায্য করেছিল। শুধু তাই নয়, খুনের পর বাইরে এসে টিক-টকে ভিডিয়ো করে পোস্টও করে সে। গড়িয়াহাটের গরচা রোডের প্রৌঢ়া ঊর্মিলাদেবী ঝুন্ডের খুনে অভিযুক্ত তাঁরই বড় নাতনি কণিকা ঝুন্ড ওরফে গুড়িয়ার পরপর এই কার্যকলাপ দেখে তাজ্জব গোয়েন্দারাও!

শুধু তাই নয়। পরদিন সকালে ঊর্মিলাদেবীর দেহ পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করার সময়ে এই গুড়িয়াই ঘটনাস্থলে থেকে মা ডিম্পলের সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। যে কান্না দেখে পড়শি থেকে শুরু করে অনেকেই ভেবেছিল, ‘আহা! বাবা-হারা মেয়েটা ঠাকুরমাকে এত কম বয়সে হারিয়ে ফেলল!’ কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টা। পুলিশের তদন্ত শুরু হতেই সামনে আসে চমকে দেওয়ার মতো তথ্য।

ঊর্মিলাদেবীর প্রিয় বড় নাতনি গুড়িয়া নিজেই সাহায্য করেছে তাঁকে খুন করতে! খুনের পরে সৌরভ ঠাকুরমার ধড় থেকে মাথা আলাদা করে। সেই ছিন্ন গলার থেকে সোনার হার ধুয়ে নিয়ে গুড়িয়া নিজের গলায় পরে বাড়ি ফেরে। এমনকি তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে খুনের পরে বাড়ি গিয়ে সে সৌরভের রক্তমাখা প্যান্ট ছাদে নিয়ে পুড়িয়েও দেয়।

গুড়িয়ার ছোট কাকা বলরাজ কুমার ঝুন্ড রবিবার জানান, ছয় নাতি-নাতনির মধ্যে গুড়িয়াই ছিল ঊর্মিলাদেবীর প্রিয়। আর কেউ কিছু পাক আর না পাক, গুড়িয়াকে আলাদা করে সব কিছু দিতে বলতেন তিনি। বিশেষ করে ২০১৪ সালে বড় ছেলে মনদীপ মারা যাওয়ায় গুড়িয়ার প্রতি টান আরও বেড়ে গিয়েছিল তাঁর। ওই নাতনির সব খরচ মেটাতে বলরাজের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঊর্মিলাই দিতেন। আর গুড়িয়ার সব আবদারও ছিল ‘দাদির’ কাছে। এক সময়ে শ্রীশিক্ষায়তনের পড়ুয়া গুড়িয়া অষ্টম শ্রেণিতে দু’বার অকৃতকার্য হওয়ায় তাকে ন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি করানো হয়। বলরাজ জানান, বর্তমানে সেখানেই দশম শ্রেণির পড়ুয়া সে।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, গ্রেফতারের পরেও কিন্তু কান্না বা অনুতপ্ত হওয়ার কোনও লক্ষ্মণ দেখা যায়নি গুড়িয়ার মধ্যে। বরং তার নির্লিপ্তভাব দেখে তাঁরা নিজেরাই তাজ্জব হয়ে যাচ্ছেন। বছর আঠারোর কিশোরীর মধ্যে এত নিষ্ঠুরতা এল কী ভাবে? মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলেন, ‘‘কোনও রকম চাওয়া তৎক্ষণাৎ না পেলে প্রতিহিংসা আসে। হতে পারে এই কিশোরী তেমন কিছু থেকেই এ ধরনের কাজ করছে! তা ছাড়া মায়ের সঙ্গে থাকতে থাকতে তাঁর ছায়াও হয়তো পড়েছে মেয়েটির মধ্যে।’’ জয়রঞ্জন রামের বক্তব্য, ‘‘কোনও অভিমান বা রাগ ছাড়া এ ধরনের প্রতিহিংসা আসে না। কোন পরিস্থিতিতে মেয়েটির এই আচরণ, সেটা কথা না বলে বোঝা যাবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy