আরজি করে ভাঙচুরের ঘটনা। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ভাঙচুর চালানোর নেপথ্যে আসল কী উদ্দেশ্য ছিল, তা নিয়ে এখনও ধন্দে কলকাতা পুলিশ। সেই রাতের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও সন্ধান চলছে। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হয়, চারতলার সেমিনার হল ভাঙাই হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল। সেই আবহেই বুধবারের রাতের ভাঙচুরের একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই ভিডিয়োতে এক জনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সেমিনার হল চল, চল...’’ (যদিও ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। সেই ভিডিয়ো প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেছেন, ‘‘সেমিনার হলে যাওয়ার কারও ইচ্ছে ছিল কি না, এমন কিছু পাওয়া যায়নি।’’
আরজি করে জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার হলই এখন তদন্তকারীদের কাছে যত চিন্তার বিষয়। গত শুক্রবার এই সেমিনার হলেই এক মহিলা চিকিৎসকের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ উঠেছে, সেখানেই তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। সেই ঘটনাস্থল সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে উঠেছে প্রশ্ন। পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই। যদিও পুলিশ বার বার দাবি করেছে, সেমিনার হল সুরক্ষিত। কোনও প্রমাণ লোপাট হয়নি। সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে সে কথা জানানোও হয় কলকাতা পুলিশের তরফে।
বুধবার মধ্যরাতে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন মেয়েরা। আরজি করের সামনেও মেয়েদের মিছিল পৌঁছয়। তাতে পুরুষেরাও ছিলেন। সেই সময়েই তাণ্ডব চালানো হয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। ভাঙচুর আন্দোলনকারীদের মঞ্চেও। বাদ যায়নি পুলিশের কিয়স্ক এবং ফাঁড়ি। ভাঙা হয় পুলিশের গাড়িও। সেই তাণ্ডবের একাধিক ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। তার মধ্যে একটি ভিডিয়ো নিয়েই যত প্রশ্ন। সেই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, এক জন হাতে রড নিয়ে ভাঙচুর চালাচ্ছেন। সেখানেই এক জনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘চল চল সেমিনার হলে চল...।’’
হামলাকারীরা জরুরি বিভাগের তিনতলা পর্যন্ত উঠে ভাঙচুর চালান। কিন্তু সেমিনার হলে পৌঁছতে পারেননি। তবে কি হামলাকারীদের লক্ষ্য ছিল সেমিনার হল? প্রমাণ লোপাট করতেই হামলা? শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘সেমিনার হলে যাওয়ার উদ্দেশ্য কারও ছিল কি না, তা এখনও জানা যায়নি। কেউ এখনও স্বীকার করেনি এ ব্যাপারে।’’ তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আরজি করে হামলা-কাণ্ডে ধৃতদের মধ্যে থাকা নাগবাজারের সৌমিক দাস ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন, বুধবার রাতে আরজি কর হাসপাতালের সামনে দিয়ে যে মিছিল যাচ্ছিল, সেই মিছিলে তিনিও ছিলেন। সেই মিছিল থেকে আরজি করে ঢুকে পড়েছিলেন। হাসপাতালে তাণ্ডবের দৃশ্য দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এর পর তিনি আবেগের বশেই ভাঙচুর চালান। সে দিনের হামলার নেপথ্যে কি শুধু ‘আবেগ’ ছিল, না কি অন্য কোনও কারণ তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
ওই হামলার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করতেই কি জরুরি বিভাগকে ‘টার্গেট’ করা হয়েছিল? এ নিয়ে শুক্রবার হাই কোর্টে নতুন করে একটি মামলা হয়। সেই মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আদালত। পাশাপাশি, আদালত জানিয়েছে, তদন্তের স্বার্থে যে কোনও দিন, যে কোনও সময়ে আরজি করের জরুরি বিভাগের চারতলায় সেমিনার হল ঘুরে দেখে আসতে পারেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy