আশ্রয়: খেতে বসেছেন ফুটপাতবাসীরা। সোমবার, হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজে। নিজস্ব চিত্র
করোনা-সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে শহরের প্রায় একশো জন ভবঘুরেকে ফুটপাত থেকে তুলে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে ঘরে। লকডাউনের সময়ে হাওড়ায় বাছাই করা দু’টি কলেজ চত্বর হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই ভবঘুরেদের অস্থায়ী ঠিকানা। কিন্তু বদ্ধ ঘরে থাকতে মন সায় দেয় না তাঁদের। অভিযোগ, কেউ পাঁচিল ডিঙিয়ে পালাচ্ছেন, কেউ অফিসঘরের তালা ভেঙে কম্পিউটার ভাঙচুর করছেন। কেউ আবার কলেজের খাতাপত্র জোগাড় করে ‘পড়াশোনা’য় ব্যস্ত। সব মিলিয়ে ফুটপাত থেকে তুলে আনা ভবঘুরেদের নিয়েই এখন ঘোর বিপাকে হাওড়া পুরসভা ও পুলিশ।
করোনাভাইরাস ঠেকাতে হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজ ও দালালপুকুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ওই ভবঘুরেদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে হাওড়া পুরসভা। দু’টি কলেজে থাকা একশো জনেরও বেশি ভবঘুরের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় থানা ও এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলরদের হাতে। হাওড়া পুরসভার পক্ষ থেকে ওই ভবঘুরেদের মাথাপিছু ১০০ টাকা-সহ দেওয়া হয়েছে নতুন শতরঞ্চি, চাদর, বালিশ, তেল, সাবান ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সামগ্রী। হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, নরসিংহ দত্ত কলেজে থাকা ৫৫ জন এবং দালালপুকুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে রাখা ৫২ জন ভবঘুরের জন্য সকাল-বিকেল চা-বিস্কুট ছাড়াও দুপুরে ও রাতে ভাত, ডাল, সয়াবিনের তরকারি ও এক দিন অন্তর ডিম দেওয়ার বন্দোবস্ত হয়েছে।
কিন্তু এত কিছুর পরেও চার দেওয়ালের মধ্যে ওই ভবঘুরেদের আটকে রাখা মুশকিল হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন দেখভালকারীরা। নরসিংহ কলেজের ভবঘুরেদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ২২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এত কিছু ব্যবস্থা করার পরেও ওঁরা থাকতে চাইছেন না। দু’দিন আগে চার জন পাঁচিল ডিঙিয়ে পালিয়ে যান। পুলিশ তাঁদের তাড়া করে ধরে এনেছে।’’ এ ছাড়াও রাতে কলেজের বিভিন্ন ঘরের তালা ভেঙে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ। এঁদের সামলাতে কলেজ চত্বরে সর্ব ক্ষণ পড়ে থাকা দলের ২০ জন কর্মী রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। পুলিশও রয়েছে, তবে মাত্র এক জন।
আরও করুণ অবস্থা দালালপুকুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের। সেখানে রাখা ভবঘুরেদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর দেবাংশু দাসের অভিযোগ, দিনের বেলা তেমন ঝামেলা না করলেও রাত বাড়লেই শুরু হচ্ছে তাঁদের ‘উপদ্রব’। কলেজের একাধিক ঘরের তালা ভেঙে ফেলেছেন ওই ভবঘুরেদের মধ্যে কয়েক জন। অফিসঘরে ঢুকে কম্পিউটারের তার ছিঁড়ে দিয়েছেন। এমনকি কলেজের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বিছানায় ছড়িয়ে বসে তাঁদের মধ্যে কাউকে কাউকে বলতে শোনা গিয়েছে— ‘‘এটা কলেজ। আমি পড়াশোনা করব।’’ কলেজের নিরাপত্তাকর্মীদের অভিযোগ, সোমবার সকালে কল ভেঙে দেন ওই ভবঘুরেরা। ফলে রান্নাঘরে জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
দেবাংশুবাবু বলছেন, ‘‘পুলিশও এঁদের সামলাতে পারছে না। ছাদের দরজার তালা ভেঙে ছাদে উঠে যাচ্ছেন। বলছেন, নীচে গরম তাই ছাদে থাকবেন। অথচ প্রতিটি ঘরেই ফ্যানের ব্যবস্থা আছে।’’
এ নিয়ে হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন যে, ওই কলেজ দু’টিতে পুলিশকর্মী মোতায়েন করা আছে। কোনও গন্ডগোলের খবর পেলে তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কথা বলে ওই ভবঘুরেদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন। তবে হাওড়ার পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ বলছেন, ‘‘ওই দু’টি জায়গায় কয়েক জন মানসিক রোগীকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাঁরাই মূলত গন্ডগোল করছেন। আমরা তাঁদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy