Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
West Bengal Lockdown

‘কারিগরেরাই তো দেশে, মিষ্টি বানাবে কে!’

মঙ্গলবার শহর কলকাতায় মিষ্টির দোকান খোলার পরে অনেক বিপণিতেই ক্রেতাদের লাইনে ছিল সামাজিক দূরত্বের শৃঙ্খলা।

রাজ্য সরকারের নির্দেশমতো খুলেছে মিষ্টির দোকান। মঙ্গলবার, বেলগাছিয়ায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

রাজ্য সরকারের নির্দেশমতো খুলেছে মিষ্টির দোকান। মঙ্গলবার, বেলগাছিয়ায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৪৫
Share: Save:

রাজ্য প্রশাসনকে সহৃদয়তার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছেন! কিন্তু সকলের নিরাপত্তার স্বার্থে এখনই দোকান খুলতে রাজি হচ্ছেন না শহরের অনেক নামকরা মিষ্টির দোকানের কর্ণধারেরা। উত্তর কলকাতার সিমলেপাড়ার নামজাদা সন্দেশ-স্রষ্টার বড় কর্তা প্রতীপ নন্দী বলছেন, ‘‘কারিগরেরাই তো দেশে, মিষ্টি বানাবে কে! শুনেছি, নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ হলেও বেশির ভাগেরই প্রথম দিকে কোনও লক্ষণ বোঝা যায় না। তাই এই সঙ্কটে তাঁদের ফিরিয়ে এনে এখনই সন্দেশ তৈরি করাটা ঝুঁকির হয়ে যাবে।’’

মঙ্গলবার শহর কলকাতায় মিষ্টির দোকান খোলার পরে অনেক বিপণিতেই ক্রেতাদের লাইনে ছিল সামাজিক দূরত্বের শৃঙ্খলা। তবু সতর্ক থাকতেই কেউ কেউ এখনই দোকান খুলতে রাজি হননি। প্রতীপবাবু বলছেন, ‘‘জীবন অনেক বড়। ব্যবসা পরেও থাকবে। ১৫ এপ্রিলের পরে সিদ্ধান্ত নেব।’’ বাস্তবে মিষ্টি বিক্রির সময়ে কিছু কিছু দোকানে কর্মচারীদের মুখে-হাতে মাস্ক, গ্লাভস দেখা গেলেও গাদাগাদির ভিয়েন ঘরে সামাজিক দূরত্বের সতর্কতা বিধি কত দূর মেনে চলা সম্ভব, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। তাই খাটালে দুধের অপচয় রুখতে রাজ্যে মিষ্টির দোকানগুলিকে বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ছাড় দিলেও অনিশ্চয়তা পুরোপুরি ভাবে দূর হয়নি। নামী মিষ্টি-স্রষ্টা ধীমান দাশও লকডাউনের শহরে ধর্মতলায় বড় বিপণি খুলবেন না বলে জানিয়ে বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু পাড়ার ছোট মিষ্টির দোকানগুলিই খুলতে বলেছেন।’’

তবে বহু মিষ্টির দোকানে এখনও গরহাজির কারিগরেরা। ভিন্ জেলা থেকে তাঁদের ফিরিয়ে এনে ফের মিষ্টি-কারবার শুরু করার ‘বিচক্ষণতা’ নিয়েও সঙ্গত প্রশ্ন রয়েছে। বৌবাজারের নামী সন্দেশ-স্রষ্টা বা চন্দননগরের কড়া পাকের সাবেক প্রতিষ্ঠানও তাই এখনই দোকান খুলে ফেলার পক্ষে নয়।

তবে মিষ্টির স্বাদ পেলে বাঙালি ঝাঁপাবে না, তা কি হয়! দুপুরে রক্ষণাত্মক মেজাজে চার ক্যান দুধের আম-দই, সন্দেশ, রসগোল্লা সাজিয়ে ভবানীপুর, লেক গার্ডেন্স, কসবায় বিপণি খুলেছিল দক্ষিণ কলকাতার নামী মিষ্টি ব্র্যান্ড। এক ঘণ্টাতেই শো-কেস ফাঁকা।

টলিউডের জনৈক নায়ক-প্রযোজকও সময় মতো মিষ্টির খবর নিয়েছেন। গার্ডেনরিচে পাড়ার প্রিয় মিষ্টির দোকান থেকে পছন্দের ‘মালাই টোস্ট’ আনিয়ে নিয়েছেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্যামবাজারে সুগারের রোগী এক প্রবীণ বললেন, ‘‘ইনসুলিন নিই। দুম করে কখনও সুগার কমে বলেও ফ্রিজে মিষ্টি রাখতেই হয়।’’

অনিয়মের অভিযোগও টুকটাক মিলেছে। বেলগাছিয়ার একটি মিষ্টির দোকান খোলা সকাল ১০টা থেকেই। বিকেল ৪টের পরেও কিছু দোকান খোলা থেকেছে। মদের দোকানের মতো সামনে ঝাঁপ বন্ধ রেখে, অসময়ে পাশের ছোট দরজা ফাঁক করে কিছু জায়গায় যে মিষ্টি ব্যবসা চলেছে, সেই অভিযোগও পেয়েছে পুলিশ। দুধের অপচয় রুখতে মিষ্টি তৈরি শুরু হলেও কিছু দোকানে লাড্ডু, খাস্তা কচুরি, সোনপাপড়িরাও স্বমহিমায়।

দক্ষিণ কলকাতার নামী মিষ্টির দোকানের কর্ণধার সুদীপ মল্লিক বা রিষড়ার সাবেক মিষ্টি-স্রষ্টা অমিতাভ মোদকের মতে, ১৫ দিন বাদেও পরিস্থিতি কী থাকবে তা এখনই বোঝা শক্ত। তাই কম করে হলেও ব্যবসা চালু না-করাটা ঝুঁকির হবে। শ্যামপুকুরের নামী রসগোল্লা-কারবারি

লকডাউনের সময়ে দোকানেই থেকে যাওয়া কয়েক জন কারিগরকে নিয়ে কাজ করছেন। সীমিত পরিকাঠামোর দরুণ আপাতত শুধু সন্দেশেই মনোনিবেশ করেছেন তাঁরা। প্রবীণ মিষ্টি-কারবারি নিতাই ঘোষের কথায়, ‘‘চার ঘণ্টা মিষ্টি ব্যবসা চালু করে দুধের বিপুল অপচয় মিটবে কি না জানি না! তবে সরকারি দুগ্ধ নিগম বা জাতীয় মিল্ক গ্রিড অসংগঠিত খাটালের এই বিপদে মাঠে নেমে বাড়তি দুধের সদ্ব্যবহার করতে পারত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Sweets Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy