গত ডিসেম্বরে এই রোগের যাচাইয়ের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছেছে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ। ফাইল ছবি।
রাজ্যে থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ কিছু কর্মসূচি স্থির করে দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। গত মাসে রাজ্যের ৩৬টি থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটের (টিসিইউ) কাজের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, হাতে গোনা ‘টিসিইউ’ ছাড়া আর কেউই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কিংবা তার কাছাকাছি পৌঁছতে পারেনি। কাজের গতির এমন হাল কেন, সেই ব্যাখ্যা চেয়ে সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ এবং স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধিকর্তাকে চিঠি দিয়েছেন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের পশ্চিমবঙ্গের অধিকর্তা।
থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে গতি আনতে বৃহস্পতিবার সমস্ত ‘টিসিইউ’-এর মেডিক্যাল অফিসার ও ব্লাড ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের নিয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজনও করেছিল স্বাস্থ্য ভবন। এক কর্তার কথায়, ‘‘১৯৯৫ সাল থেকে রাজ্যে থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। প্রতি মাসে কতগুলি থ্যালাসেমিয়া যাচাই (স্ক্রিনিং) এবং শিবির করতে হবে, সেই লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দেওয়া রয়েছে। তা পূরণ করতে পারলে খুব সহজেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক ও রোগীকে চিহ্নিত করা সম্ভব।’’ জানা যাচ্ছে, প্রতিটি‘টিসিইউ’-তে মাসে দু’হাজারজনের রোগ যাচাই এবং অন্তত আটটি করে শিবিরকরার কথা। কিন্তু গত বছরের সামগ্রিক এবং শেষ মাসের রিপোর্ট আশানুরূপ নয়।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বাস্তবায়নে কর্মীদের একাংশের সদিচ্ছার ঘোরতর অভাব রয়েছে। এর উপরে বড় ধাক্কা খেয়েছে অতিমারির দু’টি বছর। অনেক জায়গায় এখনও সরকারি প্রচার বন্ধ। অধিকাংশই জানেন না যে, তিনি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত না কি বাহক, সেটা জানা যেতে পারে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই।
করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় পড়ুয়াদের ওই রোগের যাচাই বন্ধ ছিল। সেটা তেমন শুরু হয়নি। ‘টিসিইউ’-এ শুধু প্রসূতিদের যাচাই হচ্ছে। রাজ্যে রক্তদান এবং থ্যালাসেমিয়াপ্রতিরোধ আন্দোলনের কর্মী দীপঙ্কর মিত্রের মতে, ‘‘সরকারের একার পক্ষে থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সমাজের সব সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। সকলে মিলে সমাজের তৃণমূল স্তরে পৌঁছতে হবে। আসলে জনগোষ্ঠীর সঙ্গে থ্যালাসেমিয়ার বিষয়টিকে সে ভাবে যুক্ত করতে পারেনি সরকার। যেটা জরুরি।’’
গত ডিসেম্বরে এই রোগের যাচাইয়ের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছেছে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ। সেখানে ৩২০ জন বাহক এবং ১২ জন রোগী চিহ্নিত হয়েছেন। এর পরেই রয়েছে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ, বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ। ওই সব ‘টিসিইউ’-তে গত মাসে ১৩০০-র উপরে রোগীর যাচাই হয়েছে। সেই কাজে একশোর নীচে রয়েছেকালনা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল (৯২), আসানসোল জেলা হাসপাতাল (৩৬), রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ (১৭)।
অন্য দিকে, শিবির আয়োজনের লক্ষ্যমাত্রা (৮টি) পার করেছে ইমামবাড়া জেলা হাসপাতাল (৪৪),জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল (৯), কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ (১১), স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন (৯), বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল (৯), কোচবিহার মেডিক্যাল (৯) ও ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ (৯)। আটটি করে শিবির করেছে তমলুক, বসিরহাট জেলা হাসপাতাল এবং মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ। একটিও শিবির করেনি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ, বারাসত, ঝাড়গ্রাম, আসানসোল জেলা হাসপাতাল, বারুইপুর মহকুমা, কালনা ও জঙ্গিপুর সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। মালদহমেডিক্যাল একটিই শিবিরের আয়োজন করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy