ছবি: সংগৃহীত।
কোভিড-যোদ্ধা তাঁরাও। তবে তাঁদের মূল কাজটা করতে হয় আড়ালে থেকেই। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মীদের কার কী উপসর্গ রয়েছে, সেই খবর রাখা থেকে শুরু করে পুলিশকর্মীদের করোনা পরীক্ষা করানো, রিপোর্ট আসার আগে ওই পুলিশকর্মীকে কোয়রান্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্যদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো— সবই করে চলেছেন তাঁরা। শুধু এ টুকুই নয়, হাসপাতালে ভর্তি থাকা পুলিশকর্মীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর রাখা, প্রয়োজনে তাঁদের অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানোর মতো গুরুদায়িত্বও রয়েছে কলকাতা পুলিশের ওয়েলফেয়ার সেলের আধিকারিক ও পুলিশকর্মীদের কাঁধেই।
বাহিনীর করোনা আক্রান্ত সদস্যদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্ত দিক দেখভালের দায়িত্বে থাকা এই সেলে রয়েছেন কলকাতা পুলিশের যুগ্মকমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার, এসি (হেডকোয়ার্টার্স) শোভেন বন্দ্যোপাধ্যায়, তিন জন সাব-ইনস্পেক্টর সার্জেন্ট, ১২ জন কনস্টেবল এবং এক জন হোমগার্ড। তবে এই কাজের সঙ্গে সঙ্গে সম্প্রতি তাঁদের কাঁধে এসেছে আরও একটি নতুন দায়িত্ব— সাধারণ মানুষের জন্য প্লাজ়মা দানের ব্যবস্থা করা। বাহিনীর যে সব পুলিশকর্মী করোনা মুক্ত হয়েছেন, তাঁরা কী ভাবে সাধারণ মানুষকে প্লাজ়মা দান করতে পারেন, সেই দিকটিও দেখাশোনা করছে এই সেল। কলকাতা পুলিশের কাছে প্লাজ়মা চেয়ে আবেদন আসা মাত্র প্রথমেই আবেদনকারীর রক্তের গ্রুপ দেখে নিচ্ছেন এই সেলের পুলিশকর্মীরা। তারপরে কোভিড জয়ী পুলিশকর্মীদের মধ্যে থেকে যাঁরা তাঁকে প্লাজ়মা দিতে পারবেন, তাঁদের প্লাজ়মা দান করতে পাঠানো হচ্ছে। সে কাজও করা হচ্ছে লালবাজারের এই ওয়েলফেয়ার সেলের মাধ্যমেই।
এই সেলের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ২০৩৪ জনের মধ্যে বেশির ভাগ পুলিশকর্মীকেই সুস্থ করে বাড়ি ফেরানো গিয়েছে। এটাই খুশির খবর। তবে তাঁদের মধ্যে ন’জনকে হারিয়েছি আমরা। বিশেষত কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের ইকুইপেন্ট সেলের অভিজ্ঞান মুখোপাধ্যায়ের মতো অফিসারের মৃত্যু এঁদের নাড়িয়ে দিয়েছে। আবার দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে কোনও অফিসার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে যুদ্ধ জয়ের আনন্দ পেয়েছেন ওয়েলফেয়ার সেলের পুলিশকর্মীরা।’’
লালবাজার সূত্রের খবর, মার্চ মাসের শেষ থেকে কলকাতা পুলিশে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরেই এই সেল তৈরি করা হয়। থানার মতোই সকাল, বিকেল বা রাতে ভাগাভাগি করে ডিউটি করেন এই সেলের ১২ জন কনস্টেবল এবং এক জন হোমগার্ড। তবে অফিসার, ইনস্পেক্টর, এসি— এঁদের অবশ্য কাজের কোনও বিরতি নেই। গত কয়েক মাসে বহু পুলিশকর্মী করোনায় আক্রান্ত হলেও এই সেল সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে, যে দিন ৫১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। শিয়ালদহ ট্র্যাফিক গার্ডের কনস্টেবল দিলীপ সর্দারকে নিয়ে আবার রীতিমতো টানাপড়েন পোহাতে হয়েছিল সেলকে। কিডনির সমস্যা নিয়ে এনআরএসে ভর্তি দিলীপবাবুর করোনা রিপোর্ট প্রথমে নেগেটিভ আসায় তাঁকে এমআরবাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শ্বাসকষ্টের জন্য। কোভিড হাসপাতাল বলে সেখানে ভর্তি না নিলেও হাসপাতাল কে বলে কয়ে গাড়িতে দিলীপবাবুর জন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল সেলকে। যদিও পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে দিলীপবাবুর রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে এবং তিনি মারা যান।
তবে এত কিছুর পরেও বেশির ভাগ পুলিশকর্মীকে সুস্থ করে বাড়ি ফেরানোর পুরো কৃতিত্বটাই এই সেলের, এমনটাই মনে করছে কলকাতা পুলিশের বড় অংশ। এমনকি পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাও বলছেন, “করোনার জন্য তৈরি এই সেলের কর্মীদের কঠোর পরিশ্রমের ফলে আমরা বেশির ভাগ পুলিশকর্মীকে সুস্থ করে বাড়ি ফেরাতে পেরেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy