Advertisement
E-Paper

‘সব হারিয়েও আমরা এখন ভিআইপি’

বুধবার সন্ধ্যায় বস্তিতে আগুন লাগার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখানে যান রাজ্যের মন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক শশী পাঁজা এবং উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভস্মীভূত: হাজার বস্তির ছাই সরিয়ে চলছে হারানো জিনিসের খোঁজ। বৃহস্পতিবার, বাগবাজারে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ভস্মীভূত: হাজার বস্তির ছাই সরিয়ে চলছে হারানো জিনিসের খোঁজ। বৃহস্পতিবার, বাগবাজারে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৩২
Share
Save

দেশে হঠাৎ ঘোষণা হওয়া লকডাউনের সময়ে তাঁদের বেশির ভাগেরই পরিচয় ছিল ‘পরিযায়ী শ্রমিক’। কী ভাবে তাঁরা নিজের শহরে ফিরবেন, কী ভাবে করোনা পরীক্ষা হবে তা নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না বিশেষ কারওরই। তবে বুধবারের আগুনে বাগবাজারের হাজার বস্তি সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ার পরে তাঁরাই রাতারাতি ‘ভিআইপি’!

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বস্তির বাসিন্দাদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির তৎপরতা দেখে সেখানকার বাসিন্দা নিমাই হাঁসদা বললেন, ‘‘কাল পর্যন্ত কেউ দেখতে আসতেন না। এখন রাতারাতি সকলেই আমাদের রাজা করে দিতে এসেছেন। ভোটের হিসেব আমরাও বুঝি। সব হারিয়েও আমরা এখন ভিআইপি!’’ আর এক বাসিন্দা সোনালি প্রামাণিকের বক্তব্য, ‘‘দায়ে পড়ে পাশে থাকতে এসেছেন নেতারা!’’

বুধবার সন্ধ্যায় বস্তিতে আগুন লাগার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখানে যান রাজ্যের মন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক শশী পাঁজা এবং উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। গিয়েছিলেন মন্ত্রী সাধন পাণ্ডেও। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাতে সেখানে যান রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ ফিরহাদকে নিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি ঘর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাসের পাশাপাশি পুরসভা থেকে বাসিন্দাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করে দেওয়া হবে বলে জানান।

দুপুর দেড়টায় সেখানে গিয়ে বসে পড়েন বিজেপির

উত্তর কলকাতার এক নেতা। ৩টের পরে পৌঁছন বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। হাজির হন নানা রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় চলা একাধিক সংগঠনের লোকজন। তাঁদের কেউ বাসিন্দাদের

খাওয়ানোর মাঝেই বললেন, ‘‘কারা পাশে থাকল বুঝে নিলেন তো!’’ কেউ মাইকে ঘোষণা চালিয়ে গেলেন, ‘‘কে বেশি দিল, সেটা নয়। কারা সারা বছর পাশে থাকল, সেটাই বিষয়।’’ স্থানীয় বিধায়কের নাম করে ঘোষণায় বলা হল, ‘‘সমস্ত দুর্দশা মেটালেন যিনি, তাঁকে যেন ভুলে না যাই! সব সময়ে তিনিই ত্রাতা।’’ বস্তির বাসিন্দাদের অস্থায়ী ঠিকানা, বাগবাজার উইমেন্স কলেজের গেটে দলবল নিয়ে বসা এলাকার পুর কোঅর্ডিনেটর বাপি ঘোষ আবার বললেন, ‘‘এঁদের বুঝিয়ে লাভ নেই, এঁরা নিজের ভালটা বোঝেন। আর জানেন এঁদের ভাল কে করে!’’

যাঁদের জন্য এই ‘পাখি পড়ানোর’ উদ্যোগ, তাঁদেরই এক জন করুণা দাঁ বললেন, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে, আমাদের জন্য এত লোক এসেছে। বরং না এলেই ভাল থাকতাম। কাল অনেককে নষ্ট খিচুড়ি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু

উপায় নেই, তাই খিদে নিয়েই ফের খাবারের লাইনে দাঁড়িয়েছি।’’ পোড়া নথিপত্র দেখাতে ব্যস্ত সমীর গায়েন বললেন, ‘‘লকডাউনে বাইরের রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের কেউ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেননি। আমরা ভুলিনি। এখন কাগজপত্র পুড়ে গিয়েছে দেখে ভয় বাড়ছে। ভোট মিটলেই আর কেউ দেখতে আসবেন না কেমন আছি।’’

এক নেতার দেওয়া কম্বল ছেঁড়া বেরোনোয় এক মহিলা আবার চিৎকার জুড়লেন, ‘‘তুলে দেওয়ার জন্য আগুন লাগিয়ে তার পরে ছেঁড়া কম্বল দিচ্ছে! সস্তা রাজনীতি চলছে।’’ কিন্তু আপনাদের ঘিরে দখলদারির অভিযোগ তো বহুদিনের? মহিলা বললেন, ‘‘সামনে ভোট। এই পরিস্থিতিতে দখলদারেরও পাকা বাড়ি হয়ে যায়। আমাদের হবে না কেন?’’

Baghbazar Fire Accident

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}