Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: ‘আছে কিন্তু নেই’-এর হেঁয়ালিতে জমেছে রাসবিহারী

দীর্ঘদিনের তৃণমূলের ঘাঁটি এই কেন্দ্র ঘুরলে বোঝ যায় কিছু এলাকায় পরিষেবা সেই অর্থে না পৌঁছনো নিয়ে চাপা ক্ষোভ রয়েছে।

দেবাশিস কুমার।

দেবাশিস কুমার।

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৪৪
Share: Save:

একটি আসন, যেটি ধারাবাহিক ভাবে জিতে এসেছে তৃণমূল। শুধু গত পুরসভা নির্বাচনে ওই বিধানসভা আসনের অন্তর্গত ৮৬ এবং ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড গিয়েছিল বিজেপির দখলে। গত লোকসভা ভোটে (২০১৯) সেই বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। অথচ এলাকা ঘুরলে তাদের যে দৃশ্যত খুঁজে পাওয়া যায়, তা-ও নয়। এটা কেন? এই হেঁয়ালিই এ বাররাসবিহারীর নির্বাচনে বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে।

মিশ্র আর্থ-সামাজিক কাঠামোয় দাঁড়িয়ে রাসবিহারী বিধানসভা কেন্দ্রের ত্রিনয়নের একটি যদি হয় কালীঘাট মন্দির, তবে বাকি দু’টি নয়নের একটি হল অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা আদিগঙ্গার ধারের বসতি,
গোপালনগর বস্তি, দুর্গাপুর ও সাহাপুরের মতো কয়েকটি কলোনি, মসজিদপাড়া প্রভৃতি। অন্যটি হল যোধপুর পার্ক, গড়িয়াহাট, হিন্দুস্থান পার্ক, সিংহী পার্কের মতো বর্ধিষ্ণু অঞ্চল। এই মিশ্র আর্থ-সামাজিক গঠনের মধ্যে বিজেপির অবস্থান ঠিক কোথায়? কী ভাবে তাদের ওই উত্তরণ? উত্তরণ তো বটেই। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে এই বিধানসভা কেন্দ্রে চতুর্থ স্থানে থাকা বিজেপি গত
লোকসভায় এগিয়ে ছিল ৫৪২১ ভোটে।

আর সেই সাফল্যকেই পাখির চোখ করে বিজেপি এমন এক জনকে এ বার এখানে প্রার্থী করেছে, যিনি ধারে-ভারে তাদের তালিকায় তারকা।বিজেপির কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্ব যাঁদের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন, তাঁদের এক জন এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সুব্রত সাহা। সুতরাং, রাসবিহারী কেন্দ্র বিজেপির কাছে মর্যাদার লড়াই। অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ এবং বর্তমানে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য সুব্রতবাবুর জন্ম কলকাতায়। পড়াশোনাপুরুলিয়ার সৈনিক স্কুল ও কলকাতার সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজে। চাকরি সূত্রে রাজ্যের বাইরে থাকা সুব্রতবাবু শুধু ৮২-৮৫, এই তিন বছর ছিলেন ডুয়ার্সের বিনাগুড়িতে। এর বাইরে নিজভূমের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে শুধুই বেড়াতে আসা। সেই অর্থে এই কেন্দ্র কেন, আশপাশেও তেমন পরিচিতি নেই তাঁর। এ সব নিয়ে আদৌ কি চিন্তিত প্রার্থী? তা জানতে বহু চেষ্টা করেও প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ মেলেনি। তবে স্থানীয় বিজেপি নেতার আত্মবিশ্বাস, “এই সব কোনও সমস্যাই নয়। গত কয়েক বছরে এই কেন্দ্রে গজিয়ে ওঠা আবাসনের ভোট এ বারেও আমাদেরই থাকবে। এ ছাড়াও বস্তি বা মধ্যবিত্ত এলাকা থেকেও ভোট আসবে।’’ বিজেপির দক্ষিণ কলকাতা জেলার সাধারণ সম্পাদিকা শশী অগ্নিহোত্রী বলেন, “মোদীজীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে সরকার গঠন হোক, মানুষ সেটা চেয়েছিলেন। তার প্রতিফলন ছিল ওই ফল। এ বার ওই ব্যবধান আরওবেড়ে জয় আসবে। কারণ, সিন্ডিকেট রাজ, মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে সব স্তরের মানুষ বিরক্ত। কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের তোষণ না করে উন্নয়নে সবার সমান অধিকার, এই বার্তাই আমাদের জয় আনবে।”

সুব্রত সাহা।

সুব্রত সাহা।

যদিও এ সব দাবি নস্যাৎ করে দিচ্ছেন তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস কুমার। কারণ, দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল সভাপতি তথা গত দশ বছর ধরে কলকাতা পুরসভার মেয়র ইন কাউন্সিল (এম আই সি) থাকা প্রার্থী মনে করেন, এই কেন্দ্রের মানুষের আস্থা আগের মতোই থাকবে তৃণমূলের উপরে।পাশাপাশি, দীর্ঘদিন ধরে পুর পরিষেবা দেওয়ার মাধ্যমে মানুষের পাশে তাঁর থাকাটাও জয়ের ফ্যাক্টর হিসেবে উঠে আসবে বলে আত্মবিশ্বাসী তিনি।

প্রসঙ্গত, বিধানসভা ভোটে এ বারই প্রথম প্রার্থী হয়েছেন দেবাশিসবাবু। ১৯৯৮-এর উপনির্বাচন থেকে রাসবিহারী কেন্দ্রে টানা জিতে আসা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে এ বার ভবানীপুর কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, তিনি নিজে ভবানীপুর ছেড়ে গিয়েছেন নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে। তাই রাসবিহারী থেকে দাঁড় করিয়েছেন দেবাশিসবাবুকে। এই প্রার্থী নির্বাচনে তাঁর দীর্ঘদিনের ইচ্ছেকেও যেন খানিকটা মর্যাদা দেওয়া হল। বিধানসভা ভোটে লড়াই করার ইচ্ছেটা দেবাশিসবাবু গত বারই জানিয়েছিলেন। সে বার হয়ে ওঠেনি। এ বার তাই সুযোগ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর থেকে পিচ পরখ করতে নেমে পড়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। সকাল-বিকেল ঘুরে ঘুরে প্রচারে ফাঁক রাখতে চাইছেন না সদ্য ষাট পেরোনো দেবাশিসবাবু।

এম আই সি থাকার সুবাদে একশো শতাংশ শহুরে কেন্দ্রের পুর পরিষেবার জন্য এলাকার বাসিন্দা দেবাশিসবাবুকে অনেকটাই কাছ থেকে চেনেন স্থানীয়েরা। এলাকার মানুষদের সঙ্গে কথা বলেও তেমন ছবিই উঠে আসে। রোজকার সমস্যায় তাঁকে পাশে পাওয়া যায়। ধরাছোঁয়ার বাইরে যে তিনি কখনওই নন, তেমনটাই মনে করেন স্থানীয়েরা। তা ছাড়াও, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং
বারোয়ারি পুজোর সঙ্গে জড়িত থাকার সুবাদে দেবাশিস কুমার সামাজিক মুখ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। পূর্ববর্তী বছরগুলির ফলাফল এবং প্রার্থীর নিজস্ব পরিচিতি, এই দুইয়ের উপরেই ভরসা রাখছেন দলীয় নেতৃত্ব।

আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়

আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়

অন্য দিকে, গত বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা কংগ্রেস প্রার্থী আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় এ বারও লড়ছেন বামেদের পাশে নিয়েই। বিশ্ববিদ্যালয় স্তর থেকে রাজনীতি করে আসা স্থানীয় বাসিন্দা, বছর চৌত্রিশের আশুতোষ অন্যদের তুলনায় নবীন। পেশায় ওষুধের ব্যবসায়ী আশুতোষের ভরসা তাঁর স্থানীয় পরিচিতির উপরেই। আমপান ও লকডাউন পর্বে মানুষের দরজায় এবং আদিগঙ্গার ধারের ঘিঞ্জি গলিতে পৌঁছে যেতে পারাকেই প্লাস পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন তিনি নিজে ও সংযুক্ত মোর্চা। আশুতোষ বলছেন, “ভোটবাক্সে এর জন্য ইতিবাচক সাড়া দেবেন মানুষ।”

দীর্ঘদিনের তৃণমূলের ঘাঁটি এই কেন্দ্র ঘুরলে বোঝ যায় কিছু এলাকায় পরিষেবা সেই অর্থে না পৌঁছনো নিয়ে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। যেমন, গোবিন্দপুর বস্তির বাসিন্দা তারক সরকার বলছিলেন, “এখানের অনেকটা অংশে পরিশোধিত জলই পৌঁছয়নি।” রয়েছে টিপু সুলতানের স্মৃতি বিস্মৃত মসজিদপাড়া। ওয়াকফ বোর্ডের জমিতে অতি ঘিঞ্জি বস্তি এলাকায় এত বছরেও কোনও নিকাশি ব্যবস্থা না থাকাই বাসিন্দাদের বড় মাথাব্যথা। সঙ্গে রয়েছে বিরোধীদের ছোট্ট খোঁচা। “স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ শোভনদেববাবু। কিন্তু দেবাশিসবাবুর প্রভূত সম্পত্তির উৎস কী, এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়”— দাবি বিরোধীদের।

যা শুনে তৃণমূল প্রার্থীর বক্তব্য, “পরিষেবা যেটুকু বাকি আছে, জিতে তা দেওয়ার চেষ্টা করব। মসজিদপাড়ার সমস্যার কথা জানি। ওয়াকফ বোর্ডের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হবে। ওই জমিতে পুরসভা একা কিছু করতে পারবে না।” পাশাপাশি তাঁর উত্তর, “আমি ব্যবসায়ী। সম্পত্তি তো থাকবেই। এ বছর ৪২ লক্ষ টাকা আয়কর দিয়েছি। আমার কী কী আছে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েওছি।”

মসজিদপাড়ার কবরের উপরেই তৈরি এক ফালি ঘরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বৃদ্ধ রাজেশ সাউ বলে ওঠেন, “কত ভরসা ভাঙতে দেখলাম গত ষাট বছরে। কিন্তু আমাদের ভরসার কি গুরুত্ব দেওয়া হয়? না হলে ফি সপ্তাহে এলাকায় আচমকা ঢুকে পড়া নোংরা জলে কী করে জীবন বয়ে যায়।”

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC CPM West Bengal Assembly Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy