বাড়ির মধ্যে জল ঢুকে যাওয়ায় এ ভাবেই বসবাস বাগুইআটির জোড়ামন্দির শাস্ত্রীবাগান এলাকায়। ছবি: সুমন বল্লভ
বৃহস্পতিবার রাতের বৃষ্টিতে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল বিধাননগর-দমদমে, ভেসেছিল নিউ টাউনও। দু’দিন পরে, শনিবারও ওই সমস্ত এলাকার জমা জল পুরোপুরি নামেনি। আর তাই ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘ঘরের মধ্য জল ঢুকেছে। দু’দিন ধরে এই অবস্থা। এই যন্ত্রণা আর কত দিন ভোগ করতে হবে?’’ স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকার খাল বা নিকাশি পরিকাঠামোর বেহাল দশাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই বৃষ্টি।
এই অভিযোগ পুরোপুরি না মানলেও খাল এবং নিকাশি সংক্রান্ত পরিকাঠামোর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা অবশ্য মেনে নিচ্ছে ওই সমস্ত এলাকার পুর প্রশাসন। দক্ষিণ দমদমে জল জমার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ওই পুরসভার মুখ্য প্রশাসক বলেন, ‘‘বাগজোলা খালের নাব্যতা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, মেট্রো প্রকল্পের কারণে বাগজোলা খাল সাধারণ নিকাশি নালায় পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে মেট্রোকে আগেও জানানো হয়েছে, ফের চিঠি দেওয়া হবে। মূলত সেই কারণে শনিবারও পুরোপুরি জল সরানো যাচ্ছে না।’’
দু’দিন ধরে ঠায় জল দাঁড়িয়ে পাতিপুকুর আন্ডারপাসের নীচেও। ডুবে যাওয়া বাসটিকেও সরানো যায়নি। দক্ষিণ দমদম পুরসভার মুখ্য প্রশাসক জানান, আন্ডারপাসগুলিতে জল জমা সংক্রান্ত বিষয়ে ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। পাতিপুকুর আন্ডারপাসের তলায় যে নালাটি সরাসরি বাগজোলা খালের সঙ্গে যুক্ত, তার অবিলম্বে সংস্কার প্রয়োজন। তিনি বলছেন, ‘‘আন্ডারপাসের নীচে ম্যানহোল খুলে জল বার করতে গিয়ে উল্টো বিপত্তি হয়েছে। বাগজোলা খাল উপচে যাওয়ায় নিকাশি নালাটিও ভরে গিয়েছে। তাই ম্যানহোল খোলায় জল ব্যাক-ফ্লো করে আন্ডারপাস ভরিয়ে দিয়েছে।’’ তবে পুর এলাকার বাকি অংশে নিকাশির সমস্যা নেই বলে পুরসভা দাবি করলেও কালিন্দী, লেক টাউন, বাঙুর, বেদিয়াপাড়া-সহ বহু এলাকা এখনও জলমগ্ন।
রাজারহাট-গোপালপুরের বহু জায়গায় এ দিনও জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ দিন ওই সব এলাকা পরিদর্শনে যান পুর আধিকারিকেরা। সেখানে বেহাল নিকাশির কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে বিধাননগর পুরসভা। এর জন্য সমীক্ষা করে একটি খসড়া প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে পুরসভা। পুর প্রশাসনের একাংশ জানাচ্ছেন, অতিবৃষ্টিতে এলাকার খাল উপচে গিয়েছে ঠিকই। তবে পরিকাঠামো সংস্কারের পাশাপাশি খালে আবর্জনা ফেলা এবং দখলদারির মতো সমস্যার কথাও ভাবা হচ্ছে। স্থানীয় কংগ্রেস নেতা সোমেশ্বর বাগুই এ দিন বলেন, ‘‘এলাকার জল খালে ফেলতে বিকল্প ব্যবস্থা ভাবতে হবে। বর্তমান পরিকাঠামোর আমূল সংস্কার করা প্রয়োজন। খালের জলধারণ ক্ষমতাও বাড়াতে হবে।’’ ভিআইপি রোডের ধারের বাসিন্দাদের একাংশও জানাচ্ছেন, নগরোন্নয়নের কারণে সেখানে জলাশয়ের সংখ্যা ক্রমশ কমেছে। ফলে জমা জল দ্রুত সরাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে।
রাজারহাট-নিউ টাউনের বিধায়ক তথা বিধাননগর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তাপস চট্টোপাধ্যায় জানান, নিকাশি সংক্রান্ত সমস্যা চিহ্নিত করে সার্বিক পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিধাননগরের পুর প্রশাসক কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জল নামাতে প্রয়োজনীয় সব রকমের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জল নামতে শুরু করেছে। রাজারহাট-গোপালপুরের জন্য সুসংহত নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি করা হবে।’’
বাগজোলা খাল উপচে যাওয়ায় এখনও জলমগ্ন রয়েছে গোটা নিউ টাউন। তবে হিডকো এবং এনকেডিএ সূত্রের খবর, জল জমার কারণ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। জমা জলের কারণে নিউ টাউনের বলাকা আবাসনের কাছে ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। তাই সেটি কাজ করতে পারেনি। বাগজোলা খাল উপচে যাওয়ায় সিটি সেন্টার ২ সংলগ্ন পাম্পিং স্টেশনের পাম্প চালিয়েও কাজ হয়নি। প্রশাসনের একাংশ মনে করছেন, খালের নাব্যতা বৃদ্ধি কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে আগামী সপ্তাহে কারিগরি দিক থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার চেষ্টা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy