ভোট-পরবর্তী হিংসায় খুন হয়েছিলেন ছেলে। সেই মামলায় আদালতে ও বাড়ি থেকে সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ে বারকয়েক অসুস্থ হয়ে পড়েন পুত্রহারা মা। আদালতের নির্দেশে তাই নিহত বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের মা মাধবী সরকারের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিনই কাঁকুড়গাছির বাসিন্দা অভিজিৎকে খুন করা হয়েছিল। নারকেলডাঙা থানার এই মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে শিয়ালদহ আদালত থেকে মামলা গিয়েছে কলকাতা নগর দায়রা আদালতে। এখন সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। গত ২ এপ্রিল বাড়ি থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন মাধবী। বন্ধ হয়ে যায় সাক্ষ্য গ্রহণ। তার পরেই তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিবিআই-কে নির্দেশ দেয় আদালত।
গত ৮ এপ্রিল এসএসকেএমে মাধবীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সিবিআই ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সঙ্গে ছিলেন এক জন চিকিৎসক, এক জন নার্স, এক জন আয়া ও চিকিৎসা কর্মী। মাধবীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ছ’জন চিকিৎসকের মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি হয়েছিল। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট পরদিন আদালতে জমা দেয় সিবিআই।
আদালত সূত্রের খবর, সেই রিপোর্টে মাধবীর এমআরআই, সিটি স্ক্যান-সহ বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে বলা হয়েছে। পরবর্তী শুনানি ২১ এপ্রিল। ওই সমস্ত পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট সে দিন আদালতে জমা দিতে সিবিআই-কে বলা হয়েছে বলে আদালত সূত্রের খবর। মাধবীর বড় ছেলে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘মায়ের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। সমস্যা রয়েছে হাঁটাচলাতেও।’’ মাধবীর কথায়, ‘‘ছেলেকে হারিয়েছি। তার কাছে এই শারীরিক কষ্ট কিছুই নয়। অসুস্থ শরীরেই ছেলেকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে আইনি লড়াই চালাব।’’
এই মামলায় অভিযুক্ত ২০ জন। তাদের মধ্যে ১২ জন পলাতকের খবর দিলে ৫০ হাজার টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করে সিবিআই। এখনও পর্যন্ত ১৪ জন গ্রেফতার হয়েছে। তাদের মধ্যে কাজল দাস এবং শঙ্কর দাসের আইনজীবী সপ্তর্ষি ঘোষ বলেন, ‘‘মাধবী বাড়ি থেকে ভার্চুয়াল সাক্ষ্য দিচ্ছেন। সুস্থ হয়ে তিনি যাতে কোর্টে এসে সাক্ষ্য দেন, তার জন্য আদালতে মৌখিক আর্জি জানাই। আদালত তা খারিজ করে দেয়।’’
মাধবীর আইনজীবী শুভেন্দু সাহা বলেন, ‘‘মাধবী শারীরিক ভাবে অসুস্থ। তার উপরে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ে অভিযুক্তদের দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। এই অবস্থায় তাঁর পক্ষে আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়া সম্ভব নয়।’’ মাধবী এই মামলার প্রথম সাক্ষী। মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৩১।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)