Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
crime

‘জেরাঘর’-এর সামনে সিসি ক্যামেরা ছিল কি

কলকাতা পুলিশের তরফে বৃহস্পতিবার একটি নির্দেশিকা জারি করে সমস্ত থানা এবং ডেপুটি কমিশনারদের বলা হয়েছে, লক-আপ, সেরেস্তা-সহ বিভিন্ন জায়গার যথাযথ ভাবে সিসি ক্যামেরার নজরদারি রয়েছে কি না, তা নিয়মিত ভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৭:০৩
Share: Save:

থানার মধ্যে ঠিক কী কী ঘটেছিল? জেরা করার ঘরেই বা কী হয়েছিল? সিঁথি থানায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনার ১০ দিন পরেও এই সব প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর নেই লালবাজারের কাছে। এর মধ্যেই আজ, শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে মৃতের পরিবারের দায়ের করা মামলার শুনানি হওয়ার কথা। তার আগে মৃতের পরিবারের পক্ষের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ কিছু বলবে কী করে? মানবাধিকার কমিশন স্পষ্ট বলে দিলেও জেরা করার ঘরের সামনে তো কোনও সিসি ক্যামেরাই
রাখেনি পুলিশ।’’

কলকাতা পুলিশের তরফে বৃহস্পতিবার একটি নির্দেশিকা জারি করে সমস্ত থানা এবং ডেপুটি কমিশনারদের বলা হয়েছে, লক-আপ, সেরেস্তা-সহ বিভিন্ন জায়গার যথাযথ ভাবে সিসি ক্যামেরার নজরদারি রয়েছে কি না, তা নিয়মিত ভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। জয়ন্তনারায়ণবাবুর দাবি, ২০১৭ সালেও সিঁথি থানার মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল স্নেহময় দে নামে এক প্রৌঢ়ের। ওই মামলাতেও তিনি মৃতের পরিবারের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘বর্তমানে বিচারাধীন ওই মামলাতেও পুলিশের কাছে জেরার সময়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চেয়েছিল আদালত। পুলিশ নিজের মতো করে ওই ফুটেজের বেশ কিছু অংশ বাদ দিয়ে তা পেশ করেছিল। যাতে দেখা যায়, এক মহিলা পুলিশকর্মী স্নেহময়বাবুকে একটি প্রশ্ন করলেন আর তিনি পড়ে গেলেন। এটা হতে পারে না। পুলিশের বিরুদ্ধে সিসি ক্যামেরা নিয়ে কারচুপির বহু অভিযোগ রয়েছে।’’
গত ১০ ফেব্রুয়ারি সিঁথি থানাতেই জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে রাজকুমার সাউ নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তাঁর পরিবারের দাবি, চুরির ঘটনায় আসুরা বিবি নামে এক মহিলাকে প্রথমে আটক করে পুলিশ। পরে রাজকুমারকে থানায় ডেকে পাঠায় তারা। আসুরা প্রথমে জানিয়েছিলেন, পুলিশ রাজকুমারকে বুকে আর মুখে লাথি মেরেছে এবং বৈদ্যুতিক শক দিয়েছে। কিন্তু পরে তিনি বয়ান বদল করেন।

তথ্য-প্রমাণ লোপাটের আশঙ্কা করে জয়ন্তনারায়ণবাবু বলেন, ‘‘আমরা বিচারবিভাগীয় তদন্তের আর্জি জানাচ্ছি আদালতে। পুলিশ নিজেই যেখানে অভিযুক্ত, সেখানে পুলিশ তদন্ত করবে কী করে? মৃতের পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা এবং ঘটনাটিকে খুনের মামলা ধরে নিয়ে তদন্তের আর্জিও জানানো হবে।’’

এ দিকে, লালবাজারের হোমিসাইড শাখা সূত্রের দাবি, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে রাজকুমারবাবুকে মারধরের প্রমাণ মেলেনি। তবে থানার মধ্যে জেরার সময়েই যে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল, তা নিয়ে সংশয় নেই।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সিঁথির ঘটনার পরেই এ দিন ওই জরুরি নির্দেশিকা জারি করে লালবাজার। তাতে বলা হয়েছে, ডি কে বসু বনাম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ, গ্রেফতারি বা সাক্ষ্য গ্রহণ সংক্রান্ত স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। সেই মতো কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হলে বা গ্রেফতার করতে হলে আগে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করাতে হবে। গ্রেফতারি বা ডেকে পাঠানোর সময়ে আইন মেনে পদক্ষেপ করতে হবে। অবাঞ্ছিত বস্তু সঙ্গে নিয়ে কেউ যাতে হাজতে প্রবেশ করতে না পারেন, সে জন্য ওই ব্যক্তিকে ভাল করে তল্লাশি করতে হবে।

এর আগে এক মডেল-অভিনেত্রী রাতের কলকাতায় হেনস্থার শিকার হওয়ার পরে পুলিশ তাঁকে সাহায্য করেনি বলে অভিযোগ করেছিলেন। তার পরে প্রথম বার পুলিশকর্মীদের জন্য এসওপি বা ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর’ জারি করেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। মহিলাদের তরফে অভিযোগ পেলে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে তা দেখারও নির্দেশ দেন তিনি। সেই নির্দেশও মানতে বলা হয়েছে এ দিনের নির্দেশিকায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Sinthi Police Station Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy