তিরানব্বই বছর ধরে রোদ-জল-ঝড় ও দূষণের জেরে ক্ষয় শুরু হয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। ভিক্টোরিয়ার পরী বা ‘এঞ্জেল অব ভিকট্রি’ যে সুদৃশ্য ধবধবে চুড়োর উপরে দাঁড়িয়ে থাকত, ক্রমশ ফাটল ধরছে তাতেও। ফাঁকফোকর দিয়ে ভিতরে জল ঢোকার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। তাই ২০০৬-থেকে ঔপনিবেশিক আমলে তৈরি এই ‘হেরিটেজ ভবন’ সংস্কারের দাবি জানাচ্ছিলেন ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষ। অবশেষে এ বার জরা কাটিয়ে নতুন করে সেজে উঠতে চলেছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল।
ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষ জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে স্ট্যান্ডিং ফিনান্স কমিটি ভিক্টোরিয়ার সংস্কারের জন্য টাকা মঞ্জুর করে। গোটা সংস্কার পর্বে খরচ হবে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। জুলাইয়ে সংস্কারের কাজ শুরুও হয়েছে। চলবে ২০১৭ পর্যন্ত। তবে হেরিটেজ ভবন হওয়ায় ভিক্টোরিয়ার রূপ যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
ভিক্টোরিয়ার কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, শীত-গ্রীষ্মে তাপমাত্রার হেরফেরে মার্বেলের আকারে বদল ঘটে। যা যে কোনও স্থাপত্যের পক্ষে বিপজ্জনক। তাই বিভিন্ন ফাঁকফোকর সিল করে দেওয়া হচ্ছে। ভিক্টোরিয়ার ছাদের নীচে ‘হলোটাইলস’ বসিয়েও হাল ফেরানোর চেষ্টা চলছে। জয়ন্তবাবুর কথায়, “যে ভাবে সংস্কার হচ্ছে, তাতে আগামী ৪০ বছর ভিক্টোরিয়ার বয়স এক জায়গায় বেঁধে রাখা যাবে।”
জয়ন্তবাবু আরও জানিয়েছেন, হলোটাইলস তাপ শোষণ করে নেয়। তাই সূর্যের তাপে ছাদ গরম হলেও সেই তাপ ভিতরে ঢুকতে পারবে না। অতিবেগুনি রশ্মিও যাতে ঢুকতে না পারে সে জন্য থাকছে ব্যবস্থা। সঙ্গে গোটা ভবনের গায়ে মূলতানি মাটি ঘষে তার জেল্লা ফেরানোর কাজও শুরু হয়েছে। মূল ভবনের নীচে ২০ ফুট গভীর বেসমেন্টে যাতে নোনা না ধরে তাই সেখানে ‘ড্রাইওয়াশ’ করানো হচ্ছে।
আলো-হাওয়ার হেরফেরে মিউজিয়মের সংরক্ষিত নানা দ্রষ্টব্য বিশেষত চিত্রকলার সুরক্ষাও কর্তৃপক্ষের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সূর্যের আলোয় এগুলির ক্ষতি হতে পারে। ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষ জানান, মিউজিয়মে ৩৩ হাজারের বেশি নিদর্শনের সব ক’টি সামনে নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। অনেকগুলিই গুদামে পড়ে থাকে। ভবনের ভিতরে উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগে সেই সব ঠিক ভাবে সংরক্ষণ করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। ভিক্টোরিয়ার হল জুড়ে বসতে চলেছে নরম এলইডি আলো। এ ছাড়া কোন ঘরে কী ধরনের জিনিস রয়েছে তা মাথায় রেখে শীতাতপ ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
রক্ষণাবেক্ষণের এই পদক্ষেপের পাশাপাশি, পুস্তিকার মাধ্যমে ভিক্টোরিয়ার খুঁটিনাটি জানানোর দিকেও জোর দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। গড়া হচ্ছে ‘মিউজিয়ম শপ’। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও আপস করা হবে না। এ জন্য ভবন জুড়ে শক্তিশালী সিসিটিভি বসানো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy