Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Mahatma Gandhi

এ বাড়ির প্রার্থনায় জনসমাগম সামলাতে চলত বিশেষ ট্রেন

তথ্য বলছে, ১৯২৭-১৯৪৭ পর্যন্ত একাধিক বার এই বাড়িতে থেকেছেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী।

স্মৃতি: সোদপুরের সেই ‘দ্বিতীয় বাড়ি’। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

স্মৃতি: সোদপুরের সেই ‘দ্বিতীয় বাড়ি’। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:১৮
Share: Save:

এক সময়ে সকাল-সন্ধ্যায় ভেসে আসত প্রার্থনাসঙ্গীতের সুর।

আর এখন অহরহ ট্রেনের শব্দে খানখান হয়ে যায় গাছে ঘেরা বাড়িটির নিস্তব্ধতা। দেশ স্বাধীন হওয়া ইস্তক এই বাড়িতে এসেছেন বহু নেতা-ব্যক্তিত্ব। এ বাড়ির প্রার্থনায় যোগ দিতে আসা মানুষের ভিড় সামলাতে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল রেল কোম্পানিকে। এখন অবশ্য বছরের কয়েকটি দিনে কিছু মানুষের সমাগমে হয় স্মৃতিচারণা!

সেই সব অনুষ্ঠান, আলোচনায় আজও বেঁচে জাতির জনকের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ সোদপুর খাদি প্রতিষ্ঠান। তথ্য বলছে, ১৯২৭-১৯৪৭ পর্যন্ত একাধিক বার এই বাড়িতে থেকেছেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী। সোদপুরের এই বাড়ি আজও বহন করে চলেছে সুভাষচন্দ্র বসুর কংগ্রেস ত্যাগের সিদ্ধান্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা। ভারতের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ গাঁধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলোচনা করতে বারবার এসেছেন সোদপুরে। কংগ্রেসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সভাও হয়েছে এখানে।

সোদপুর স্টেশন সংলগ্ন সরকারি আবাসনের ভিতরে ওই বাড়ির ছাদ কংক্রিটের হলেও বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে টালির চালা। সামনে সাবেক উঠোন। বাগানের মাঝে রয়েছে গাঁধীর আবক্ষ মূর্তি। মোট ন’টি ঘর। প্রথমটিতে রয়েছে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর ব্যবহৃত চৌকি, চরকা। অন্য ঘরগুলিতে রয়েছে ওই বাড়িতে গাঁধীর সঙ্গে ভারতের প্রথম সারির নেতাদের বৈঠক এবং সাক্ষাতের সাদাকালো ছবি, সংবাদপত্রের কাটিং। বড় ঘরে রয়েছে ধুলোয় চাপা পড়া একাধিক তাঁত যন্ত্র। তাঁত ঘরের ছাদ থেকে নেমেছে লতানো গাছ। সারা বাড়ির দেওয়ালে বাসা বেঁধেছে উইপোকা।

যে বাড়ির আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে অবহেলা, তার শুরুটা কিন্তু হয়েছিল অনেক উৎসাহ নিয়ে। ১৯২৬ সালে সোদপুর খাদি প্রতিষ্ঠান গড়েন সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রিয় ছাত্র সতীশ বেঙ্গল কেমিক্যালের ম্যানেজার পদে থাকাকালীন বিভিন্ন জিনিস আবিষ্কার করেন। সে সময়ে দেশের বিভিন্ন কংগ্রেস অধিবেশনে দেশজ শিল্পের প্যাভিলিয়ন থাকত। সেখানে প্রিয় ছাত্রকে নিয়ে যেতেন প্রফুল্লচন্দ্র। গাঁধীর সঙ্গে ছাত্রের পরিচয়ও করিয়ে দেন তিনিই।

গাঁধীর পরামর্শেই বেঙ্গল কেমিক্যালের কর্মীদের দিয়ে চরকায় সুতো কাটা এবং কাপড় বোনার কাজ শুরু করেন সতীশচন্দ্র। কিছু দিন পরে নিজেই খাদি ও কুটির শিল্পের আশ্রম তৈরির পরিকল্পনা করেন তিনি। তৎকালীন সময়ে দু’লক্ষ টাকা দিয়ে সোদপুর স্টেশনের পাশে ৩০ বিঘা জমি কিনে গড়ে তোলেন খাদি প্রতিষ্ঠান। ১৯২৭ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানের ‘কলাশালা’র (হস্তশিল্প বিভাগ) উদ্বোধনে আসেন গাঁধী।

তখন থেকেই এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আত্মীয়তা হয় গাঁধীর। এর পরে বারবার গাঁধী সেখানে আসেন। তবে ১৯৩৯ সালের ২৭-২৯ এপ্রিল ছিল তার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিন দিন ধরে সেখানেই পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর উপস্থিতিতে কংগ্রেসের কার্যকরী কমিটির বিষয়ে সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন গাঁধী। সোদপুরের এই বাড়িতেই ২৯ তারিখ দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন কংগ্রেস সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসু।

১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরে সোদপুরের এই আশ্রমে ৫০ দিন কাটিয়েছিলেন গাঁধী। তখন প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় প্রার্থনাসভা বসত। তাতে যোগ দিতে আসা মানুষের ভিড় সামলাতে বিকেল ৪টে ১৫ মিনিটে শিয়ালদহ স্টেশনের আট নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে সোদপুরের বিশেষ ট্রেন ছাড়ত। ১৯৪৬ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি এখান থেকেই পদযাত্রা করে চৈতন্যদেবের স্মৃতি বিজড়িত পানিহাটির মহোৎসবতলা ঘাটে যান।

১৯৪৭ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো সোদপুর খাদি আশ্রমে গাঁধীর বক্তব্য রেকর্ড করে। স্বাধীনতার দিন দুয়েক আগে সোদপুর থেকেই বেলেঘাটায় গিয়েছিলেন গাঁধী। এর পরে অবশ্য তিনি সোদপুরে আসেননি।

পূর্ব ভারতে গাঁধীর সেই দ্বিতীয় বাড়ি এখন দেখভাল করে খাদি প্রতিষ্ঠান ট্রাস্ট। তার সদস্য তথা মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষক করছেন শেখর শেঠ। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য হেরিটেজ তালিকায় এই বাড়ির নাম রয়েছে। চেষ্টা করা হচ্ছে বাড়িটিতে সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sodepur Mahatma Gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy