প্রতীকী চিত্র।
জন্ম ইস্তক দ্বিতীয় হুগলি সেতু পার হননি দম্পতি। কিন্তু করোনা প্রতিষেধকের দ্বিতীয় টিকা তাঁরা নাকি নিয়েছেন গুজরাত থেকে। দ্বিতীয় টিকা নিতে গিয়ে কোউইন পোর্টাল থেকে বেরিয়েছে এমনই শংসাপত্র! আকাশ থেকে পড়েছেন ভাঙড়ের কাশীপুর থানা এলাকার রাজাপুরের বাসিন্দা গঙ্গাধর মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী মৌসুমী। যা সামনে আসার পরে ফের বিতর্কের মুখোমুখি দেশের প্রতিষেধক প্রদান ব্যবস্থা।
করোনা প্রতিষেধক নিয়ে জালিয়াতি, মৃত মানুষের নামে প্রতিষেধকের শংসাপত্র-সহ একাধিক বিভ্রাটের সাক্ষী থেকেছে দেশ। এ বার দ্বিতীয় টিকা বিভ্রাটে এ রাজ্যের দুই প্রাপকের সঙ্গে জড়িয়ে গেল গুজরাতের নাম। সেই রহস্য উদ্ঘাটন অবশ্য এখনও সম্ভব হয়নি। তার আগেই ওই দম্পতির প্রতিষেধক-ভাগ্যে আরও দু’টি জটিলতা যোগ হয়েছে। তা হল, পরে সরকারি শিবির থেকে দ্বিতীয় টিকা নিয়েও গঙ্গাধরের মেলেনি উপযুক্ত শংসাপত্র! আর মৌসুমীর হাতে আছে দ্বিতীয় টিকার দু’টি শংসাপত্র!
ঘটনাটা ঠিক কী? নিউ টাউনের বাসিন্দা সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তির গাড়ি চালান গঙ্গাধর। সোমনাথ জানান, সোমবার ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি গঙ্গাধরকে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় টিকা দিতে নিয়ে যান। তাঁর কথায়, ‘‘ওই হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, গঙ্গাধরের দ্বিতীয় টিকা গুজরাত থেকে নেওয়া হয়েছে! ওই হাসপাতাল তাই প্রতিষেধক দিতে পারবে না। শুনে অবাক হয়ে যাই।’’ গাড়িচালক গঙ্গাধর জানাচ্ছেন, একই ঘটনা ঘটেছে তাঁর স্ত্রী মৌসুমীর সঙ্গেও। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী রাজারহাটের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দ্বিতীয় টিকা নিতে যায়। সেখানে মৌসুমী আধার কার্ড দেখালেও প্রতিষেধকের রেকর্ড পাওয়া যাচ্ছিল না। ডিজিটাল রেশন কার্ড দিলে তার ভিত্তিতেই স্ত্রীকে দ্বিতীয় টিকা দেওয়া হয়।’’
এই মুহূর্তে মৌসুমীর কাছে দ্বিতীয় টিকার দু’টি শংসাপত্র রয়েছে! একটি রেজিস্ট্রিকৃত হয়েছে ২৩ সেপ্টেম্বর গুজরাতের আমদাবাদের একটি প্রাথমিক স্কুলে। অন্যটি, ২৫ সেপ্টেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার রাজারহাটে।
গঙ্গাধর বলেন, ‘‘ওই বেসরকারি হাসপাতাল যখন জানাল আমাকে আর প্রতিষেধক দেওয়া হবে না, খুব মুষড়ে পড়েছিলাম। গাড়ি চালাই, তাই সুপার স্প্রেডারদের তালিকায় পড়ি। দু’টি টিকা না নেওয়াটা আমার পক্ষে বিপজ্জনক! শেষে প্রতিষেধকের সরকারি শিবির থেকে অনুরোধ করে দ্বিতীয় টিকা নিই। তবে নতুন করে কোনও সার্টিফিকেট পাইনি।’’ গত ২৯ সেপ্টেম্বর সেই দ্বিতীয় টিকা নেন গঙ্গাধর। সোমনাথের দাবি, ‘‘ওই রাতে কোউইন পোর্টাল থেকেই আমরা মৌসুমীর গুজরাতে রেজিস্ট্রি হওয়া সার্টিফিকেটটি নামাই।’’
গুজরাত থেকে যে দু’টি শংসাপত্র রেজিস্ট্রি হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২৩ সেপ্টেম্বর আমদাবাদের বিরোচন নগর প্রাথমিক স্কুল থেকে বিধিবেন পটেল নামে এক কর্মী প্রতিষেধকের দ্বিতীয় টিকা দিয়েছেন গঙ্গাধর ও মৌসুমীকে। অথচ গঙ্গাধর জানাচ্ছেন, মৌসুমী রাজারহাটে প্রতিষেধক নিয়েছেন ২৫ সেপ্টেম্বর এবং গঙ্গাধর দক্ষিণ কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালে যান ২৭ সেপ্টেম্বর। অতএব তাঁদের দ্বিতীয় টিকা নিতে যাওয়ার আগেই তৈরি হওয়া এই জটিলতার কারণ বুঝতে পারছেন না কেউই। সেই সঙ্গে উঠছে প্রশ্ন, গুজরাত থেকে ওই দম্পতির ভাগের দ্বিতীয় টিকা তবে কার কাছে গেল?
এ রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁদেরও বোধগম্য হচ্ছে না। পাশাপাশি তাঁদের প্রশ্ন, শংসাপত্র ছাড়া এখান থেকেই বা গঙ্গাধর কী করে দ্বিতীয় টিকা পেলেন?
বিষয়টিকে ‘হিউম্যান এরর’ বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। মন্ত্রকের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এমন ঘটনার অভিযোগ আগে পাওয়া যায়নি। দু’জনের আধার কার্ডের নম্বর কাছাকাছি হলেও এমনটা ঘটতে পারে। ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে। ওই দম্পতির উচিত কো উইন পোর্টালে একটি অভিযোগ দায়ের করা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy