মুখ-বন্ধ: মাস্ক পরে গন্তব্যের পথে। ফাইল চিত্র
গত বছরের আগের বছর পশ্চিমবঙ্গে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ছিল এক লক্ষ চল্লিশ হাজার। ২০২০-র ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই সংখ্যা নেমেছে ৮০ হাজারে। আবার, ২০১৯ সালে শহর কলকাতায় যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা যেখানে ছিল ১৬ হাজার, ২০২০-তে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯,৯৭৫-এ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, গত বছরে শহর-সহ সারা রাজ্যে যক্ষ্মা আক্রান্তের পরিসংখ্যান কমার পিছনে অনেকটাই কাজ করেছে মাস্ক ব্যবহারের সুফল। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, যক্ষ্মা মূলত ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে নিঃসৃত ড্রপলেটের মাধ্যমে। এই মুহূর্তে করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে নাগরিকদের অনেকেই মাস্ক পরে রাস্তাঘাটে বেরোচ্ছেন। ফলে বাইরের বাতাসে ড্রপলেট বেরোনোর সম্ভাবনা বেশ খানিকটা কমেছে। সেই মাস্কই আবার কাজ করছে যক্ষ্মা ছড়ানোর প্রতিরোধক ঢাল হিসেবেও।
কলকাতা পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌমিত্র ঘোষ বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরের তুলনায় ২০২০ সালে শহর-সহ গোটা রাজ্যে যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা কমার পিছনে বিশেষ কোনও বৈজ্ঞানিক কারণ না থাকলেও ধরে নেওয়া যায়, নাগরিকদের একটা অংশ মাস্ক ব্যবহার নিয়ে সচেতন হওয়ার ফলে এটা সম্ভব হয়েছে।’’
গত বছরে যক্ষ্মা রোগী কমার পিছনে যে মাস্ক ব্যবহার অন্যতম একটি কারণ, তা মেনে নিয়েছেন বক্ষরোগ চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে, করোনা থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহারের জন্য যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা তুলনায় অনেক কমেছে। আমি গত অক্টোবর থেকে চেম্বারে যাচ্ছি। লক্ষ করেছি, নতুন রোগী এখনও পর্যন্ত এক জনও আসেননি।’’ আর এক বক্ষরোগ চিকিৎসক রাজা ধরের কথায়, ‘‘হাঁচি-কাশি থেকে যক্ষ্মা ছড়ায়। এ বার করোনা ঠেকাতে মাস্ক ব্যবহারের কারণে যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যাও যে কমেছে, তা বলাই যায়।’’
এক সময়ে খুবই সংক্রামক ছিল যক্ষ্মা। দেশ থেকে এই রোগ নির্মূল করতে ১৯৬২ সালে ‘ন্যাশনাল টিউবারকিউলোসিস প্রোগ্রাম (এনটিপি) চালু করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ১৯৯২ সালে বিশ্বে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়তে থাকে যক্ষ্মার দাপটও। ওই বছরে দেশে নতুন করে পরিবর্তিত প্রকল্পের নামকরণ করা হয় ‘রিভাইজ়্ড ন্যাশনাল টিউবারকিউলোসিস কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’ (আরএনটিসিপি)। পরে কেন্দ্রীয় সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে যক্ষ্মা নিরাময়ের লক্ষ্যে নয়া প্রকল্পের নামকরণ করেছে ‘ন্যাশনাল টিউবারকিউলোসিস এলিমিনেশন প্রোগ্রাম’ (এনটিইপি)।
রাজ্যে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। শহর কলকাতায় সেই দায়িত্ব রয়েছে কলকাতা পুরসভার কাঁধে। গত বছরে কলকাতায় যক্ষ্মা রোগী কমার পিছনে মূল মন্ত্র কী? যক্ষ্মা নিরাময় প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কলকাতা পুরসভার আধিকারিক চন্দ্রশেখর দাস বলেন, ‘‘লকডাউনের মধ্যেও শহরের ১৮০টি জায়গায় যক্ষ্মার চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা ছিল। বাড়িতে যে রোগীরা ছিলেন, তাঁদের কাছে নিয়মিত ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার দিকে যাতে খামতি না থাকে, তার জন্য প্রতিনিয়মিত নজরদারি চালানো হয়েছে।’’
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, যক্ষ্মা নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে শহরের ৬৩টি কেন্দ্রে। এ ছাড়া বাগবাজার, স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোড, মানিকতলা, হাজি মহম্মদ মহসীন স্কোয়ার, ট্যাংরা, আলিপুর, মনসাতলা, বোড়াল ও টালিগঞ্জে রয়েছে যক্ষ্মার ক্লিনিক। পাশাপাশি, কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডে পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও এই রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।
সরকারি ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে থাকা যক্ষ্মা রোগীদের নজরদারির দায়িত্বে রয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার প্রকল্প-অধিকর্তা ঈশিতা রায় বলেন, ‘‘লকডাউনের সময়ে আমরা নিয়মিত বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা যক্ষ্মা রোগীদের উপরে নজরদারি চালিয়েছিলাম। তাতে দেখা গিয়েছে, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের তুলনায় গত বছরে বেসরকারি হাসপাতালে যক্ষ্মা আক্রান্তের হার কমেছে।’’
যদিও মাস্ক ব্যবহারের সুফল এর পিছনে কাজ করেছে বলে পুরোপুরি মানতে চাননি চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী। তিনি বলেন, ‘‘এটা মনে রাখতে হবে, লকডাউন চলাকালীন করোনা সংক্রমণের ভয়ে অনেকে হাসপাতালমুখো হননি। তাঁদের মধ্যে কেউ যক্ষ্মা রোগী ছিলেন কি না, সেটাও কিন্তু খতিয়ে দেখা দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy