ফাইল ছবি
হাজারো প্রচার, বিতর্ক, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সত্ত্বেও মশা দমন অভিযানে ব্লিচিং পাউডারের ব্যবহার চলছেই। সাধারণ নাগরিকেরা নন, সেই ব্যবহার করছে খোদ সরকারি দফতরই! মশার লার্ভার জন্মানো আটকাতে রাজ্য পূর্ত দফতর যে একগুচ্ছ নিদান জারি করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হল নির্দিষ্ট সময় অন্তর ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো।
অথচ, ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার মশার লার্ভা মারতে হলে ব্লিচিং দিয়ে কোনও লাভ নেই। রাস্তাঘাটে ধোঁয়া দিয়েও ডেঙ্গিবাহী মশা দমন করা যায় না। লিফলেট ছড়িয়ে, হোর্ডিং-ব্যানার টাঙিয়ে শহর জুড়ে তা একাধিক বার প্রচার করেছে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু তার পরেও রাজ্য পূর্ত দফতর মশার লার্ভা নিধনের অন্যতম উপায় হিসেবে কেন ব্লিচিং পাউডারের কথা বলেছে, তা বুঝে উঠতে পারছেন না কেউই। ফলে প্রশ্ন উঠেছে যে, সরকারি দফতর বা সংস্থাগুলির মধ্যে কি ন্যূনতম সমন্বয়টুকুও নেই? না-হলে কেন রাজ্য সরকারের অধীনস্থ এক পুরসভা মশা দমনে ব্লিচিং পাউডারের ‘নিষ্ফলতা’ নিয়ে প্রচার চালালেও সরকারেরই অন্য দফতর উল্টো পথে হেঁটে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহারের কথা বলছে?
নবান্ন সূত্রের খবর, পূর্ত দফতরের কোনও জমি, ভবন বা অন্য কোনও সম্পত্তিতে মশার লার্ভা না জন্মানোর সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে কর্তা-আধিকারিকদের একগুচ্ছ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে— জল জমে মশার লার্ভার জন্মানো আটকাতেঅবিলম্বে খোলা পিট বন্ধ করতে হবে, জল না জমার জন্য নিকাশি ব্যবস্থা পরিষ্কার রাখতে হবে, নির্মীয়মাণ এলাকায় নিয়মিত পরিদর্শন করতে হবে, যাতে সেখানে লার্ভা জন্মাতে না পারে। সেখানকার জঞ্জাল পরিষ্কার করতে হবে বা জল জমা আটকাতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। আবর্জনা জমতে না দেওয়ার পাশাপাশি অবাঞ্ছিত গাছগাছালিও উপড়ে ফেলতে হবে।
পতঙ্গবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, ওই একই নির্দেশে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ব্লিচিং পাউডারের ব্যবহারের উল্লেখ সমস্যা তৈরি করেছে। কারণ, ব্লিচিং পাউডারে মশার লার্ভা মরে যায়— জনমানসে এই ধারণা চেপে বসে আছে। তাই অন্য সব পদ্ধতি ভুলে বেশির ভাগ মানুষই ব্লিচিং ছড়িয়ে নিজেদের ‘সুরক্ষিত’ মনে করেন। এক পতঙ্গবিদ জানাচ্ছেন, অতীতে ১২৮টি হাউজ়হোল্ড নিয়ে করা এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, মশার লার্ভা মারতে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহারকারী হাউজ়হোল্ডের সংখ্যা ছিল সর্বাধিক— ৭৩টি (৫৭%)। সেখানে জল জমা আটকানো, বাড়ি ও চারপাশ পরিষ্কার রাখা, কীটনাশক তেল এবং মাছ ছাড়ার মতো পদ্ধতি গ্রহণ করেছিল যথাক্রমে ৩৫ (২৭.৩%), ৮ (৬.৩%), ৭ (৫.৫%) এবং ৫টি (৩.৯%) হাউজ়হোল্ড। ওই পতঙ্গবিদের কথায়, ‘‘ফলে পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার যে, ব্লিচিং ছড়িয়েই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দায় সেরেছেন।’’
অথচ পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, আন্ত্রিকের সময়ে কোনও এলাকায় জীবাণুনাশক হিসাবে ব্লিচিং পাউডারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা মারতে এর কোনও ভূমিকাই নেই।
নিউ টাউন-কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির মশা দমন অভিযানের পরামর্শদাতা গৌতম চন্দ্র বলছেন, ‘‘অত্যধিক পরিমাণে ব্লিচিং পাউডার ছড়ালে মশার লার্ভা মরতে পারে। তাদের জন্মাতেও অসুবিধা হতে পারে। কিন্তু ডেঙ্গির মশা ছোট পাত্রে বংশবিস্তার করায় সে সমস্ত জায়গায় ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে লাভ হয় না। তা ছাড়া, মশার লার্ভার জন্মানো আটকাতে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার স্বীকৃত নয়।’’
‘ন্যাশনাল ভেক্টরবোর্ন ডিজ়িজ় কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’-এর প্রাক্তন যুগ্ম অধিকর্তা রাজেন্দ্র শর্মা বলেন, ‘‘মশার লার্ভা মারার জন্য ব্লিচিং পাউডার ব্যবহারে কোনও নিয়মবিধি নেই। প্রামাণ্য তথ্যও নেই। মশার লার্ভা মারতে ব্লিচিং পাউডারের ব্যবহারকে অবৈজ্ঞানিকই বলা যায়।’’
তা হলে কেন পূর্ত দফতর ব্লিচিং পাউডার ব্যবহারের কথা বলছে?
উত্তরে রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী মলয় ঘটক অবশ্য বলছেন, ‘‘ব্লিচিং পাউডার ছড়ালে মশার লার্ভা জন্মাতে পারবে না। কারণ ব্লিচিং থাকলে মশা সেখানে যাবেই না। তাই প্রাথমিক ভাবে ব্লিচিং ছড়ানোর কথা বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy