সহায়: স্বপন বসুর শুশ্রূষা করছেন চালতাবাগান মোড় এলাকার বাসিন্দারা। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
পায়ে পচন ধরা এক বৃদ্ধ উল্টোডাঙার ফুটপাতে পড়ে থেকে মারা গিয়েছিলেন দিন কয়েক আগেই। করোনার ভয়ে কেউ তাঁকে সাহায্য করেননি বলে অভিযোগ। তবে পায়ে পচন নিয়ে বিবেকানন্দ রোডের চালতাবাগান মোড়ের কাছে ফুটপাতে পড়ে থাকা এক ব্যক্তির অবশ্য একই ভবিতব্য হয়নি। বরং তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এলাকার কিছু বাসিন্দা। হাসপাতাল ভর্তি নিতে না চাইলেও নিজেদের সাধ্যমতো ওই অসুস্থের শুশ্রূষা করে চলেছেন তাঁরা।
চালতাবাগান মোড়ের কাছে ফুটপাতে পড়ে কাতরাতে দেখা গিয়েছিল স্বপন বসু নামে পেশায় ভ্যানরিকশা চালক ওই ব্যক্তিকে। প্রথমে কেউ তাঁকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, পরিচয়পত্র না থাকলে তাঁকে ভর্তি নেওয়া যাবে না বলেও জানিয়েছিল হাসপাতাল। তবে তাতে অবশ্য চিকিৎসা আটকায়নি স্বপনের। হাসপাতাল ভর্তি না নেওয়ায় স্থানীয় ওই বাসিন্দারাই নিজেদের মতো করে শুশ্রূষা করছেন তাঁর। দু’বেলা খাবারও পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁর কাছে।
ওই সাহায্যকারী দলের এক জন অরূপ দাস জানালেন, বছর আটচল্লিশের স্বপন ব্যারাকপুরের বাসিন্দা। বাবা মারা যাওয়ার পরে স্বপন কলকাতায় আসেন এবং এলাকায় এক ব্যবসায়ীর কাছে কাজ নেন। পরে সেই ব্যবসা ভাগাভাগি হয়ে গেলে কাজ হারান স্বপন। তার পরে এলাকার লোহার দোকানে দোকানে ভ্যানরিকশা করে জিনিসপত্র পৌঁছে দিতেন
তিনি। কিন্তু লকডাউনে সেই কাজও বন্ধ হয়ে যায়।
অরূপ বলেন, “লকডাউনের মধ্যেই ওঁর সঙ্গে পরিচয়। তখন পাড়ার আশপাশে দুঃস্থদের খাওয়ানোর পরিকল্পনা করেছিলাম আমরা। ওঁর ভ্যানে খাবার নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘোরার কথা হয়। ওঁকেও দু’বেলা খাবার দেওয়া এবং টাকা দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছিল।” সে সময়ে ভ্যান ঠেলে ঠেলে নিয়ে যেতেন স্বপন। কারণ জিজ্ঞাসা করলে ডান পায়ে বাঁধা ব্যান্ডেজ দেখিয়ে বলতেন, “ব্যথা রয়েছে। জোর পাই না।” এর পরে জুলাইয়ের শেষের দিকে জানা যায়, ফুটপাতে পড়ে রয়েছেন ওই ভ্যানচালক।
অরূপের সঙ্গী পিকু চক্রবর্তী, রাহুল গুপ্ত, প্রবীর জয়সওয়ালেরা বলছেন, “গিয়ে দেখি, পা দিয়ে পুঁজ-রক্ত গড়াচ্ছে। আর পায়ের আশপাশে ফুটপাত জুড়ে পোকা। ব্যান্ডেজ খুলতেই পোকা বেরোতে শুরু করে।” এই দেখে তাঁরা স্থানীয় এক চিকিৎসককে ডাকলেও তিনি আসেননি বলে অভিযোগ। আর জি কর, কলকাতা মেডিক্যালের মতো সরকারি হাসপাতালে স্বপনকে পাঠানোর চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয় বলে অরূপদের দাবি। তাঁরা বলেন, “ফোন করা হলেও কেউই ভর্তি নিতে রাজি হননি। সকলেরই বক্তব্য, শয্যা ফাঁকা নেই। করোনা রিপোর্টও লাগবে বলে জানানো হয়। উপায় না দেখে আমরাই ফুটপাতে ওঁর শুশ্রূষা শুরু করি।”
শেষে গত সপ্তাহে সুকিয়া স্ট্রিটের দ্য ক্যালকাটা হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে যোগাযোগ করেন অরূপেরা। সেখান থেকেও বলা হয়, ভর্তি করাতে গেলে রোগীর করোনা রিপোর্ট আনতে হবে। সেই মতো স্বপনের করোনা পরীক্ষাও করানো হয়। ২২ অগস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। অভিযোগ, এর পরেও ওই হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, রোগীর ভোটার বা আধার কার্ডের মতো পরিচয়পত্র লাগবে।
পথে পড়ে থাকা অসুস্থকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে পরিচয়পত্র লাগবে কেন? ওই মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ রজত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এমনিতে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু অনেকেই এ রকম রোগীকে ভর্তি করিয়ে চলে যান। পরে আর খোঁজ নেন না। তাই পরিচিত কাউকে আনতে বলা হয়েছে।” তা হলে উপায়?
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বা স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি। তবে স্বপনের সহায় অরূপ, পিকু, রাহুল, প্রবীরেরা বলছেন, “লকডাউনের সময়ে মানুষকে খাওয়াতে উনি ভ্যান নিয়ে কত ছুটেছেন তা আমরা দেখেছি। কেউ না নিলেও আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy