ফাইল চিত্র।
শীতের মরসুমে বাঙালি পাঠকের অবশ্য গন্তব্য থাকে কলকাতা বইমেলা। ইতিমধ্যেই তা আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত। ছোট-বড় বহু প্রকাশকের নিজেদের মেলে ধরার মঞ্চ এই মেলা। বিদেশ থেকেও বহু অতিথি আসেন বইয়ের এই উৎসবে। কিন্তু চলতি বছরে করোনার ঢেউয়ে বিশ্ব যখন টালমাটাল, সেই সময়ে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা করা কতটা যুক্তিযুক্ত, প্রশ্ন উঠছে প্রকাশক ও পাঠক মহলের একাংশে। অতিমারির পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট সময়ে অর্থাৎ আগামী জানুয়ারিতে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ করা যে সম্ভব নয়, তা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছে আয়োজক সংস্থা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড। গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় অবশ্য আশাবাদী, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মার্চ, এমনকি মে-জুন মাসেও বইমেলা হতে পারে। কিন্তু অনেকের মতে, দেরি করে বইমেলা হলে প্রকাশক থেকে পাঠক, সকলেরই হয়রানি বাড়বে।
ত্রিদিববাবু বলেন, ‘‘জানুয়ারি মাসে বইমেলা না হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তা ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে। তখনও করোনার ধাক্কা থাকলে মেলা হতে পারে মার্চ-এপ্রিল, এমনকি বর্ষাতেও।’’ যদিও অনেকেরই প্রশ্ন, করোনা আবহে কি কলকাতা বইমেলা এক বছর বন্ধ থাকতে পারে না? গত বছর বইমেলায় ১২ দিনে এসেছিলেন প্রায় ২২ লক্ষ দর্শক। এই বিপুল দর্শক সমাগমের মধ্যে কোভিড সুরক্ষা-বিধি মেনে কতটা সুষ্ঠু ভাবে মেলা পরিচালনা করা যাবে, বড় হয়ে উঠছে সেই প্রশ্নও।
শীত পড়তেই কিছু জেলায় শুরু হয়েছে বইমেলা। কিন্তু সেগুলিতে ব্যবসা যে আশানুরূপ হচ্ছে না, তা স্বীকার করে নিয়েছেন ত্রিদিববাবু। একই সঙ্গে কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ার বেশ কিছু প্রকাশক জানাচ্ছেন, আসন্ন বইমেলায় স্টল দেওয়ার মতো আর্থিক সংস্থান তাঁদের নেই। কারণ প্রথমত, লকডাউনে দীর্ঘ কয়েক মাস দফতর বন্ধ থাকায় অনেক প্রকাশনা সংস্থাই আর্থিক সঙ্কটে। দ্বিতীয়ত, আমপানে দোকান ভেঙে বা বই ভিজে যাওয়ায় বিপুল ক্ষতি হয়েছে অনেকের। এই অবস্থায় ওই প্রকাশকেরা আদৌ মেলায় যোগ দিতে পারবেন কি না, তা নিয়েই তাঁরা সংশয়ী।
এমনই এক প্রকাশক পার্থশঙ্কর বসু বলেন, ‘‘গত বছর আমি ৪০০ বর্গফুটের স্টল নিয়েছিলাম। স্টলের ভাড়া, রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুতের খরচ— সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। এই বছরে করোনা এবং আমপানে ভীষণ ক্ষতি হয়েছে। তাই ফের স্টল দিয়ে নতুন করে ক্ষতির সম্মুখীন হতে চাইছি না। ’’ আর এক প্রকাশক বুলবুল ইসলাম বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে নির্দিষ্ট সময়ে বইমেলা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু গরমে বা বর্ষায় মেলা হলে কত জন আসবেন? তার উপরে মার্চে বিধানসভা ভোটের দামামা বেজে যাবে। তখন মেলা করা কি সম্ভব?’’ তাঁর আরও বক্তব্য, মেলায় ছোটদের পাশাপাশি প্রচুর প্রবীণ মানুষও আসেন। কোভিড পরিস্থিতি কেটে গেলেও তাঁদের মেলায় আসার মতো মানসিক প্রস্তুতি থাকবে কি না, সেটাও ভাবার বিষয়।
প্রকাশকদের আর একটি অংশের মতে, লকডাউনে বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের বেতন কমেছে। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও তাঁরা কত জন মেলা দেখতে আসবেন, সেই প্রশ্ন থাকছে। পাশাপাশি অনেকে শঙ্কিত ভিড়ের বহর নিয়েও। তাঁদের কথায়, ভিড় দেখে যদি কলকাতা হাইকোর্ট মাঝপথে মেলা বন্ধ করে দেয়, তা হলে ফের প্রকাশকেরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।
উঠে আসছে আরও একটি দিকও। নির্দিষ্ট সময়ের বদলে অন্য সময়ে বইমেলা হলে কত জন বিদেশি প্রকাশক আসবেন? সে ক্ষেত্রে এমন একটি আন্তর্জাতিক মেলা তার ‘আন্তর্জাতিকতা’ তকমা হারাবে না তো? ঘুরপাক খাচ্ছে এই সব প্রশ্নও।
এ বারের বইমেলায় ‘ফোকাল থিম’ ছিল বাংলাদেশ। ত্রিদিববাবু বলেন, ‘‘এ বার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। সব মিলিয়ে বইমেলা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’’ গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে বলেন, ‘‘বইমেলা হোক মনেপ্রাণে চাইছি। ফেব্রুয়ারির শেষে বা মার্চেও যদি তা আয়োজন করা যায়। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে সরকারের মতামত এবং কোভিড সুরক্ষা-বিধির উপরে। আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy