শিক্ষামন্ত্রীর বার্তার পরে এ বার বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশ। র্যাগিংয়ের অভিযোগ নিয়ে বারবার বিড়ম্বনায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, শনিবার দিল্লি থেকে ইউজিসি চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তে তারা খুশি নয়। ফের র্যাগিংয়ের তদন্ত করতে হবে। দু’দিন আগেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, ওই অভিযোগের কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি। সেই দাবিকে নস্যাৎ করে নতুন ভাবে তদন্ত করার নির্দেশ এসেছে। পাশাপাশি নিগৃহীত ছাত্রের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তদন্তে সুবিচার না পেলে রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হবে তারা। এ সবের মধ্যে বিপাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধরচক্রবর্তী এ দিন বলেছেন, ‘‘আমরা নিশ্চই তদন্ত করব। এমন ভাবে তদন্ত করা উচিত যাতে আমাদের প্রতি নির্যাতিতদের আস্থা আসে। বারবার র্যাগিংয়ের অভিযোগ আসাটাই ঠিক নয়।’’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র অভিযোগ করেছিলেন, গত ৭ ডিসেম্বর নিউ ল’কলেজ হস্টেলে তাঁকে র্যাগ করেন সিনিয়র পড়ুয়ারা। পাশাপাশি, যৌন হেনস্থারও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করার পাশাপাশি একটি ঘরে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল সিনিয়র পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে। এর জেরে মাথা ফেটে যায় তাঁর। পরে মোবাইলের মাধ্যমে তাঁরা দাদাকে খবর পাঠালে ভোরবেলায় পুলিশ গিয়ে ওই নিগৃহীত ছাত্রকে উদ্ধার করে।
এর পরে তিনি ইউজিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। পরে পুলিশেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। তার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র্যাগিং সেল একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেছিল। তদন্তের পরে কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়েছিলেন, এ রকম কোনও ঘটনাই ঘটেনি। এমনকী, গত ৮ ডিসেম্বর থানায় ওই ছাত্র জানিয়েছিলেন যে কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই, সেই তথ্যও তুলে ধরা হয়। যদিও পরে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ওই ছাত্রের পরিবার।
কিন্তু অভিযোগ, প্রথম থেকেই গোটা বিষয়টিকে লঘু করতে চেয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। এই মর্মে ইউজিসি-র কাছে অভিযোগ করেছিলেন ওই ছাত্রের মা। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিষয়টি ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন তিনি। তার পরেই ফের নড়েচড়ে বসে ইউজিসি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের বক্তব্য, কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব হিসেবেই দেখছেন। ঘটনা কিছু না থাকলেও ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে বলে দাবি ছিল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু গত শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যের পরেই শিক্ষামহলে আলোড়ন পড়ে। যে ঘটনাটিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন, সেই বিষয়ের নিরপেক্ষ তদন্তের কথা বলেন মন্ত্রী। শিক্ষামহলের একাংশের ব্যাখ্যা, মন্ত্রী পক্ষপাতহীন তদন্তের পক্ষে সওয়াল করেছেন। তার ফলে যে নিরপেক্ষ তদন্ত হচ্ছে না, সে কথাই কার্যত বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। ঠিক তার পরদিন ফের ইউজিসি-র নির্দেশ পেয়ে বিব্রত কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেও দাবি উঠছে, র্যাগিং যদি না-ও হয়ে থাকে, আসলে কী ঘটেছে, তা-ও পরিষ্কার হওয়া দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের দাবি, ফের তদন্ত করতে বলায় দোলাচলে পড়েছেন কর্তৃপক্ষ। কারণ এ বার যদি তদন্তে র্যাগিং প্রমাণিত হয়, তা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যাবে। এ ছাড়া ফের তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ না হলে সরকারের দ্বারস্থ হওয়ার কথা বলেছে ছাত্রের পরিবার। যেহেতু পুলিশ ওই ছাত্রকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছে, ফলে বিষয়টি পুরো অস্বীকার করতে পারবে না পুলিশও। তাই র্যাগিংয়ের অভিযোগ নিয়ে এখন মাথায় হাত কর্তৃপক্ষের। নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলেই জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার রাজাগোপালবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy