মর্মান্তিক: এখানেই ঘটে দুর্ঘটনা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
দিনভর বৃষ্টির মধ্যেই আলিপুর চিড়িয়াখানার ভিতরে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং লাগানোর কাজ হচ্ছিল। সেই কাজ করতে গিয়েই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেলেন একটি বেসরকারি বিজ্ঞাপন সংস্থার দুই কর্মী। গুরুতর জখম এক জন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ, চিড়িয়াখানার যেখানে হাতিদের রাখা হয়, তার উল্টো দিকে এই ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম তারিণী ঘোষ (৩১) এবং প্রদীপ দাস (৪৫)। তাঁদের বাড়ি যথাক্রমে মুর্শিদাবাদ এবং ওড়িশার ভদ্রকে। গুরুতর জখম, বছর সাঁইত্রিশের লিটন দাসের বাড়ি চিংড়িঘাটায়। সরকারি লকডাউনের দিনেও কী ভাবে চিড়িয়াখানার মধ্যে ওই কাজ হচ্ছিল, এই দুর্ঘটনার পরে সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, চিড়িয়াখানার হাতিদের থাকার জায়গার উল্টো দিকে, পাঁচিল ঘেঁষে এ দিন সকাল থেকে ওই কাজ চলছিল। যে জায়গায় হোর্ডিংয়ের লোহার খুঁটি পোঁতা হচ্ছিল, সেখানে বৃষ্টির জল জমে ছিল। আশপাশে আগাছাও ছিল। সেখানেই হোর্ডিংয়ের লোহার খুঁটি নিয়ে কাজ করার সময়ে এক জন কর্মী প্রথমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে বাকি দু’জন কর্মী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। সেখানে কর্মরত বাকি কর্মীদের চিৎকারে ছুটে আসেন চিড়িয়াখানার নিরাপত্তারক্ষীরা। আহত তিন জনকে আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তারিণী ও প্রদীপকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। লিটনের চিকিৎসা চলছে।
আরও পড়ুন: গভীর রাতে ধেয়ে এল গঙ্গা, ঘর ছাড়ছে ধানঘরা
চিড়িয়াখানার একটি কর্মী সংগঠনের নেতা তথা বিজেপি কর্মী রাকেশ সিংহ ঘটনাস্থলে এসে দাবি করেন, তিনি খবর শুনে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে এসে তিন জন কর্মীকে পড়ে থাকতে দেখেন। রাকেশের দাবি, ‘‘আমরাই ওঁদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। লকডাউনের মধ্যে চিড়িয়াখানায় কাজ চলছে কী ভাবে? বেলা সাড়ে ১১টায় ওই ঘটনা ঘটার পরে দুপুর ২টোর সময়েও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কারও দেখা মেলেনি। ওই দু’জনের বেঘোরে মৃত্যুর দায় তো চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষেরই। দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’
হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আহত লিটন দাসের মা। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
তবে আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিস সামন্তের দাবি, ‘‘ঘটনার কথা শুনেই গাড়ির ব্যবস্থা করে ওই তিন জনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। ঘটনাস্থলে যাওয়ার থেকে ওঁদের হাসপাতালে পাঠানোটাই তখন বেশি জরুরি ছিল। সেই কাজই দ্রুত করা হয়েছে।’’ কিন্তু লকডাউনের মধ্যে কী ভাবে কাজ হচ্ছিল চিড়িয়াখানায়? আশিসবাবুর উত্তর, ‘‘গত ৪ অগস্ট থেকে চিড়িয়াখানার ভিতরে ক্যাম্প করে ওই হোর্ডিং লাগানোর কাজ চলছে। যাঁরা কাজ করছিলেন, তাঁরা কয়েক দিন ধরে চিড়িয়াখানাতেই থাকছিলেন।’’ তিনি আরও জানান, চিড়িয়াখানা চত্বরে মোট ন’টি হোর্ডিং লাগানোর কাজ হচ্ছে। তার মধ্যে আটটির কাজ ইতিমধ্যেই শেষ। কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটল, তা জানতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: কুর্নিশ জানাতে ইচ্ছে করে জীবনযুদ্ধের সৈন্যদের
এ দিকে লিটনের আহত হওয়ার খবর পেয়ে আলিপুরের ওই হাসপাতালে এ দিন ছুটে আসেন তাঁর মা আরতি দাস ও পরিজনেরা। আরতিদেবী বলেন, ‘‘কাল সকালে ও বাড়ি থেকে কাজে গিয়েছিল। আজ লকডাউন বলে রাতে চিড়িয়াখানাতেই থাকবে বলে জানিয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy