একবালপুরের হোটেলের রিসেপশনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বিস্ফোরণে অভিযুক্তেরা। সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে ছবি। — নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার লেনিন সরণির হোটেলের পর খিদিরপুরের একটি গেস্ট হাউসেও এক রাত কাটিয়ে ছিলেন বেঙ্গালুরু ক্যাফে বিস্ফোরণে অভিযুক্ত মুসাভির হুসেন সাজিব এবং আবদুল মাথিন তাহা। পরের দিন সকালে টাকা না দিয়েই পালিয়ে গিয়েছিলেন দু’জন। গেস্ট হাউসের ফোটোকপির যন্ত্র খারাপ থাকায় তাঁদের পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি সংগ্রহ করা যায়নি। আনন্দবাজার অনলাইনকে এ কথা জানিয়েছেন ওই হোটেলের ম্যানেজার। তাঁর দাবি, একটি খাতায় তাঁদের নাম লেখা ছিল। বেঙ্গালুরু পুলিশ তদন্ত করতে এসে দেখে, খাতার সেই পাতাও ছেঁড়া হয়েছে। এর পর তাঁরা উঠেছিলেন একবালপুরের এক গেস্ট হাউসে। দেখিয়েছিলেন ‘ভুয়ো’ আধার কার্ড।
শুক্রবার সকালে দিঘা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে মুসাভির এবং আবদুলকে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সূত্র ধরে সংবাদ সংস্থা এএনআই দাবি করেছে, ১ মার্চ বিস্ফোরণের পর বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় পালিয়ে এসেছিলেন ধৃতেরা। তদন্তের সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২১ মার্চ খিদিরপুরের একটি হোটেলে উঠেছিলেন তাঁরা। ওই হোটেলের ম্যানেজার জলিলুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছে আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি জানিয়েছেন, খিদিরপুরের ওই গেস্ট হাউসের নীচে রয়েছে একটি ‘ডায়াগনিস্টিক ক্লিনিক’। উপরে রয়েছে কয়েকটি ঘর। সেখানে মূলত চিকিৎসক এবং নার্সেরা থাকেন। বাকি ছ’টি ঘর ভাড়া দেওয়া হয়। তার মধ্যে একটি ২১ মার্চ ভাড়া নিয়েছিলেন মুসাভিররা। তখন যদিও তাঁদের দেখে কিছুই বুঝতে পারেননি, দাবি রহমানের। তাঁর কথায়, ‘‘বেঙ্গালুরু পুলিশ এসে কথা বলে আমাদের সঙ্গে। ওরা ছবি দেখায়। তার পর বুঝলাম এরা এই চরিত্রের লোক।’’
রহমানের দাবি, ২১ মার্চ বিকেলে খিদিরপুরের গেস্ট হাউসে এসেছিলেন দু’জন। সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেই ঘটনা। তাতে দেখা গিয়েছে, অটো থেকে নামছেন মুসাভিররা। সঙ্গে রয়েছেন অটোচালকও। হোটেলে রাত্রিবাসের ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র দেখানো বাধ্যতামূলক। মুসাভিররা কী পরিচয়পত্র দেখিয়েছিলেন? সে প্রশ্নের জবাব রহমান জানান, আধার কার্ড দেখিয়ে ছিলেন দু’জন। যদিও সেখানে দু’জনের নাম ছিল ভিন্ন। এক জনের নাম কুলকার্নি। অন্য জনের ছিল মুসলিম নাম। যদিও নাম দু’টি স্পষ্ট করে মনে করতে পারছেন না বলে দাবি রহমানের। তাঁরা জানিয়েছিলেন, কলকাতায় বেড়াতে এসেছেন। সঙ্গে ছিল সামান্য মালপত্র। তবে তাঁদের পরিচয়পত্রের ফোটোকপি সংগ্রহ করে রাখতে পারেননি রহমান। তাঁর দাবি, ২১ মার্চ হোটেলের ফোটোকপি যন্ত্র খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সেই কারণে মুসাভিরদের তিনি আধার কার্ড রেখে যেতে বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, পরের দিন ফোটোকপি করিয়ে রাখবেন। তবে তাঁরা আধার কার্ড রাখতে রাজি হননি। রহমানের কথায়, ‘‘ওঁরা বলেন, আমাদের কাজ রয়েছে। বেরোব, পরে দিচ্ছি। ওঁরা বেরিয়ে যান। আমরা আর খেয়াল করিনি। পরের দিন, ২২ মার্চ সকালে পালিয়ে যান।’’
প্রশ্ন উঠছে, তা হলে মুসাভিরদের কোনও তথ্যই কি নথিভুক্ত করেননি হোটেল কর্মীরা? রহমান দাবি করেছেন, পরিচয়পত্রের ফোটোকপি করা যায়নি বলে রেজিস্টারে তাঁদের নাম নথিবদ্ধ করেননি তিনি। অন্য একটি খাতায় নথিবদ্ধ করেছিলেন নাম। রহমানের দাবি, বেঙ্গালুরু পুলিশ পরে যখন তদন্তের জন্য এসেছিল, তখন দেখা গিয়েছিল, খাতার ওই পাতাটি ছেঁড়া। তিনি মনে করেন মুসাভিররাই করেছেন এ সব। রাতে যখন ঘুমিয়েছিলেন তিনি এবং হোটেলের অন্য কর্মীরা, তখন খাতা থেকে ওই পাতা ছেঁড়া হয়। খাতাটি যেখানে থাকে, সেখানে সিসি ক্যামেরা বসানো ছিল না। সেই কারণে ধরা পড়েনি। রহমানের দাবি, ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ কাউকে না-বলেই হোটেল থেকে চলে যান দু’জন। এমনকি, হোটেলের ভাড়াও মেটাননি। পরে সিসিটিভি ফুটেজে তাঁদের বেরিয়ে যাওয়ার ছবি দেখেছেন রহমান।
এনআইএ তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, ২৫ থেকে ২৮ মার্চ একবারপুরের একটি গেস্ট হাউসে ছিলেন মুসাভির এবং আবদুল। সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, হেঁটেই দু’জন হোটেলে ঢুকেছেন। নিজেদের পর্যটক বলে পরিচয় দিয়েছেন। ‘ভুয়ো’ আধার কার্ডও দাখিল করেছেন। লেনিন সরণির হোটেলেও সেই আধার কার্ডই দেখিয়েছিলেন। নিজেদের পরিচয় দিয়েছিলেন আনমল কুলকার্নি এবং য়ুশা শাহনওয়াজ পটেল বলে। গেস্ট হাউসের ২০৩ নম্বর ঘরে ছিলেন দু’জন। ভাড়া ছিল এক হাজার টাকা। নগদেই মিটিয়েছিলেন ভাড়া। এ ভাবেই কলকাতার বিভিন্ন হোটেলে ঘুরে ঘুরে দু’জন ছিলেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy