অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ
ঘটনার পর প্রায় দু’দিন কেটে গিয়েছে। এখনও পঞ্চসায়রের হোম-ছুট আবাসিককে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা অধরা। সোমবার গভীর রাতে ওই হোম থেকে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলেন এক মহিলা আবাসিক। এর পর তাঁকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে দুই যুবক গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। গণধর্ষণের পর ওই মহিলাকে বেধড়ক মারধরও করা হয় বলে তিনি তাঁর পরিবারের লোকজনকে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবারই এই অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে পঞ্চসায়র থানা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি বলে পুলিশ সূত্রে খবর। গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় ওই যুবকদের এক জন অন্য জনকে ফিরোজ নামে ডেকেছিল। এ কথা পুলিশকে জানিয়েছিলেন নির্যাতিতা। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, ওই গাড়িতে দুই যুবক ছিল। সেই সূত্র ধরে এগনোর চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
হোমের দাবি, সোমবার রাত ২টো নাগাদ ওই মহিলা নিজেই নোড়া দিয়ে তালা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে পড়েন। অভিযোগ, মহিলাকে মাঝরাতে ঘোরাঘুরি করতে দেখে দু’জন যুবক তাঁকে তুলে নিয়ে যায় গাড়ি করে। পুলিশের কাছে অভিযোগে ওই মহিলা জানিয়েছেন, গাড়িতে তোলার পর তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানোর পর একটি ফাঁকা জায়গায় থামানো হয়। সেখানেই গণধর্ষণ করা হয় তাঁকে। এর পর ফের গাড়িতে তুলে তাঁকে সোনারপুরের কাছে এক খালপাড়ে ফেলে দিয়ে যায় ওই যুবকেরা।
আরও পড়ুন: কর্নাটকে ১৭ বিধায়ককে বরখাস্তের সিদ্ধান্তই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট, তবে উপনির্বাচনে লড়তে পারবেন সবাই
ভোরের দিকে কিছু নিত্যযাত্রী তাঁকে টিকিট কেটে বালিগঞ্জ পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেন। সেখান থেকে গড়িয়াহাটে ওই মহিলা এক আত্মীয়ের বাড়ি যান। সেখান থেকে বেহালায় এক বোনের বাড়িতে পৌঁছন নির্যাতিতা। এই ঘটনায় তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। মঙ্গলবার পঞ্চসায়র থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। ইতিমধ্যেই দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। যদিও ঘটনার পর প্রায় দু’দিন হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। ওই মহিলার সঙ্গেও কথা বলছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মহিলার মেডিক্যাল টেস্টও করানো হয়েছে। দুই যুবকের সঙ্গে তাঁর আগে কোনও পরিচয় ছিল কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজও।
আরও পড়ুন: হোম-ছুট রোগিণীকে ধর্ষণের অভিযোগ
হোমে পুলিশি তদন্ত। নিজস্ব চিত্র
নির্যাতিতার বোন এ দিন জানিয়েছেন, রাতে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর হোমের মালিক থানায় একটি ডায়েরি করেন। খবর পেয়ে তাঁরাও খোঁজাখুজি শুরু করে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘মঙ্গলবার সকালে গড়িয়াহাটে আমাদের আর এক আত্মীয়ের বাড়িতে দিদি ফিরে আসে। নাইটি পরেছিল ও। সেটা রক্তমাখা। গণধর্ষণের পর তাঁকে বেধড়ক মারধরও করা হয়। ওই অবস্থাতেই বোন বেহালায় আমাদের বাড়িতে এসেছিল।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘দু’দিন কেটে গেল, এখনও কেউ গ্রেফতার হল না কেন?’’
আরও পড়ুন: সেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের ভাগাভাগি নিয়েই জট পাকল শিবসেনা-এনসিপি জোট প্রক্রিয়ায়!
গভীর রাতে তিনি হোমের বাইরে কেন বেরিয়ে এসেছিলেন? কেনই বা দরজায় দেওয়া তালা নোড়া দিয়ে ভেঙেছিলেন? ওই মহিলাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোমের সামনে থেকে। সেই সময় হোমের নিরাপত্তারক্ষীরা কোথায় ছিলেন? ওই মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, রাতে ঘুম আসছিল না বলে হোমের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। সেই সময়ই একটি সাদা গাড়িতে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অথচ হোম কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, তিনি তালা ভেঙে বাইরে বেরিয়েছিলেন! এ বিষয়ে হোম কর্তৃপক্ষ কিছু না বললেও পুলিশ বলছে, গোটাটাই তারা খতিয়ে দেখছে। কথা বলা হচ্ছে হোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, তিন দিন আগে বছর আটত্রিশের ওই মহিলাকে হোমে আনা হয়। বাবার মৃত্যুর পর মায়ের সঙ্গেই তিনি থাকতেন। ওই মহিলা মৃগী রোগী। মাঝেমাঝেই রেগে গিয়ে তিনি ভাঙচুর চালাতেন বাড়িতে। সেই সময় পরিবারের লোকজনও তাঁকে মারধর করত। কয়েক মাস ধরে তাঁর মা অসুস্থ। শয্যাশায়ী অবস্থা। তাই বাড়িতে দেখভালের কেউ নেই বলে ওই মহিলাকে হোমে পাঠানো হয় বলে তাঁর বোন জানিয়েছেন। নির্যাতিতার বোনের প্রশ্ন, ‘‘যদি তালা ভেঙে দিদি বেরিয়ে আসে, হোমের কি কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থাই ছিল না? এক জন তালা ভেঙে বেরোচ্ছে, অথচ কেউ কিছু জানতেই পারল না! এটা হয় নাকি?’’
আরও পড়ুন: ৬০ আসনেই ঘুরবে ভাগ্য, তৃণমূলকে হিসেব পিকের
এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখছি আমরা। কথা বলছি স্থানীয়দের সঙ্গেও। নির্যাতিতা জানিয়েছেন, দু’জনের এক জনকে ফিুরোজ নামে ডাকা হয়েছিল। সেটা মাথায় রেখেই এগোতে চাইছি আপাতত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy