Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

পথের বলি: খন্দপথে ১, দামাল অটোয় ১

একই দিনে দু’টি পথ-দুর্ঘটনা কেড়ে নিল এক প্রৌঢ় এবং এক কিশোরের জীবন। সোমবার শহরে ওই দুই দুর্ঘটনার একটির কারণ ছিল রাস্তার মধ্যে মরণ-ফাঁদ, অন্যটির কারণ অটোর বেপরোয়া গতি। সোমবারের প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে ওয়াটগঞ্জ থানা এলাকায় ডায়মন্ড হারবার রোডে সেন্ট থমাস স্কুলের সামনে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্কুলের সামনের ট্রামলাইনের রাস্তা দীর্ঘদিন ধরেই এবড়োখেবড়ো হয়ে রয়েছে।

 ডায়মন্ড হারবার রোডের সেই দুর্ঘটনাস্থল। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।

ডায়মন্ড হারবার রোডের সেই দুর্ঘটনাস্থল। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০০:৩০
Share: Save:

একই দিনে দু’টি পথ-দুর্ঘটনা কেড়ে নিল এক প্রৌঢ় এবং এক কিশোরের জীবন। সোমবার শহরে ওই দুই দুর্ঘটনার একটির কারণ ছিল রাস্তার মধ্যে মরণ-ফাঁদ, অন্যটির কারণ অটোর বেপরোয়া গতি।

সোমবারের প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে ওয়াটগঞ্জ থানা এলাকায় ডায়মন্ড হারবার রোডে সেন্ট থমাস স্কুলের সামনে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্কুলের সামনের ট্রামলাইনের রাস্তা দীর্ঘদিন ধরেই এবড়োখেবড়ো হয়ে রয়েছে। এর আগেও অনেক দুর্ঘটনা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ আসলাম, শেখ সালিমরা বলেন, ‘‘স্কুলের শিশু এবং ছাত্রদেরও দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনকে জানিয়ে লাভ হয়নি।’’

পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে একবালপুরের ময়ূরভঞ্জ রোডের বাসিন্দা শিব চাঁদ ধনু (৬০) এবং তার ছেলে সাজন ধনু বাজার সেরে মোটরবাইকে ফিরছিলেন। আচমকাই সেন্ট থমাস স্কুলের সামনের ওই রাস্তায় পিছলে যায় মোটরবাইকটি। রাস্তায় ট্রামলাইনের দু’দিকে ছিটকে পড়েন শিব চাঁদ এবং তাঁর ছেলে। সেই সময়ে শিয়ালদহ থেকে ওই রাস্তা ধরে পর্ণশ্রীর দিকে যাচ্ছিল একটি বেসরকারি বাস। হঠাৎ বাস চলে আসায় রাস্তা থেকে আর সরতে পারেননি শিব চাঁদ। বাসের সামনের চাকায় পিষ্ট হয়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। সাজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এর পরেই উত্তেজিত জনতা ডায়মন্ড হারবার রো়ড অবরোধ করেন। ট্রাম কোম্পানির অফিসারদের ঘটনাস্থলে উপস্থিত করানোর দাবি তোলেন তাঁরা। পুলিশের হস্তক্ষেপে পনেরো মিনিটের মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা সামলালেও বিক্ষিপ্ত ভাবে বিক্ষোভ চলতে থাকে। এর মধ্যেই দুপুর সওয়া ১২টা নাগাদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। পুলিশকে রাস্তার অবরোধ তুলে যান চলাচল স্বাভাবিক করার নির্দেশ দিলে তাঁকে ঘিরেই লোকজন বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। বারবার ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েও জনতাকে শান্ত করতে না পেরে এক বার মন্ত্রী বলে ওঠেন, ‘‘তা হলে কি করব বলুন? আমিই কি মরে যাব?’’

অবশেষে মন্ত্রীকে উত্তেজিত হয়ে উঠতে দেখে শান্ত হয় জনতা। ঘটনাস্থল থেকেই মন্ত্রী ৯ নম্বর বরোর পুর-ইঞ্জিনিয়ারকে রাস্তা সারাইয়ের নির্দেশ দেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘মাস দু’য়েক আগেই আমি ট্রাম কোম্পানি ও এইচআরবিসিকে রাস্তা সারাইয়ের জন্য বলেছিলাম। কেন কাজ হয়নি, আমি খোঁজ নেব।’’ মন্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে সিটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্য পরে জানান, পরিবহণ দফতর থেকে নির্দেশ এসেছে। এইচআরবিসি-র কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।

এ দিকে, এ দিন বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ মেছুয়া এলাকার মহাত্মা গাঁধী রোড এবং রামলোচন মল্লিক স্ট্রিটের সংযোগস্থলে দ্বিতীয় দুর্ঘটনাটি ঘটে। সেখানে অভিযোগের তির অটোর বেপরোয়া গতির দিকে। পুলিশ জানায়, জোড়াসাঁকো এলাকার বাসিন্দা বছর এগারোর কিশোর মহম্মদ খৈয়ম কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে খেলতে বেরোয়। তারা মহাত্মা গাঁধী রোড এবং রামলোচন মল্লিক স্ট্রিটের সংযোগস্থলে পৌঁছে রাস্তা পেরোতে গিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। খৈয়মের সঙ্গীরা জানায়, তারা রাস্তা পেরিয়ে হঠাৎ খৈয়মের চিৎকার শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখে, একটি অটোর পাশে সে পড়ে রয়েছে। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সেখানেও স্থানীয়েরা অটো এবং চালককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। পরে জোড়াসাঁকো থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অটোটি আটক করে এবং চালককে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, খৈয়মের বাড়ি বিহারের সহর্ষ জেলায়। কাজের জন্য দু’মাস আগে সেখান থেকে কলকাতায় এসে মদনমোহন বর্মণ স্ট্রিটে মামার বাড়িতে এসে উঠেছিল সে। তার দাদা মেছুয়ার ফলমন্ডিতে চাকরি করে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy