ছবি: রোহন এবং সোহমের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া।
লকডাউনের সময় মাস ছ’য়েক বন্ধ ছিল সেলুন। তখনই চুল ঘাড় ছাপিয়েছিল। সেই সময়ে আর পাঁচ জন চুল-দাড়ি বেড়ে যাওয়া বাঙালি যুবকের মতোই বড় চুলের হাত থেকে নিষ্কৃতি চাইছিলেন নাকতলার যমজ ভাই। কিন্তু তার পর তাঁরা যা করলেন, সেটা আর পাঁচ জনের সঙ্গে মিলল না।
লকডাউন শিথিল হতে বাকি বাঙালি যখন সেলুনমুখী, কিংবা গণ্ডিবদ্ধ এলাকা (কন্টেনমেন্ট জোন)-র নিয়ম বাঁচিয়ে সেলুনকেই ডেকে আনছেন আবাসনে, তখন দুই ভাই ঠিক করলেন, তারা আপাতত চুল আর কাটবেন না। বরং চুল আরও বাড়াবেন। পারলে চুলের দৈর্ঘ্যে মেয়ে বন্ধুদেরও টেক্কা দেবেন। লকডাউনে বাধ্যবাধকতায় যা শুরু হয়েছিল, তার শেষ তাঁরা করবেন একটু অন্য ভাবে।
সেই থেকেই শুরু। গড়িয়ার রানিকুঠির বাসিন্দা যমজ ভাই রোহন রায় এবং সোহম রায়কে তারপর চুল নিয়ে বহু প্রশ্নের বাউন্সার সামলাতে হয়েছে। চুল যখন কাঁধ ছুঁয়ে পিঠে লুটোচ্ছে, তখন পাড়া পড়শি পরিচিতদের কাছ থেকে উড়ে এসেছে বেমক্কা প্রশ্নও। কেউ বলেছেন, ‘এ বার চুলটা কাট! আর ভাল লাগছে না’, কেউ বা একটু কটাক্ষ করে প্রশ্ন ছুড়েছেন, ‘সংস্কৃতি চর্চা করলে কি আজকাল একটু বেশি বড় চুল রাখতে হয়?’
বরাবরই গান, শিল্প নিয়ে চর্চায় মেতে থেকেছেন দুই ভাই। চুল বড় করার জন্য এমন কথা শুনতে হবে ভাবেননি। তবে যাঁরা এ সব বলেছেন, তাঁদের আসল কারণ ব্যাখ্যা করতেও যাননি।
সোহমরা জবাব না দিলেও অবশ্য প্রশ্নকর্তারা উত্তর পেয়েছেন। সম্প্রতি ফেসবুকে দুই ভাই হাতে দু’টি বেণী ঝুলিয়ে ছবি পোস্ট করেছেন। ঘনচুলে বাঁধা বেণী দু’টি তাঁদেরই চুলে তৈরি। তবে ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেগুলি গোড়া থেকে ছাঁটা। সোহম আর রোহন ফেসবুকেই জানিয়েছেন, লকডাউনের সময় থেকে বাড়ানো ওই চুল তাঁরা দান করছেন ক্যানসারের রোগীদের সাহায্য করার জন্য। ক্যানসারের চিকিৎসায় চুল হারান বহু রোগী। তাঁদের জন্য পরচুলা বানাতে কাজে লাগবে তাঁদের চুল।
যথাযথ নিয়ম মেনেই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করেছেন সোহম আর রোহন। তার জন্য তাদের ধৈর্য্যের পরীক্ষাও দিতে হয়েছে। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের চুল কম বাড়ে। অথচ ক্যানসার রোগীদের চুল দিতে হলে একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের চুল দিতে হত। ধৈর্য ধরে সেই নির্ধারিত দৈর্ঘ্য পর্যন্ত চুল বাড়ানোর জন্য অপেক্ষা করেছেন যমজ ভাই। শেষ পর্যন্ত সফল হয়ে তাঁরা খুশি। টেলিফোনে আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে আবার চুল বড় করব। দান করব ক্যানসার রোগীদের জন্য।’’
তবে ইচ্ছে থাকলেও সে সুযোগ হবে না বলেই মনে করছেন সোহমরা। দুই ভাই-ই কাজ করেন তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থায়। এত দিন লকডাউনের জন্য ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চালু ছিল। কিন্তু এ বার অফিস যেতে হলে বড় চুল রাখা এবং তা সামলানো সহজ হবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নন দু’জনে।
দীর্ঘদিন ধরে যত্নে বাড়ানো চুল হঠাৎ কেটে ফেলতে কষ্ট হয়নি! এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন সোহমদের দাদা সায়ন্তন রায়। চাকরি সূত্রে তিনি মিজোরামে রয়েছেন। নেটমাধ্যমে পোস্ট করার আগে পর্যন্ত তিনিও জানতেন না যে ভাইরা এমন কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে সায়ন্তন বলেছেন, ‘‘আমি জানতাম না ওরা এই কাজ করছে। বহু দিন ধরেই লম্বা চুল রাখছে ওরা। তবে কেটে ফেলার পর এখন নিজেরাই আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারছে না। ছোট চুলে নিজেদের দেখার অভ্যাসটাই চলে গিয়েছে ওদের। টুপি পরে বের হচ্ছে বাড়ি থেকে!’’
আর পড়শিরা? যাঁরা বড় চুল নিয়ে নানা কথা শুনিয়েছিলেন, তাঁরা কী বলছেন? সোহমরা জানিয়েছেন, ফেসবুক পোস্ট দেখে এখন তাঁরা এখন রীতিমতো লজ্জিত। অনেকেই ডেকে বলেছেন, ‘খুব ভাল কাজ করেছিস’, বা ‘আগে বলিসনি কেন’! সোহম অবশ্য তাঁদের কিছু বলেননি, তবে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমরা যদি আমাদের তথাকথিত চিন্তাধারা পাল্টে প্রগতিশীল কাজে লিপ্ত হই, তবে বোধহয় জীবনের মানেটাই এক অন্য মাত্রা পায়—পৃথিবীটা আরও সুন্দর হয়ে ওঠে।’’ কবিতা উদ্ধৃত করে লিখেছেন, ‘‘সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy