প্রতীকী ছবি।
সবুজ গাছপালার সারি আর জলের ধারের নীরবতায় যেন বাসা বেঁধেছে এক টুকরো সাসেক্স বা বার্কশায়ার। মধ্য যুগের কোনও ইউরোপীয় ক্যাসলকে বাংলার পুকুর ধারে এনে ফেললে ঠিক যেমনটা লাগে আর কী! বসিরহাটে বিদ্যাধরী নদীর ধারে ধান্যকুড়িয়া এবং আরবেলিয়ার গ্রামের এই চেহারাকেই পুজোর মানচিত্রে তুলে ধরতে চলেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। এ বারই প্রথম।
পরিবহণ দফতরের কর্তাদের দাবি, টাকি রোডের উপরে ওই দুই গ্রামে মণ্ডপ, আলোকসজ্জা কিংবা জাঁকজমক— কিছুই প্রায় নেই। নেই থিমের বালাই-ও। কিন্তু ধান্যকুড়িয়ার গায়েন বাড়ির ১৭৫ বছরের পুজোয় লেগে আছে সাবেকিয়ানার গন্ধ। কলকাতা থেকে বাতানূকূল বাসে করে গিয়ে তাই এ বার ধান্যকুড়িয়ার গায়েন বাড়ি, সাহু বাড়ি, বল্লভ বাড়ি ছাড়াও আরবেলিয়ার বসু এবং ভট্টাচার্য পরিবারের পুজোই দেখবেন দর্শকেরা। ব্যবস্থাপনায় পরিবহণ দফতর।
প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে যে, সপ্তমীর দিন সকালে ধর্মতলার এল-২০ বাসস্ট্যান্ড থেকে ৩০টি আসনবিশিষ্ট বাস ছাড়বে সকাল ৮টা নাগাদ। পর্যটকেরা বাসে উঠতে পারবেন রাজারহাট, চিনার পার্ক থেকেও। ভাড়া মাথাপিছু ১,২০০ টাকা। সকাল-বিকেলের খাবার ছাড়াও থাকছে গ্রাম্য পরিবেশে দুপুরে নিরামিষ মধ্যাহ্ণভোজের ব্যবস্থাও। সফর শেষে এসপ্লানেড ফেরা সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ। কলকাতা থেকে আসা-যাওয়া মিলিয়ে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার রাস্তা।
কিন্তু জেলা বা খোদ শহরের বনেদি বাড়ি ছেড়ে গ্রামের পুজো দেখানোর ভাবনা কেন ?
দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘পুজোর সময় কলকাতার ভিড় এড়িয়ে নিপাট গ্রামের পুজো দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন অনেকে। সেই দাবি মেটাতেই নতুন এই উদ্যোগ।’’
ধান্যকুড়িয়া গ্রামে যে তিনটি বাড়ির পুজো দেখানো হবে যাত্রীদের, তার স্থাপত্য চোখে পড়ার মতো। ইংল্যান্ডের বার্কশায়ারের উইন্ডসর ক্যাসলের আদলের পাশাপাশি গ্রিসের করিন্থ স্থাপত্যের মেল বন্ধনে তৈরি হয়েছে ধান্যকুড়িয়ার গায়েন বাড়ি। গথিক আর্চ ছাড়াও লম্বা বারান্দা, খিলান এবং মিনারে পারস্যের গম্বুজের স্থাপত্যরীতি— দর্শনীয় অনেক কিছুই। সময়ের ছোপ লেগে কিছুটা তামাটে হয়ে গেলেও গায়েন বাড়ির এই ইউরোপীয় চেহারা এখনও আকর্ষণীয়। এই সফরে তাই সবচেয়ে নজরকাড়া এই গায়েন বাড়ির পুজোই। সন্ধিপুজোয় ১০৮টি প্রদীপ জ্বালানো থেকে শুরু করে বন্দুক থেকে গুলি ছোঁড়া— তাঁদের পুজোয় পরম্পরা এখনও অটুট। তবে গ্রামের এই বাড়িগুলির কোনওটিই কোনও জমিদার বা সামন্ত রাজাদের বাড়ি নয়। আঠেরো শতকের গোড়ায় তৈরি এই বাড়িগুলির মালিক ছিলেন ব্রিটিশদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলা দেশীয় ব্যবসায়ীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy