সূত্রপাত: পঁচিশে বৈশাখের এই অনুষ্ঠান থেকেই শুরু হয়েছিল অলকানন্দা রায় এবং রূপান্তরকামীদের যুগলবন্দি।
পঁচিশে বৈশাখের সন্ধ্যায় তাঁর প্রিয় রবীন্দ্র-গান শুনে মঞ্চে উঠে পড়েছিলেন অলকানন্দা রায়। নেপথ্যে ‘গহন কুসুম কুঞ্জমাঝে’র সঙ্গে রূপান্তরকামী নারী তিন সহশিল্পী ও পোড়খাওয়া নৃত্যশিল্পী মিলে কিছু দুর্লভ মুহূর্ত তৈরি হল।
সে দিনের সেই সন্ধ্যা খুলে দিয়েছে আগামীর অপার সম্ভাবনার দরজা। এ বার অলকানন্দা তথা প্রিয় মুন্নিদির কাছে নাড়া বেঁধে নাচের আঙ্গিকেই নিজেদের আবিষ্কার করতে মুখিয়ে আছেন এক ঝাঁক ট্রান্সজেন্ডার তথা রূপান্তরকামী মেয়েপুরুষের দল।
এ দেশের বিনোদন-জগৎ, মায় বলিউড বা মডেলিংয়ের র্যাম্পেও অবশ্য ইতিমধ্যে ঠাঁই পেতে শুরু করেছেন রূপান্তরকামীরা। কিন্তু তাঁদের এগোনোর রাস্তা সব সময়েই কঠিন। অলকানন্দাকে সামনে রেখে এই পথ চলাটা কিছুটা সোজা হবে বলে আশায় আছেন মিষ্টু রায়, অনুরাধা সরকার বা শ্রেয়া কর্মকারেরা।
২৭ বছরের তরুণী মিষ্টু ১২-১৩ বছর বয়স থেকে ভরতনাট্যম শিখছেন। কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গের তকমা তাঁকেও বাধ্য করেছিল বিহার-উত্তরপ্রদেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ‘লন্ডা নাচে’র আসরে যোগ দিতে। উত্তর ভারতের সেই সব বিয়ের আসরে নাচের সময়ে নানা ধরনের অত্যাচারের মুখে পড়তে হয় তাঁকে।
সুন্দরবনের অনুরাধা সরকারকেও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছতে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। ভরতনাট্যম, কত্থকে পারদর্শী অনুরাধা এখন ওড়িশি শিখছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তাঁকেও নানা কুরুচিকর মন্তব্য শুনতে হয়েছে।
শ্রেয়া কর্মকার আবার কলকাতার একটি পানশালায় নাচেন। ধ্রুপদী নাচে তালিম থাকলেও সৃষ্টিশীল সুযোগের ক্যানভাসটা তাঁর জন্য বড়ই সীমিত। অলকানন্দা রায়ের কথায়, ‘‘তালিমের এক ধরনের শৃঙ্খলায় আসতে পারলে তৃতীয় লিঙ্গের এই প্রতিভাদের সৃষ্টিশীলতা আরও ধারালো হবে।’’ আপাতত ঠিক হয়েছে, আগামী ২৬ জুন জনা কুড়ি ট্রান্সজেন্ডার শিল্পীকে নিয়েই শুরু হবে অলকানন্দার তালিম-পর্ব।
রাজ্যের ট্রান্সজেন্ডার ওয়েলফেয়ার বোর্ডের সদস্য রঞ্জিতা সিংহ নিজেই একটি সংগঠনের ছায়ায় তৃতীয় লিঙ্গের এই শিল্পীদের নাচের আসরে শামিল করতে উদ্যোগী হয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিহার বা মধ্যপ্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্যে তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের নিয়ে সরকার নানা সাংস্কৃতিক কাজ করছে। এখানেও অনেক কিছু করা যায়।’’ অলকানন্দাও উৎসাহিত তৃতীয় লিঙ্গের শিল্পীদের নিয়ে কাজ করতে। এর আগে সংশোধনাগারের বন্দিদের ভিতরে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে কার্যকর হয়েছিল তাঁর নাচের নিরাময় পদ্ধতি। অলকানন্দার মতে, ‘‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মানসিক ভাবে শক্ত করতেও নাচ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারে। ওঁরা নানা ধরনের অপমানের মুখোমুখি হন। এই পরিস্থিতিতে নাচ এগিয়ে চলার অবলম্বন হতে পারে।’’
ঠিক কী ভাবে, কবে-কবে শেখানোর এই প্রক্রিয়া চলবে তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে অলকানন্দার কথায়, ‘‘আমি সহজে হাল ছাড়ি না।’’ তৃতীয় লিঙ্গের এই শিল্পীদের সেরা সৃষ্টিশীল কাজের যোগ্য করে তুলতে বদ্ধপরিকর তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy