Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

এলইডি-র চমকেও ঢাকা পড়েনি প্রদীপশিখা

কালীপুজোয় বাবার কাছে এলইডি আলোর বায়না জু়ড়েছিল বছর বারোর অর্কপ্রভ। স্কুলের বন্ধু অর্ঘ্য এই তো ক’দিন আগেই তার বাবার সঙ্গে বেরিয়ে সুন্দর এলইডি-র চেন কিনে এনেছে। অর্কর বাবার অবশ্য মাটির প্রদীপই বেশি পছন্দের। তাই ইচ্ছে না থাকলেও বাবার সঙ্গে কুমোরটুলি আসতে হল অর্ককে।

আলোর পসরা। রয়েছে মোমবাতি-প্রদীপ।

আলোর পসরা। রয়েছে মোমবাতি-প্রদীপ।

অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৪২
Share: Save:

কালীপুজোয় বাবার কাছে এলইডি আলোর বায়না জু়ড়েছিল বছর বারোর অর্কপ্রভ। স্কুলের বন্ধু অর্ঘ্য এই তো ক’দিন আগেই তার বাবার সঙ্গে বেরিয়ে সুন্দর এলইডি-র চেন কিনে এনেছে। অর্কর বাবার অবশ্য মাটির প্রদীপই বেশি পছন্দের। তাই ইচ্ছে না থাকলেও বাবার সঙ্গে কুমোরটুলি আসতে হল অর্ককে। পর পর সার দেওয়া দোকানে প্রদীপের বাহার দেখে সে তো অবাক। কোনটা ছেড়ে যে কোনটা নেবে, বেছে নিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যাগ ভরে হরেক রকমের প্রদীপ কিনে বাড়ি ফিরল সে। ফেরার পথে অবশ্য চট করে চাঁদনি মার্কেটে ঢুকে এলইডি আলোর চেন কিনে দিতে ভুললেন না বাবাও।

লক্ষ্মীপুজো মিটতে প্রতি বছরই আতসবাজির সঙ্গে হিড়িক পড়ে দীপাবলীর আলো কেনার। চাঁদনি মার্কেটে পসরা সাজিয়ে বসেন এলইডি আলো বিক্রেতারা। এ বারও নানা টুনি বাল্বের পাশাপাশি মিলছে ৫ থেকে ২৫ মিটারের এলইডি আলোর চেন, ডিস্কো লাইট, ঘুরন্ত ফ্লাশ বাল্ব, ইউএফও, পদ্মফুলের মতো আলো। রয়েছে এলইডি-র প্রদীপ, মোমবাতিও। আর এ বার বাজারে নতুন চিনা উইন্ডচাইমের আদলে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড পটকা লাইট। জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গেই পটকা ফাটার মতো আওয়াজ হবে এই আলোয়। কিন্তু শেখ আরশাদ নামে এক বিক্রেতার কথায়, ‘‘লোকে ভিড় করে দাঁড়াচ্ছে ঠিকই, কিন্তু খদ্দের কম।’’ আর এক বিক্রেতার কথায়, কম বা মাঝারি দামের টুনি বাল্ব যদিও বা বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু বেশি দামের আলো নেওয়ার খদ্দের প্রায় নেই। ক্রেতাদের আবার অভিযোগ, বিভিন্ন আলোর অতিরিক্ত দাম চাওয়া হচ্ছে।

পিছিয়ে নেই কুমোরটুলির প্রদীপ বা জানবাজারের মোমবাতি বিক্রেতারাও। তবে মাটির প্রদীপ ছেড়ে সব বিক্রেতারাই ঝুঁকছেন টেরাকোটার কাজ করা ফ্যান্সি প্রদীপের দিকে। দামও এলইডি-র তুলনায় অনেক কম। কুমোরটুলির প্রদীপ বিক্রেতা সুবীর পাল, কল্পনা পালেরা জানালেন, চায়না আলো বাজারে আসার পরে প্রদীপের ব্যবসা মার খেয়েছিল ঠিকই, কিন্তু গত কয়েক বছরে প্রদীপের নকশায় আমূল পরিবর্তন এনে লাভের পরিমাণ বেড়েছে অনেকটাই। এ বছর এসেছে শঙ্খ প্রদীপ, উট বা হাতির পিঠে নকশা করা প্রদীপ, প্লেটের উপর নকশা করা প্রদীপ হুড়মুড়িয়ে বিকোচ্ছে মুক্তো বসানো বা চিকনের কাজ করা ভাসমান মোমদানিও। জানবাজারে বিকোচ্ছে ছোট-বড় বিভিন্ন আকার, রং এবং নানা রকম নকশা করা কম ধোঁয়ার মোমবাতিও। রয়েছে চিনা ডিজাইনার সুগন্ধী মোমবাতিও। উত্তর ২৪ পরগনার নিমতার এক মোমবাতি কারখানার মালিক গৌতম দাশগুপ্ত বললেন, ‘‘মোমবাতি বিক্রি বছরে এখন খুবই কম। কিন্তু দীপাবলীতে দম ফেলার ফুরসত থাকে না।’’ জানবাজারের প্রদীপ ও মোমবাতি বিক্রেতা অশোক সাহা বললেন, ‘‘এখানে হয়তো চাঁদনির মত ভি়ড় নেই, কিন্তু খুচরো-পাইকারী দু’ধরনের ক্রেতাই রয়েছেন।’’

কিন্তু এলইডি আলো ছেড়ে প্রদীপ বা মোমবাতি কিনবেন কেন ক্রেতারা? জানবাজারের ওই বিক্রেতার কথায়, এলইডি আলোর তুলনায় প্রদীপ বা মোমবাতির দাম খুব কম। অনেক ক্ষেত্রে এলইডি আলোর অল্পেই হঠাৎ খারাপ হয়ে যাওয়া এবং তা সারাতে না পারার অভিযোগও ওঠে। প্রদীপ বা মোমবাতির সেই অসুবিধা নেই। কিন্তু প্রদীপ বা মোমবাতি উল্টে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও তো অনেক ক্ষেত্রে রয়ে যায়। ‘‘ঠিক জায়গায় রাখলে ও খানিক সতর্ক থাকলে সে সম্ভাবনা অনেকটাই কম’’— সরাসরি জবাব বিক্রেতার।

বৃহস্পতিবার, চাঁদনি বাজারে। —নিজস্ব চিত্র।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy