সাজ: লক্ষ্মীপুজোর মণ্ডপসজ্জা।
দুর্গাপুজোয় থিমের লড়াই সবে দেখে উঠেছে কলকাতা। এ বার থিম শহরের লক্ষ্মীপুজোতেও। পাড়ার সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজোয় বাংলা ভাষা নিয়ে থিম করে সার্পেন্টাইন লেনের বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘কেন্দ্রের সরকার হিন্দিকে যখন রাষ্ট্রীয় ভাষা করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন এটাই আমাদের প্রতিবাদ।’’ তবে এই বাংলা ভাষার থিমে বানানের ভুল নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে নানা মহলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল বানানের ছবি পোস্ট করে রসিকতা শুরু করেছেন কেউ কেউ।
মধ্য কলকাতার সার্পেন্টাইন লেনে ১২০ ফুট লম্বা গলি জুড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ‘২১ শে চেতনা’র এই থিম। মণ্ডপের প্রবেশপথ তৈরি করা হয়েছে ভাষা স্মারকের মিনারের আদলে। অঞ্চল জুড়ে বাজছে ভাষা, সংস্কৃতির গান। প্রতিমা পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার পথে মণ্ডপের বাঁ দিকের অংশ জুড়ে তৈরি হয়েছে পূর্ববঙ্গের ভাষা আন্দোলনের ছবি। পাশেই একদল আন্দোলনকারীর হাতের পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘রাস্ট্রভাষা বাংলা চাই।’ তবে সেখানে রাষ্ট্রের জায়গায় ‘রাস্ট্র’ বানানটি থাকা নিয়ে চর্চা চলছে। এর পরেই বাংলা সাহিত্যিকদের ছবি-সহ তৈরি করা হয়েছে ‘হল অব ফেম’। উপরে লেখা হয়েছে, ‘শীর্ষে যাঁরা রেখেছেন বাংলা ভাষার মান...’। সঙ্গে রয়েছে দেশপ্রিয় পার্কের আদলে ভাষা শহিদ স্মৃতি সৌধের প্রতিরূপ। তবে সেখানেও কিছু বাংলা সাহিত্যিকের নামের বানানে ভুল রয়েছে বলে দাবি করেছেন মণ্ডপ দেখতে আসাদের অনেকেই।
ওই প্রতিরূপ পেরিয়ে গলির ঠিক মাঝ বরাবর একখণ্ড গ্রাম বাংলার দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে। সেখানে ন’ফুট চওড়া ১২ ফুট লম্বা কুঁড়েঘরের মধ্যে বসানো হয়েছে প্রায় ছ’ফুট লম্বা সাবেক লক্ষ্মী প্রতিমা। প্রতিমা রাখার কুঁড়েঘরের সামনেই আবার রাখা হয়েছে তুলসী গাছ। গাছের ডাল থেকে ঝুলছে বাংলা বর্ণমালার নানা অক্ষর। মণ্ডপ থেকে বেরোনোর পথে প্রতিমার ডান পাশের দেওয়াল জুড়ে বাঙালির এক সময়ের ব্যবহার্য খড়ম, দোয়াত, পকেট ঘড়ি, ধুতি, কাজল-লতা বসানো পরপর। দেওয়ালের উপরে লেখা, ‘তোমায় ছেড়েছি, তোমায় ভুলিনি।’ পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সুমন পণ্ডিত বলছিলেন, ‘‘বাঙালি হয়তো এখন নিজেকেই ভুলে যাচ্ছে। সম্পূর্ণ ভুলে যাওয়ার আগে, কিছু জিনিস মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমরা।’’
মণ্ডপের ভিতরে ভাষা আন্দোলনের পোস্টারে একাধিক বানান ভুল (চিহ্নিত)। রবিবার, সার্পেন্টাইন লেনে।
যেখানে কথা হচ্ছিল সেখানেই কিছু দূরে বাড়ির দালানের একাংশ ঢেকে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পড়ার ঘরের দৃশ্য। সে জন্য কাঠের আসবাব, বসার চেয়ারের পাশাপাশি বইয়ের তাক জুড়ে রাখা হয়েছে নানা বাংলা বই। সুমনবাবুদের মতে, বাঙালির বাংলা পড়া না বাড়লে সংস্কৃতি বাঁচে না। এটাই বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে। তবে বাংলা ভাষার থিমে এই ধরনের বানান ভুল কেন? সুমনবাবুর কথায়, ‘‘আমরা একটা চেষ্টা করেছি। তার মধ্যেও কিছু ভুল থেকে গিয়েছে। পরের বার সতর্ক হব।’’
ছবি: সুমন বল্লভ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy