(বাঁ দিকে) ইডেনে ক্রিকেটপ্রেমীদের ভিড়। তৃণমূলের জমায়েত (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, ১৬ নভেম্বর নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের সভা হবে। সেই সভা থেকেই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের পরবর্তী রূপরেখা ঠিক করবেন তাঁরা। ঘটনাচক্রে, ওই দিনই নেতাজি ইন্ডোরের ঠিক পাশে ইডেন গার্ডেন্সে ক্রিকেট বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচ। দু’টি ঘটনাতেই যে ভিড় হবে, তা বলা বাহুল্য। গায়ে গায়ে ক্রিকেটের ভিড় এবং তৃণমূলের সভার ভিড় কী করে সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনে।
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কোন কোন দেশ মুখোমুখি হবে, তা রাউন্ড রবিন লিগের পর্যায়ের পরেই স্পষ্ট হবে। গ্রুপ লিগের ফলাফলে সেরা চারটি টিম সেমিফাইনালে খেলবে। পয়েন্ট তালিকায় ১ নম্বরের সঙ্গে খেলা হবে ৪ নম্বরের। সেটি প্রথম সেমিফাইনাল। হবে মুম্বইয়ে। ২ নম্বরের সঙ্গে খেলা হবে ৩ নম্বরের। সেটি দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। সেটি হবে কলকাতায়। ভারত যে ফর্মে এগোচ্ছে, তাতে এটা ধরে নেওয়া হচ্ছে, ভারত পয়েন্ট তালিকায় ১ নম্বরে থাকবে। সেক্ষেত্রে রোহিত শর্মারা ১৫ তারিখ মুম্বইয়ে খেলবেন পয়েন্ট তালিকায় ৪ নম্বরের সঙ্গে। ইডেনে নয়। তবে ফর্মের বিচারে দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে আগামী রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ইডেনে ভারতের ম্যাচে খানিকটা টের পাওয়া যাবে চূড়ান্ত পয়েন্ট তালিকা কী হতে চলেছে।
তবে ভারত থাকুক বা না-থাকুক, বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল দেখতে ইডেন এবং তার আশপাশের এলাকায় ভিড় হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও আগের দু’টি ম্যাচে তেমন লোক হয়নি ইডেনে। পয়েন্টের অঙ্কে যদি ইডেনে ভারতের খেলা পড়ে যায়, তা হলে বিড়ম্বনা আরও বাড়বে লালবাজারের। তৃণমূলের সভায় ডাকা হয়েছে সাংসদ, বিধায়ক, পুরসভার কাউন্সিলর, জেলা পরিষদের সদস্য, ব্লক সভাপতিদের। ফলে সেখানেও গাড়ি ও মানুষের প্রবল ভিড় হবে। দু’টি জায়গা পাশাপাশি হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া পুলিশের পক্ষেও বেশ পরিশ্রমের হবে।
ইডেনে ম্যাচ শুরু দুপুর ২টোয়। তৃণমূলের সমাবেশও দুপুর নাগাদই হবে। সেক্ষেত্রে মধ্য কলকাতার যান চলাচল পরিস্থিতি এবং মানুষের ভিড় ‘উদ্বেগজনক’ পরিস্থিতিতে পৌঁছতে পারে। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইডেনে তারকা সমাবেশ হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে কেন্দ্র বকেয়া টাকা না মেটালে ১ নভেম্বর থেকে রাস্তায় নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ১ নভেম্বর, বুধবার তেমন কোনও বড় কর্মসূচি করেনি বাংলার শাসকদল। কেন, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। তবে বিকালে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের বকেয়া অর্থ নিয়ে আন্দোলন থামিয়ে দেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। বরং তা নতুন উদ্যমে শুরু হবে।
মমতা বুধবার বলেন, ‘‘১ নভেম্বর থেকে আমাদের আন্দোলনে নামার কথা ছিল। কিন্তু ১৬ তারিখ রূপরেখা ঠিক করে আমরা এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামব।’’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘ওই টাকা বাংলার মানুষের প্রাপ্য। কাজ করার পরেও মজুরি আটকে রেখেছে। কেবল সেই খাতেই রাজ্যের পাওনা রয়েছে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। যত দিন না সেই টাকা রাজ্য পাচ্ছে, তত দিন আন্দোলন চলবে।’’
শাসকদলের প্রথম সারির নেতাদের বক্তব্য, এখনও মানুষ উৎসবের মেজাজে রয়েছেন। কালীপুজো, ভাইফোঁটা পর্যন্ত তা চলবে। কিন্তু এই সময়টাকে দল অন্য ভাবে ব্যবহার করতে চাইছে। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বুধবার বলেন, ‘‘সব জায়গায় বিজয় সম্মেলন হবে। সে সব জায়গায় ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কেন্দ্রের বঞ্চনার কথাই মূলত বলা হবে।’’ শাসকদলের নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন,‘অরাজনৈতিক’ বিজয় সম্মেলনের মঞ্চে রাজ্যের পাওনা ও আগামী লড়াইয়ের কথা বলা হবে। যা অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। প্রসঙ্গত, রাজ্যের বেশির ভাগ বিধানসভাই গ্রামীণ এলাকায়। সেখানকার মানুষই ‘ভুক্তভোগী’।
তৃণমূল কেন্দ্রীয় ভাবে তালিকা করে দিয়েছে কোন বিধানসভা এলাকায়, কবে বিজয় সম্মেলন হবে। গোটা রাজ্যকে সাতটি ‘জ়োন’-এ ভাগ করে এই কর্মসূচি নিয়েছে শাসকদল। সেই তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে জেলায় জেলায়। শাসক দলের নেতাদের অনেকের বক্তব্য, উৎসবের ঘোর কাটিয়ে দলকে রাস্তায় নামাতে গেলে একটা গা ঘামানোর কর্মসূচি লাগে। বিজয় সম্মেলনগুলির মঞ্চকে সে ভাবেই ব্যবহার করা হবে।
বকেয়া মেটানোর দাবিতে গত ২ এবং ৩ অক্টোবর অভিষেকের নেতৃত্বে দিল্লিতে অভিযান করেছিল তৃণমূল। সেখানে মন্ত্রীর দেখা না করা, কৃষি ভবন থেকে অভিষেক-সহ তৃণমূল নেতানেত্রীদের গ্রেফতারি হইহই ফেলে দিয়েছিল জাতীয় রাজনীতিতে। তার পর ৫ অক্টোবর ‘রাজভবন চলো’র ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূলের সেনাপতি। কিন্তু রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস কলকাতায় না থাকায় অভিষেক রাজভবনের উত্তর ফটকের সামনে ধর্না শুরু করেন। রাজ্যপাল সেই সময়ে দিল্লি-উত্তরবঙ্গ যাতায়াত করছিলেন। প্রথমে তৃণমূলকে উত্তরবঙ্গে সময় দেন রাজ্যপাল। সেখানে অভিষেক পাঠিয়েছিলেন দলের দুই সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র ও রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে। তাঁরা দেখা করে রাজ্যপালকে জানিয়ে দেন, দলের মূল প্রতিনিধিদল কলকাতার রাজভবনেই দেখা করবেন। শেষ পর্যন্ত ৯ অক্টোবর বিকালে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন অভিষেকরা।
উল্লেখ্য, রাজ্যপাল তৃণমূলের প্রতিনিধিদলকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তিনি সমগ্র বিষয়টি কেন্দ্রের গোচরে আনবেন। অভিষেকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষ করেই দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। রাজভবন থেকে বার হওয়ার পর অভিষেককে নেত্রী মমতা-সহ দলের বর্ষীয়ান নেতারা অনুরোধ করেছিলেন ধর্না তুলে নিতে। সেই মতো ধর্না তুললেও অভিষেক ঘোষণা করেছিলেন, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে যদি কেন্দ্র বকেয়া না দেয় তাহলে ১ নভেম্বর থেকে রাস্তায় নামবে তৃণমূল। তিনি এ-ও বলেছিলেন, নভেম্বরের সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন মমতা। বুধবার মমতা জানালেন, ১৬ নভেম্বরের পর আন্দোলনে রাস্তায় নামবে তৃণমূল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy