Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
চার পুরসভা

পদ নিয়ে কোন্দলে বোর্ড গড়তে জট

পুরভোটের ফল ঘোষণার পরে কেটে গিয়েছে এক মাসেরও বেশি। এখনও পর্যন্ত কামারহাটি, বরাহনগর, দমদম ও দক্ষিণ দমদম পুরসভায় বোর্ডই গঠন করতে পারল না তৃণমূল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর ফলে পুর-পরিষেবা মিলছে না। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের দাবি, গোষ্ঠী-কোন্দলেই বোর্ড গঠন করতে পারছে না শাসকদল।

শান্তনু ঘোষ ও প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৫ ০৩:৩৪
Share: Save:

পুরভোটের ফল ঘোষণার পরে কেটে গিয়েছে এক মাসেরও বেশি। এখনও পর্যন্ত কামারহাটি, বরাহনগর, দমদম ও দক্ষিণ দমদম পুরসভায় বোর্ডই গঠন করতে পারল না তৃণমূল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর ফলে পুর-পরিষেবা মিলছে না। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের দাবি, গোষ্ঠী-কোন্দলেই বোর্ড গঠন করতে পারছে না শাসকদল।

উত্তর ২৪ পরগনা তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের দাবি, তাঁরা রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে। কিন্তু সিপিএম ও বিজেপি নেতৃত্ব শাসকদলের এই কথার পিছনে ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’র প্রভাব রয়েছে বলেই মনে করছেন। সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনার ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক নেপালদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোন তৃণমূল নেতার কোন লোক চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল (সিআইসি) হবেন, তা নিয়েই নিজেদের মধ্যে কোন্দল চলছে। তাই এখনও বোর্ড গঠন করতে পারছে না।’’ তা অস্বীকার করে উত্তর ২৪ পরগনা তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘নিজেদের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। সব বাজে রটনা।’’

মে মাসে বরাহনগর, কামারহাটি, দমদম ও দক্ষিণ দমদম পুরসভায় চেয়ারম্যান পদে শপথ হয়ে গিয়েছে। ওই পদে নাম ঘোষণার পরে এই চার পুরসভার মধ্যে একমাত্র বরাহনগরে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করেন বিদায়ী ভাইস চেয়ারম্যান রামকৃষ্ণ পাল। দল তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এখনও রামকৃষ্ণবাবু রাজ্যস্তর থেকে সেই চিঠি পাননি বলেই দলীয় সূত্রের খবর। স্থানীয় তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই পুরসভায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে দাবিদার তিন জন। রামকৃষ্ণবাবু ছাড়াও সাংসদ সৌগত রায় ও বিধায়ক তাপস রায়ের পছন্দের কোন কাউন্সিলর ভাইস চেয়ারম্যান হবেন, তা নিয়ে টানাপড়েন চলছে।

বাকি ৫টি সিআইসি পদের জন্য ৮-১০ জনের নাম জমা পড়েছে জেলা নেতৃত্বের কাছে। সেখানে বিধায়ক, সাংসদ না জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠেরা বেশি আসন পাবেন, তা নিয়েও চলছে জল্পনা। কারণ, বরাহনগরের চেয়ারম্যান অপর্ণা মৌলিক বিধায়ক তাপস রায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের খবর, বরাহনগরে সিআইসি পদে কিছু নতুন মুখ আনা হবে।

কামারহাটিতে বোর্ড গঠনে অবশ্য জেলবন্দি স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী মদন মিত্রের মতের উপরেই জোর দিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মদনবাবু ঘনিষ্ঠ গোপাল সাহা এ বারও কামারহাটির চেয়ারম্যান। কিন্তু গোল বেধেছে ভাইস-চেয়ারম্যান নিয়ে। এতদিন ওই পদে ছিলেন সাংসদ সৌগত রায়ের ঘনিষ্ঠ স্বপন মণ্ডল। এ বার তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলেই প্রাথমিক ভাবে খবর। মদন-ঘনিষ্ঠ যুব সংগঠনের কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। বাকি পাঁচটি পদ মদন ঘনিষ্ঠদের হাতে ছাড়তে রাজি নয় সাংসদ গোষ্ঠী। কিন্তু জেলে থেকেও কাউন্সিলরদের টিকিট দেওয়ায় মদনবাবু যে ভূমিকা নেন, সিআইসি নির্বাচনেও তাঁর মতই শেষ কথা বলবে কি না, তা নিয়ে চলছে টানাপড়েন। মদনবাবুর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, পাঁচ সিআইসি-র মধ্যে এক মহিলা থাকবেন। তবে পুরনো এক-দু’জন ছাড়া বাকি সবই থাকবে নতুন মুখ।

দক্ষিণ দমদম পুর-এলাকায় ঘুরলে শোনা যাচ্ছে ‘বসু’ পরিবারের লড়াইয়ের কথা। ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী দমদম, বিধাননগর ও রাজারহাট-গোপালপুর বিধানসভা কেন্দ্রের কিছুটা এলাকা নিয়ে এই পুরসভা। ফলে চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান পারিষদ, প্রতি ক্ষেত্রেই তিন কেন্দ্রের তিন বিধায়ক— মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, সুজিত বসু ও মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর মধ্যে ঠান্ডা লড়াইটাই স্বাভাবিক। স্থানীয় রাজনৈতিক মহল সূত্রের খবর, ওই পুরসভায় পূর্ণেন্দু-ঘনিষ্ঠই চেয়ারম্যান হয়েছেন। সুজিতবাবু নিজে হয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান। এ বার পাঁচ সিআইসি-র জন্য ব্রাত্যবাবু তাঁর এলাকার বাসিন্দা তিন কাউন্সিলরের নাম প্রস্তাব করেছেন। সুজিতবাবুও বিধানগরের বাসিন্দা এক কাউন্সিলরের নাম দিয়েছেন। গোল বেধেছে শেষের একটি আসন নিয়ে। কারণ, ওই পুরসভার বিদায়ী দুই চেয়ারম্যান পারিষদ মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য ও প্রবীর পাল (কেটি) দু’জনেই দাবিদার। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, পূর্ণেন্দুবাবু পরোক্ষভাবে মৃগাঙ্কবাবুকে সর্মথন করছেন। যদিও তিনি বিধাননগর বিধানসভা এলাকার বাসিন্দা। পূর্ণেন্দুবাবুর ঘনিষ্ঠকে চেয়ারম্যান করতে মৃগাঙ্কবাবুদেরও ভূমিকা ছিল। তবে এই প্রস্তাব মানতে নারাজ অন্য দুই শিবির। তাই প্রবীর পালের চেয়ারম্যান পারিষদ হওয়ার ভবিষ্যৎ অনেকটাই ফিকে।

অনেকটা একই অবস্থা দমদমেও। এখানেও মন্ত্রী তথা বিধায়ক ব্রাত্য বসু না জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, কার ঘনিষ্ঠ কে আসন পাবেন, তা নিয়ে জট তৈরি হয়েছে।

যে সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়কদের ঘিরে এই টালমাটাল পরিস্থিতি, তাঁরা মুখ খুলতে চাননি। তবে জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘দল যখন মনে করবে, তখনই চেয়ারম্যান পারিষদের নাম ঘোষণা হবে।’’ কিন্তু জেলা নেতৃত্বই তো এই নাম ঠিক করতেন। আচমকা রাজ্য নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ কেন? মন্ত্রীর জবাব, ‘‘দলের সিম্বল তো রাজ্যই দিয়েছে। ওঁরা যখন বলবেন, তখনই নাম ঘোষণা হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE