গঙ্গায় সাঁতার মুকেশ গুপ্তের। রবিবার, বেলুড়ে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
গঙ্গা সাঁতরে এ বার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ।
গত সপ্তাহেই কলকাতার মিলেনিয়াম পার্ক থেকে লঞ্চে চেপে বেলুড় মঠে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে জাতীয় যুব দিবসের মঞ্চে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে মোদীর ভাষণ নিয়ে ইতিমধ্যেই সরগরম রাজ্যরাজনীতি। এ বার সেই জলপথকেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় বেছে নিল শাসক দল।
রবিবার সকালে বেলুড় জেটি থেকে মিলেনিয়াম পার্কের উল্টো দিকে হাওড়া রামকৃষ্ণপুর ঘাট পর্যন্ত সিএএ, এনপিআর, এনআরসি-র বিরোধিতায় সাঁতার কাটলেন তৃণমূল সমর্থক মুকেশ গুপ্ত। অনুষ্ঠানের আয়োজক হাওড়া পুরসভার ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর কৈলাস মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘এমনিতেই গঙ্গা নির্মল নয়। মোদী জলপথে এসে এনআরসি-র প্রচার করে গঙ্গাকে আরও কলুষিত করে গিয়েছেন। তাই ওই পথেই প্রতিবাদ জানিয়ে কিছুটা শুদ্ধিকরণের চেষ্টা করলাম।’’
এ দিন সকাল থেকেই বেলুড় মঠ সংলগ্ন জেটিঘাট পুরো তেরঙা পতাকা, নীল-সাদা বেলুন ও দলীয় পতাকায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ সেই জেটি থেকে ‘নো-এনআরসি, নো সিএএ’ লেখা কস্টিউম পরে গঙ্গায় ঝাঁপান হাওড়ার তেলকল ঘাটের বাসিন্দা বছর তেইশের মুকেশ। তাঁর কথায়, ‘‘মোদী যে পথে এসে
এনআরসি-র পক্ষে বলেছেন, আমি সেই পথই উল্টো দিক থেকে সাঁতার কেটে অতিক্রম করে ওঁর বক্তব্য ফিরিয়ে দেব।’’
এ দিন সকালে বেলুড় জেটিতে এসে সাঁতারের সূচনা করেন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়। সঙ্গে ছিলেন, দুই প্রাক্তন মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্র, ও ভাস্কর ভট্টাচার্য এবং সত্যব্রত সামন্ত, ভাস্করগোপাল চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্যেরা। অরূপবাবু জানান, বেশ কিছু দিন আগে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের সঙ্গে যুক্ত মুকেশ তাঁর সঙ্গে দেখা করে সংশোধিত নাগরিকত্বের প্রতিবাদে নিজের অংশ নেওয়ার আবেদন জানান। এর পরে বেশ কয়েক মাস আগে বাংলা চ্যানেল পার করে আসা ওই যুবককে নিয়ে অভিনব প্রতিবাদের পরিকল্পনা করেন শাসকদলের নেতারা।
কৈলাস জানান, মোদী জলপথে বেলুড়ে আসার পরেই তাঁরা পরিকল্পনা করেন সেই পথেই মুকেশকে দিয়ে সংশোধিত নাগরিকত্বের বিরোধিতায় সাঁতার কাটাবেন। প্রস্তাবে রাজি হন মুকেশও। এ দিন বেলুড় থেকে রামকৃষ্ণপুর ঘাট পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার জলপথের বিভিন্ন ঘাটে জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা নিয়ে ভিড় জমিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মীরা, তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন সাধারণ মানুষও। পাড় থেকেই তাঁরা স্লোগান তোলেন, ‘‘গঙ্গা আমার মা। পদ্মা আমার মা। ও আমার দুই চোখে দুই জলের ধারা মেঘনা-যমুনা। এ দেশেতে মোরা এনআরসি হতে দেব না।’’ ভাস্করগোপালবাবু বলেন, ‘‘এ দেশ আমাদের মা। মায়ের তো কোনও ভাগ হয় না। কিন্তু মোদী জাত-ধর্মের ভিত্তিতে সেটাই চাইছেন। তাই উনি যে পথে এসে এটা প্রচার করেছেন। সেটাই ফিরিয়ে দিলাম।’’
মুকেশকে উৎসাহ দিতে লঞ্চ নিয়ে তাঁর পাশে পাশে গিয়েছেন মন্ত্রীও অরূপ রায়ও। তিনি জানান, সংশোধিত আইনের বিরোধিতায় দেশ জুড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে আওয়াজ তুলেছেন তাতে সামিল হয়েছেন মুকেশ। তিনি বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী মিলেনিয়াম পার্ক থেকে হাওড়া সেতুতে আলোর উদ্বোধন করে বিলাসবহুল লঞ্চে চেপে বেলুড় মঠে গিয়েছেন তাতে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু উনি ধর্ম নিরপেক্ষ ধর্মীয় স্থানে দাঁড়িয়ে এনআরসি-র স্বপক্ষে কথা বলে রাজনীতি করেছেন। তাই আমরা এই অভিনব প্রতিবাদ করেছি। যে রামকৃষ্ণপুর ঘাটে মুকেশ সাঁতার শেষ করেছে সেখানে স্বামীজীর পায়ের ধুলো পড়েছিল।’’
এ ছাড়াও নিরাপত্তা ও জরুরি অবস্থার মোকাবিলায় গঙ্গায় ছিল বিপর্যয় মোকাবিলা দল, পুলিশের লঞ্চ, স্পিড বোট। রামকৃষ্ণপুর ঘাটে মুকেশ পৌঁছনোর পরে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে তাঁর বাবা রামকৃষ্ণঠাকুর গুপ্ত বলেন, ‘‘আজ গর্ব হচ্ছে।
পদক না পাক, গঙ্গা সাঁতরে আমার ছেলে মোদীর দেশ বিভাজনের বিরোধিতা জানাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy