(বাঁ দিকে) সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সুপ্তি পাণ্ডে (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
উত্তর কলকাতা লোকসভা আসনে তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জিতলেও মানিকতলা বিধানসভায় তিনি এগিয়ে ছিলেন মাত্র সাড়ে তিন হাজার ভোটে। সেই মানিকতলাতেই উপনির্বাচন আগামী ১০ জুলাই। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন প্রয়াত বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সাধন সুপ্তি পাণ্ডের স্ত্রী সুপ্তি সুপ্তি পাণ্ডে। সাড়ে তিন হাজারের ব্যবধান যে ‘নিরাপদ’ নয়, তা তৃণমূলও মানছে। তাই সুপ্তিকে ‘সম্মানজনক’ ব্যবধানে জিতিয়ে তৃণমূল লোকসভার ক্ষতে প্রলেপ দিতে চাইছে। শাসকদল সূত্রের খবর, মূলত দু’টি ওয়ার্ড এবং আবাসনগুলিতে বিশেষ নজর দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই মতো শেষ ক’দিনের কর্মসূচিও চলছে।
মানিকতলা বিধানসভার মধ্যে দু’টি ওয়ার্ডে লোকসভা ভোটের নিরিখে তৃণমূল পিছিয়ে। যে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে সুপ্তির বাড়ি, সেখানেই সুদীপ পিছিয়ে ছিলেন প্রায় ৫০০ ভোটে। আর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল পিছিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার ভোটে। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পরেশ পাল। তিনি বেলেঘাটার বিধায়কও বটে। পরেশের সঙ্গে প্রয়াত সাধনের সম্পর্ক কতটা ‘মধুর’ ছিল, তা মোটামুটি সর্বজনবিদিত। যদিও মানিকতলা উপনির্বাচনের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে চার জনের কমিটি করে দিয়েছেন, তাতে রয়েছেন পরেশও। তবে পরেশ কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ।
তৃণমূল চাইছে ওই দু’টি ওয়ার্ড থেকে ‘সম্মানজনক’ ব্যবধানে সুপ্তিকে ‘লিড’ দিতে। মানিকতলা বিধানসভা এলাকার আবাসনগুলিতে লোকসভায় তৃণমূলের ফল ভাল হয়নি। সে দিকেও নজর দিতে চাইছে শাসকদল। এমন ওয়ার্ডও রয়েছে, যেখানে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও নির্দিষ্ট কিছু মহল্লায় খারাপ ফল হয়েছে। সে সব হিসেব কষেই আগামী তিন দিনের প্রচার সারতে চাইছে তৃণমূল। সুপ্তিকেও সেই মতো প্রচার করানো হচ্ছে। আবাসনের আবাসিকদের সঙ্গে বৈঠক করা, ‘পতাকাহীন’ হয়ে তাঁদের কথা শোনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে শাসকদল।
লোকসভায় জয়ের পরে উল্টোডাঙার একটি আবাসনে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছিল তৃণমূলের লোকজন। সেই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষুব্ধ হন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলনেত্রীর নির্দেশে ওই আবাসনে গিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে এসেছিলেন তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ এবং স্থানীয় কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুন্ডু। তৃণমূল সূত্রের খবর, সুপ্তিকে অন্তত ২০ হাজার ভোটে জেতানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চলছে দল। যদিও মানিকতলার ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কুণাল কোনও সংখ্যা বলতে চাননি। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘লোকসভায় মানিকতলায় যে ব্যবধান ছিল, তা অনেকটাই বাড়বে।’’
সাধারণত উপনির্বাচনে শাসকদলই জেতে। তবে এর ব্যতিক্রমও হয়। গত বছর সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূলের হেরে যাওয়া এবং বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসের জয় রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলেছিল। বাইরন অবশ্য জয়ের তিন মাসের মধ্যেই ‘উন্নয়নের কাজে শামিল হতে চেয়ে’ তৃণমূলে যোগ দিয়ে দেন। মানিকতলায় বিজেপির প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন প্রাক্তন ফুটবলার তথা এআইএফএফ সভাপতি কল্যাণ চৌবে। ২০২১ সালে সাধনের কাছে কল্যাণই পরাস্ত হয়েছিলেন। তার পরে তাঁর দায়ের করা মামলার জন্যই আটকে ছিল মানিকতলার উপনির্বাচন। সিপিএম প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন রাজীব মজুমদার। তিনিও এর আগে মানিকতলায় দাঁড়িয়ে হেরেছিলেন। সে দিক থেকে সুপ্তির লড়াই তুলনামূলক ‘সহজ’ বলেই মনে করছেন অনেকে। আবার তৃণমূলের অনেকে ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, বিভিন্ন এলাকায় দলের মধ্যে ‘পছন্দ-অপছন্দ’ রয়েছে। ভোট করানোর বিষয়ে কে কেমন ভূমিকা নিচ্ছেন, তা ভোটের দিনই স্পষ্ট হবে। তবে তৃণমূল এ-ও চাইছে, শহর কলকাতার এই উপনির্বাচন যাতে নিরুপদ্রবে হয়। না হলে দলের সম্পর্কে ‘অন্য বার্তা’ যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy