অসুরক্ষিত: কেষ্টপুরে খালি হাতেই (চিহ্নিত) নর্দমা থেকে পাঁক তুলছেন এক সাফাইকর্মী।
সুরক্ষার কোনও রকম সরঞ্জাম ছাড়াই কার্যত জীবন বিপন্ন করে নর্দমা থেকে পাঁক তুলছেন সাফাইকর্মীরা। আর ওয়ার্ডে পুর পরিষেবা যে জোরকদমে চলছে, তা প্রমাণ করতে ফেসবুকে সেই দৃশ্যের ভিডিয়ো তুলে সম্প্রচার করছেন কাউন্সিলর-পুত্র! বিধাননগর পুরসভার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ওই ভিডিয়ো দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে সাফাই কর্মচারীদের জন্য গঠিত জাতীয় কমিশন।
কেষ্টপুরের বারোয়ারিতলার একটি নর্দমা দীর্ঘদিন সাফাই না হওয়ায় জল জমে বাসিন্দাদের খুব অসুবিধা হচ্ছিল। ডেঙ্গির মরসুমে সেই নর্দমা সাফাই করান ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শীলা মণ্ডলের পুত্র সুশোভন (মাইকেল) মণ্ডল। দলীয় সূত্রের খবর, খাতায়কলমে মা পুর প্রতিনিধি হলেও ওয়ার্ডের কাজ দেখভাল করেন ছেলে সুশোভনই। গত শুক্রবার সেই কাজ করানোর সময়ে ফেসবুকে সরাসরি সেই দৃশ্যের সম্প্রচার করেছেন তিনি। তাতে দেখা যাচ্ছে, খালি হাতেই নর্দমা থেকে বালতির পর বালতি পাঁক তুলছেন পুরসভার সাফাইকর্মীরা। মাথায় হেলমেট, মুখে মাস্ক, হাতে দস্তানা, পায়ে গামবুট, শরীরে বিশেষ জ্যাকেট— কিছুই নেই!
সম্প্রতি একই ছবি ধরা পড়েছিল কলকাতা পুর এলাকায়। ট্যাংরার ডেরায় বসে বাপি ভুঁইয়া, রাজেশ হাজরা, বাবু মাজিরা জানিয়েছিলেন, টাকা কামাতে নোংরা মাখা ছাড়া তাঁদের রাস্তা নেই।
সুশোভনের ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, একটানা কাজ করে হাঁফিয়ে উঠেছেন পুরকর্মী। কাউন্সিলর-পুত্র তাঁকে জিজ্ঞাসা করছেন, নেশার সামগ্রী লাগবে কি না! জবাবে পুরকর্মী বলেন, ‘‘না না, ঠিক আছে। গন্ধ তো, তাই।’’ এর পরে দ্রুত ওই পুরকর্মীর জায়গা নেন আর এক পুরকর্মী। সংসদের আইন, শীর্ষ আদালতের কড়া পর্যবেক্ষণ থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছর সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাবে সাফাইকর্মীদের মৃত্যুর তালিকা কেন বাড়ছে, তা সহজেই বোঝা যায়।
ফেসবুক লাইভে দেখা যায়, সাফাইকর্মীদের সুশোভন বলছেন, ‘‘ঝপঝপ মার। জলটা নামিয়ে দিলে বাঁচি।’’ স্থানীয় এক বাসিন্দা ওয়ার্ডের অন্য জায়গায় পরিষেবার ঘাটতির কথা জানালে কাউন্সিলর-পুত্রের ঝটিতি উত্তর, ‘‘চার বছরের কর্পোরেশন। একটু সময় দাও। এত ঝড়ঝাপ্টা (ইঙ্গিত বিধাননগরের মেয়র বদলের দিকে) গেল, দেখলে তো! তুমি তো আমাদেরই লোক।’’
২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, আপৎকালীন পরিস্থিতি ছাড়া সাফাইকর্মীকে নিকাশি নালায় নামিয়ে পাঁক পরিষ্কার করতে বাধ্য করাটা অপরাধ। আপৎকালীন পরিস্থিতিতেও সুরক্ষা-সরঞ্জাম নিশ্চিত করতে হবে। ছ’বছর আগে সংসদে পাশ হয়েছে ‘প্রহিবিশন অব এমপ্লয়মেন্ট অ্যাজ ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড দেয়ার রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাক্ট ২০১৩’। সাফাই কর্মচারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বেজওয়াড়া উইলসন বলেন, ‘‘ফেসবুকে লাইভ না করে সাফাইকর্মীদের অধিকার সুনিশ্চিত করুন। আইন মেনে এ সবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই ছবিটা বদলাবে।’’
এ ধরনের আইন যে রয়েছে, তা-ই তো জানা নেই কাউন্সিলর-পুত্রের। সাফাই নিয়ে তাঁর সাফাই, ‘‘ওই এলাকার নর্দমার অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তিন ফুটের গলিতে যন্ত্র ঢোকানো যায় না। তাই ডেঙ্গির মরসুমে বাসিন্দাদের কথা ভেবে নর্দমায় লোক নামিয়ে কাজ করাচ্ছিলাম।’’ কিন্তু সুরক্ষা-সরঞ্জাম কেন নেই? সুশোভনের জবাব, ‘‘গামবুট পায়ের মাপে ছোট হওয়ায় সাফাইকর্মীরা পরেননি। মাস্ক আছে, তবে দস্তানা নেই। এ ভাবে কাজ করলে কী ক্ষতি হতে পারে, তা জানা ছিল না। আগামী দিনে সচেতন থাকব।’’
তাঁর ভিডিয়ো এ দিনই জাতীয় কমিশনের সচিব নারায়ণ দাসের দফতরে পৌঁছেছে। সচিব বলেন, ‘‘ঘটনাটি নিন্দনীয়। ওই পুরসভার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy