Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

নতুন বছরে কি সময় ফিরবে, নিশ্চিত নন টাইম কিপারেরা

শুক্রবার নতুন বছরের তৃতীয় দিন মিল্ক কলোনির ৩ডি, ৩ডি/১ রুটের বাস গুমটিতে যখন কথা হচ্ছে, তত ক্ষণে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা টালা সেতুতে।

সংশয়ে: বেলগাছিয়ায় ৩ডি রুটের বাস গুমটিতে কাজে ব্যস্ত এক টাইম কিপার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সংশয়ে: বেলগাছিয়ায় ৩ডি রুটের বাস গুমটিতে কাজে ব্যস্ত এক টাইম কিপার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৯:৪৫
Share: Save:

রাস্তার ধারের গুমটিতে ইট দিয়ে উঁচু করে আড়াআড়ি ভাবে পাতা যাত্রীদের বসার সিট। সামনে সিমেন্টে বাঁধানো টেবিলে খাতাপত্রের সঙ্গে রাখা একটি টেবিল ঘড়ি। জ্যাকেটের ডান দিকের স্লিভ যতটা সম্ভব টেনে তা দিয়েই ঘড়ির কাচ মুছতে থাকা ভদ্রলোক বললেন, ‘‘আমরাই টাইম কিপার। লোকে স্টার্টারও বলে। আমরাই সময় দেখে বাস ছেড়ে রুট চালাই। কিন্তু নতুন বছরেও আমাদের সময় ফিরবে বলে মনে হয় না!’’ এর পরে তাঁর গলায় আক্ষেপ, ‘‘মাঝেরহাটের পরে এখন টালা সেতুও ভাঙা পড়বে শুনছি। দু’টো সেতুর জন্যই ভুগেছে এমন রুট শুধু আমাদেরটাই।’’

শুক্রবার নতুন বছরের তৃতীয় দিন মিল্ক কলোনির ৩ডি, ৩ডি/১ রুটের বাস গুমটিতে যখন কথা হচ্ছে, তত ক্ষণে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা টালা সেতুতে। কারণ, আজ, শনিবার থেকেই ওই সেতু ভাঙার কাজ শুরু হবে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর ছিল। তবে বুধবার রাতে পুলিশ জানিয়ে দেয়, সেতু ভাঙার কোনও পাকাপাকি সিদ্ধান্তের কথা প্রশাসনের তরফে তাদের কাছে এসে পৌঁছয়নি। বিনয় থান্ডার নামে ৩ডি রুটের এক বাস কন্ডাক্টর অবশ্য বললেন, ‘‘আজ নয় কাল, সেতু তো ভাঙতেই হবে। তখন চলব কী করে? এখনই আমাদের চার জন টাইম কিপারকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে। ছোট করে আনা হয়েছে রুটও।’’

বেলগাছিয়া, মিল্ক কলোনি থেকে ৩বি, ৩ডি, ৩ডি/১— এই তিনটি রুটের বাস চলত। ৩বি রুটের বাসটি যায় নিউ আলিপুর পর্যন্ত। তবে ৩ডি এবং ৩ডি/১, দু’টি রুটই ছিল সখেরবাজার পর্যন্ত। ৩ডি খিদিরপুর হয়ে আর ৩ডি/১ যেত আলিপুর চিড়িয়াখানা ঘুরে। তবে মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে এখন দু’টি রুটেই বাস মোমিনপুর হয়ে ফিরে আসে। এর পরেই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় টালা সেতু। তিনটি রুটেরই বাস এত দিন বেলগাছিয়া, বি টি রোড দিয়ে শ্যামবাজারের দিকে যেত টালা সেতু পার করে। ৩বি রুটের এক কন্ডাক্টর বললেন, ‘‘এখন ওই রাস্তার সব যাত্রী হারিয়ে ফেলেছি। সব বাসই আর জি করের সামনে দিয়ে ঘুরে যাচ্ছে। ফলে যে বাস আগে পাচ্ছেন, তাতেই চড়ছেন যাত্রীরা। এতেই বেলগাছিয়া এবং সখেরবাজারের গুমটিগুলি তুলে দিয়েছেন মালিকেরা।’’ রুট কমিটির সচিব রাজীব দত্ত
বললেন, ‘‘গুমটিই না থাকলে টাইম কিপার রেখে লাভ কী?’’

গত নভেম্বর থেকেই তাই কর্মহীন প্রমোদ রায়, মোহন সিংহ, জীবন মুখোপাধ্যায়, ব্রজগোপাল দালালেরা নতুন বছরেও কাজের ব্যবস্থা করে উঠতে পারেননি। প্রমোদবাবু বললেন, ‘‘আমাদের কাজটাকে কেউ পেশা বলে মনেই করেন না। কাজ চলে গেলে পাওয়াও যায় না। স্ট্যান্ডে কখন বাস এল, কখন বেরোলো, ঠিকঠাক সময়ে জানাল কি না, সে সব নিয়ে যে জীবন কাটালাম, সেটা হয়তো আর ফিরবে না।’’ একই আশঙ্কা কোনও মতে কাজে টিকে যাওয়া টাইম কিপার বিজু দত্তেরও। স্ট্যান্ডে বাস ঢুকতেই তাড়াহুড়ো করে খাতায় সময় লিখে নিয়ে তিনি বললেন, ‘‘আমাদের বেতন আট হাজার টাকা। তাতেই স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সংসার। এর পরে কি আমাদেরও...!’’

সময় দেখে সময় কাটবে তো? নতুন বছরেও নিশ্চিত উত্তর পাননি বাসের টাইম কিপারেরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Tallah Bridge Time Keepers Buses
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy